আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা সংখ্যার সাথে একটু বেশীই জড়িত। জিনিসপত্র কেনাকাটা, ব্যাংকে টাকা লেনদেন, শেয়ার বাজার থেকে শুরু করে মানুষের জন্মদিন, পরীক্ষার ভাল-খারাপ সব কিছুতেই সংখ্যার আধিপত্য। এদের মধ্যেই কিছু সংখ্যার রয়েছে বিশেষ পরিচয়। আর এ বিশেষ পরিচয়গুলো নিয়েই এ লেখাটি।

মৌলিক – Prime

সংখ্যার বিশেষত্ব নিয়ে গেলে বলতে গেলে প্রথমেই যার কথা মাথায় আসে, তার নাম হল প্রাইম! অন্য সকল সংখ্যার ঈর্ষার পাত্র বলা যায় এ সংখ্যাগুলোকে। আর হবেই না বা কেন, এ পর্যন্ত এই সংখ্যাগুলো গণিতবিদদের যতটা মনোযোগ পেয়েছে, তার ছিটেফোটাও যে পায়নি অন্যরা! হোক সেটা ক্রিপ্টোগ্রাফির জগতে, কিংবা মানুষের প্রিয় সংখ্যা নির্বাচনে – সব ক্ষেত্রেই রয়েছে এর বিপুল ব্যবহার।

১ এবং সে সংখ্যাটি ছাড়া যদি সংখ্যাটির আর কোনো গুণণীয়ক না থাকে, তবে তাকে বলা হয় মৌলিক সংখ্যা। ১ থেকে ১০০০০ পর্যন্ত প্রাইম সংখ্যা আছে ১২২৯ টি। ১-যে প্রাইম বিবেচনা করা হয় না।

প্রথম দশটি প্রাইম সংখ্যাঃ 2, 3, 5, 7, 11, 13, 17, 19, 23, 29

ইউক্লিড প্রমাণ করে নিয়ে গিয়েছিলেন যে, “সবচেয়ে বড় প্রাইম সংখ্যা” বলতে কিছু নেই। এ কারণে বড় বড় প্রাইম সংখ্যা বের করা নিয়ে গণিতবিদদের আগ্রহের অন্ত নেই। বড় বড় প্রাইম সংখ্যা বের করতে ব্যবহার হচ্ছে সুপার কম্পিউটার। আগস্ট ২০১৫ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় প্রাইম সংখ্যাটি হল  (257,885,161 − 1), যার সর্বমোট ডিজিট সংখ্যা 17,425,170! [ তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া ]

কম্পোজিট –  Composite

যারা প্রাইম সংখ্যা না, তারাই কম্পোজিট! তবে ১ কম্পোজিট সংখ্যা না। ১ কে প্রাইম সেটেও নেওয়া হয়নি, কম্পোজিট সেটেও নেওা হয়নি, Forever Alone বেচারা। তবুও সবাই ১ হওয়ার জন্য কত দৌড়াদৌড়ি করে। :p

প্রথম দশটি কম্পোজিট সংখ্যাঃ 4, 6, 8, 9, 10, 12, 14, 15, 16, 18

১ থেকে ১০০০০ এর মধ্যে এ ধরণের সংখ্যা আছে ৮৭৬৯ টি।

ফিবোনাচি –  Fibonacci

প্রাইমের পরই জনপ্রিয়তার দিক থেকে শীর্ষে আছে ফিবোনাচি সংখ্যাগুলো। এটি আসলে একটি সিরিজ। এ সিরিজের প্রতিটি সদস্য হল তার আগের দু’টি সদস্যের যোগফল। কনভেনশন অনুসারে এর প্রথম দু’টি সদস্য ঠিক করা আছে ০ এবং ১। তাহলে এর,

তৃতীয় সদস্য = ০+১ = ১

চতুর্থ সদস্য = ১ + ১ = ২

পঞ্চম সদস্য = ১ + ২ = ৩

ষষ্ঠ সদস্য = ২ + ৩ = ৫

সপ্তম সদস্য = ৩ + ৫ = ৮

অষ্টম সদস্য = ৫ + ৮ = ১৩

নবম সদস্য = ৮ + ১৩ = ২১

দশম সদস্য = ১৩ + ২১ = ৩৪

১ থেকে ১০০০০ পর্যন্ত ফিবোনাচি সংখ্যা আছে মাত্র ১৯ টি!

জোড় – Even

দুই দ্বারা বিভাজ্য সংখ্যাগুলোকে বলা হয় জোড়।

প্রথম দশটিঃ ২, ৪, ৬, ৮, ১০, ১২, ১৪, ১৬, ১৮, ২০

১০০০০-এর ছোট জোড় সংখ্যা রয়েছে ৪৯৯৯ টি।

বিজোড় – Odd

দুই দ্বারা যেসব সংখ্যা বিভাজ্য না, তারা হল বিজোড়।

প্রথম দশটিঃ ১, ৩, ৫, ৭, ৯, ১১, ১৩, ১৫, ১৭, ১৯

১০০০০-এর ছোট বিজোড় সংখ্যা রয়েছে ৫০০০