“আমি তো ভালো করেই পড়ি তবু মনে থাকে না কেন?” তোমার এই প্রশ্নের সবচেয়ে কমন যে উত্তর টা তুমি মা-বাবা কিংবা শিক্ষকদের কাছ থেকে পাবে তা হলো- “মন দিয়ে পড়”। এই যে “মন দিয়ে পড়”- এটা বলতে তুমি কি বুঝবে? শুধু মন দিয়ে পড়লেই কি থাকবে মনে?  নাকি মনে রাখার জন্য আছে কোন আলাদা ট্রিকস কিংবা কোন কৌশল?  চল দেখা যাক বিজ্ঞানের কাছে প্রশ্ন করলে বিজ্ঞান আমাদের কি উত্তর দেয়।

মনে রাখার ব্যাপার টা নির্দিষ্ট করে বললে বলতে হয় এটা একটা প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে আমরা আমাদের চারপাশের বিভিন্ন বস্তু বা ঘটনাকে আমাদের স্মৃতিতে ধারণ করি এবং প্রয়োজনে তা আবার মনের সচেতন অংশে ফিরিয়ে আনি।  সবগুলো পয়েন্ট ভালোভাবে বুঝতে হলে আগে কিছু বেসিক কনসেপ্ট তোমাদের দরকার হবে স্মৃতি সম্পর্কে।  সেগুলো আগে আগেই বলা রাখা ভালো।
আমরা যেটাকে স্মৃতি বলি সেটার প্রধানত দুইটা অংশ আছে-
ক) স্বল্পস্থায়ী স্মৃতি

খ) দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতি

দুটো ব্যাপারকে একটা উদাহরণ এর মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যাক।  নিচে দশটি এলোমেলো মেয়েদের নাম দেওয়া হলো। তোমার কাজ হচ্ছে শুধুমাত্র একবার দেখে যতগুলো পারা যায় মনে রাখা-

১)মীম

২)তন্বী

৩)নিশাত

৪)শিলা

৫)শুভ্রা

৬)নীলাঞ্জনা

৭)ছালছাবিল

৮)শিশির

৯)মিতু

১০)দোলা

এখন মনে করার চেস্টা করে দেখ।  কয়টা নাম মনে করতে পারলে তুমি?৫-৬ টা?  হ্যা বেশিরভাগ মানুষ ৫-৬ টা নাম ই মনে করতে পারবে। কিন্তু সেটা খুবই স্বল্প সময়ের জন্য। হয়ত এই পোস্ট যতক্ষণ পড়বে ততক্ষণ পর্যন্ত। কিন্তু যদি তোমাকে কালকে আবার নামগুলো বলতে বলা হয় তখন? দেখবে যে খুব বেশি হলে ২-৩ টা নাম মনে করতে পারতেছ তুমি।  এই যে স্বল্প সময়ের জন্য ৫-৬ টা নাম মনে করতে পারলে এটাই স্বল্পস্থায়ী স্মৃতি। আর কালকে যে নাম গুলো  বলতে পারবে সেগুলো তুমি তোমার দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতি থেকে রিকল করে বলবে। অর্থাৎ ঐ দুইটা নাম সাফল্যের সাথে স্বল্পস্থায়ী থেকে দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিতে পরিণত হয়েছে।
তাহলে কেন তুমি ২-৩ টা নাম ই কেবল দীর্ঘ সময় ধরে মনে রাখতে পারো? ঐ দুইটা নামের বিশেষত্ব কি?  আর বাকিরা কি দোষ করলো তাহলে?  আমরা সেটাই খুজে বের করার চেস্টা করবো বাকি আর্টিকেল টা জুড়ে। আর একইসাথে দেখব কিভাবে দশটা নামই ইফেক্টিভলি মনে রাখার নানা টেকনিকস।

এবার আসি আসল অংশে, তুমি কিভাবে তোমার সেই পুরোনো স্মৃতিশক্তিকেই নতুনরূপে ব্যাবহার করে যা মনে রাখা দরকার তা আরো ইফেক্টিভলি মনে রাখবে?চল সেটাই দেখা নেওয়া যাক।  আমরা মূলত এখানে পড়াশোনা বিষয়ক তথ্য মনে রাখার কথাই বলব, যদিও একই কনসেপ্ট কেউ চাইলে প্রাত্যাহিক জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করতে পারে।

১) চেস্টাঃ  আমাদের বেশিরভাগের জন্যে এই কথাটা সত্যি যে আমরা কোন তথ্য মনে রাখতে পারি না কারণ আমরা তা আসলে মনে রাখতে চাই ই না।  আমাদের উদাহরণে তোমাকে যদি আগে থেকে ই বলা হয় রেকর্ডে শোনানো দশটা নামের মধ্যে সাতটা বলতে পারলে তোমাকে পুরস্কৃত করা হবে; তাহলে বেশিরভাগ সম্ভবনা থাকবে যে তুমি সাতটা নাম ই বলতে পারবে।  সত্যি কথা হচ্ছে আমরা যে বিষয় নিয়েই পড়ি না কেন, আমাদের কমবেশি মুখস্ত করতে হয় ই।  বুঝে মুখস্ত করার মাঝে ডিসক্রেডিট নেই।কেউ একজন পদার্থবিজ্ঞানে যতই ভালো হোক না কেন, পরীক্ষার হলে বসে সূত্র মনে না থাকলে সে পরীক্ষায় ভালো করতে পারবে না। তাই আজকে থেকেই কোন কিছু মনে রাখার জন্য সচেতন ভাবে চেস্টা কর।দেখবে তোমার ভুলে যাওয়ার হার দিন দিন কমতেছে।

a
২)ব্রেইন কে বোকা বানানোঃ আমাদের ব্রেইন সবসময় একটা ছাকনী এর মত কাজ করে- প্রতিদিান ফেইস করা হাজারো বস্তু থেকে বেছে বেছে তোমার জন্য যেগুলো গুরুত্বপূর্ণ ব্রেইন শুধু সেগুলো ই মনে রাখে।  যেমন গত পরশু দুপুরে কি খেয়ছো তা তোমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয় বলেই ব্রেইন তা তোমার স্মৃতি থেকে মুছে দেয়(বিশ্বাস না হলে চেক করে দেখই না মনে করতে পার কিনা!)।  কিন্তু গত পরশুদিন দুপুরে কি খেয়েছো তা যদি তোমার জন্য ইম্পর্টেন্ট হয় (যেমন বাসায় তোমার জন্মদিন উপলক্ষে অনেক কিছু রান্না হয়েছিল বলে) তবে তা অবশ্যই মনে থাকবে।  তাই তোমার জন্য যা মনে রাখা দরকার (তোমার পাঠ্যবই এর তথ্য) তা তোমার নিজেকে নিজে বোঝাতে হবে যে এটা মনে রাখা তোমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ- দেখবে দিনশেষে তোমার মনে আছে বিষয়টা

cute-brain-cartoon-character-pointing-illustration-31362138

আমাদের লিস্টের দিকে নজর দেওয়া যাক। লিস্ট থেকে তুমি যে ৫-৬ টা নাম তুমি স্বল্প সময়ের জন্য মনে রাখবে তা কোন না কোন দিক থেকে তোমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ (অনেক কারণ থাকতে পারে তার পিছনে 😛 )। আর স্থায়ীভাবে যে নামগুলো মনে রাখবে সেগুলো মনে রাখা তোমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে তোমার ব্রেইন ধরে নিয়েছে বলেই তোমার মনে আছে।

৩)পুনরাবৃত্তিঃ যুগ যুগ ধরে আমরা মুখস্ত করার এই পদ্ধতি ই ব্যাবহার করে আসতেছি। আমাদের উদাহরণে নামের লিস্ট টা যদি একবার দেখার কথা না বলে তোমাকে লিস্ট টা প্রিন্ট করে দিয়ে বলা হত এটা মুখস্ত করে আসো, কালকে এটার উপর পরীক্ষা তাহলে ভেবে দেখ তুমি কি করতে। নিশ্চয়ই তুমি সারারাত ধরে বারবার নামগুলা দেখতে, সহজ ভাষায় মুখস্ত করতে এবং পরের দিন নাক চোখ বুজে দশটা নাম ই সাফল্যের সঙ্গে লিখে দিতে।

b

হ্যা পুনরাবৃত্তি এর মাধ্যমে আমরা সত্যিই কোন কিছু মনে রাখতে পারি। একটু গভীর সাইন্স থেকে ব্যাখ্যা করলে বলতে হবে আমরা যখন কোন কিছু মনে রাখি তখন আমাদের মস্তিষ্কের নিউরন গুলো একটা নতুন সংযোগ গঠন করে। আমরা যত রিপিট করি ঐ নির্দিষ্ট বিষয়টা, ঐ বিষয় নিয়ে বারবার নতুন নিউরন সংযোগ তৈরী হতে থাকে। এবং শেষ পর্যন্ত অনেকগুলো সংযোগ একই বস্তুকে নির্দেশ করে বলে বিষয়টা শক্তিশালী স্মৃতিতে পরিণত হয়।যেমন বাংলাদেশের আয়তন যে ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিমি এই তথ্য টা শুধুমাত্র পুনরাবৃত্তি এর কারণেই আমরা কখনোও ভুলে যাই না।

তাই মাঝে মাঝেই আগের পড়া বিষয়গুলো রিভাইস দেওয়ার মাধ্যমে তুমি আরো ভালোভাবে সেগুলো মনে রাখতে পারবে সেটা বলার কোন অপেক্ষা রাখেনা।

৪)সম্পর্ক বা অর্থ খুজে বের করাঃ তুমি নিশ্চয়ই “র্ডমারদাবো”- এরকম উদ্ভট জিনিস মনে রাখতে পারবে না কিছুতেই? কিন্তু যদি বলা হয় যে যেটা আসলে ওখানে লেখা সেটা আসলে “মাদারবোর্ড” তাহলে?এখন? আরেহ এটা মনে রাখা কোন ব্যাপার হলো! কি এটাই বলবে না মনে মনে?

একটু ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা যাক ব্যাপারটা, প্রথমটার কোন অর্থ নেই, তাই এটা মনে রাখা আমাদের জন্য প্রায় অসম্ভব, কিন্তু দ্বিতীয়টার অর্থটা সহজ। এটা মনে রাখা তেমন ব্যাপার না।  আমাদের লিস্ট এর নামগুলোর সবমিলিয়ে কোন অর্থ নেই (শুধুমাত্র random নামের লিস্ট)। কিন্তু যদি পুরো লিস্ট এর আমরা একটা সামগ্রিক অর্থ বের করতে পারতাম তাহলে সব নামগুলো মনে রাখা একদম ই সহজ হয়ে যেত।

অনেক সময় যদি অর্থটা খুব কমন কিছু হয়ে যায় তখন শুধু অর্থ বের করার মাধ্যমে আমরা আর তা মনে রাখতে পারবো না। তখন যেটা দরকার হবে মজার কিছু, ভয়ংকর কিছু, দুঃখের কিছু যা তোমার সারাজীবন মনে রাখবে এমন কিছুর সাথে সম্পর্ক খুজে বের করা। দেখবে মনে রাখাটা তখন কত্ত সোজা!

670px-Memorize-Vocabulary-Step-1-Version-2

ব্যাপারটা ক্লিয়ার হলো না তাই না?  আমরা যখন ই কোন লিস্ট বা বিমূর্ত কিছু দেখি যা আমাদের মনে রাখতে হবে আমাদের ব্রেইন স্বতঃস্ফুর্ত ভাবেই সম্পর্ক খুজে বেড়ায় অনেক ক্ষেত্রে।  যেমন আমাদের লিস্টের কথা ধরা যাক, যে নামগুলো তোমার মনে ছিলো না সেগুলো কি এগুলো- তন্বী, মীম, দোলা, মিতু, নিশাত… (আরে!হ্যা তাই তো!) এই নামগুলো তোমার ভুলে যাওয়ার চান্স বেশি কারণ এগুলোর সাথে তোমার ব্রেইন কোন সম্পর্ক স্থাপণ করতে পারে না, আর করলেও নামগুলো যেমন কমন এবং বৈশিষ্ট্যহীন তোমার তৈরীকৃত সম্পর্ক তেমন ই হবে এবং খুব শীঘ্রই তুমি ভুলে যাবে।

আর যে নামগুলো মনে রাখার সম্ভবনা বেশি এবং তোমার ব্রেইন স্বভাবত যেসব সম্পর্ক তৈরী করে নিবে তা হলো-

শিলা (শিলা কি জওয়ানি 😛 )

ছালছাবিল(অদ্ভুত নাম, এবং তুমি এখানে এরকম নাম দেখে অবাক হয়েছো)

শিশির (সাকিব-আল-হাসান এর বউ)

ব্রেইন যদি স্বাভাবিকভাবে কোন সম্পর্ক স্থাপন করতে অস্বীকার করে তাহলে আমরা আবারও ব্রেইনকে বোকা বানাবো এবং জোড় করে কোন একটা সম্পর্ক স্থাপন করবো। যেমন মীম নামটির কথা ধরা যাক। কমন নাম বলে তোমার ব্রেইন কোন শক্তিশালী সম্পর্ক স্থাপনে স্বাভাবিক ভাবে ব্যার্থ হবে। আমরা এখন জোর করে একটা সম্পর্ক স্থাপন করব। যেমন মডেল মীম এর কথা ধরা যাক। লিস্টে মীম নামটা দেখার সাথে সাথে মডেল মীম এর কথা ভাবো, এবং সম্পর্ক টা আরো শক্তিশালী করার জন্য মীমের একটা মজার নাটকের কথা ভাবো। হ্যা তোমার ব্রেইন এখন তোমার আগের কোন মজার স্মৃতির সাথে লিস্টের নামটাকে জুড়ে দিতে পেরেছে এবং সে এখন মনে রাখতে রাজি। জিজ্ঞেস করে দেখ তোমার ব্রেইন কে! দেখ মনে রাখতে পারে কিনা সে।

মনে রাখবে সম্পর্ক স্থাপন হলো এমন একটা ট্রিক যা ওয়ার্ল্ড মেমরী চ্যাম্পিয়ান রা খুব বেশি ব্যাবহার করে। সম্পর্ক স্থাপন প্র্যাকটিস করার মাধ্যমে তুমিও নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারবে। তখন এক সেট এলোমেলো তাস সিরিয়াল অনুযায়ী বলে দেওয়াও তোমার পক্ষে অসম্ভব কিছু হবে না(আমি কিছুদিন চেস্টা করে ২৬ টা পর্যন্ত পেরেছি 😀 , তুমি প্র্যাকটিস চালিয়ে গেলে এর থেকে বেশি পারবে আশা করি)।

আমরা কন্সেপচুয়াল পয়েন্টগুলো মোটামুটি শিখে ফেলেছি। তাই আজকের মত এখানেই ইতি টানছি।আগামী পর্বে আমরা আরো ইন্টারেস্টিং এবং ট্রিকি কিছু টেকনিকস সম্পর্কে জানবো।মনে রাখা বেশ কষ্টকর কিন্তু মনে না রেখে কোন উপায় নেই এমন কিছু বিষয় মুখস্ত করার কিছু সহজ উদাহরণ থাকবে।এবং সব শেষে কিভাবে সবগুলো টেকনিকস সাফল্যের সাথে প্রয়োগ করতে হবে-তা বুঝানোর জন্য আমাদের লিস্টের নামগুলো মনে রাখার একটা উদাহরণ দেওয়া হবে।উদাহরণ টা ফলো করলে তুমি একবার দেখেই পরেরদিন সবগুলো নাম বলতে পারবে, তাও সিরিয়াল অনুযায়ী!

ততদিনের জন্য শুভকামনা রইল।আশা করি এখন থেকে এতকিছু কিভাবে মুখস্ত করবে নিয়ে আর মাথাব্যাথা হবে না। 🙂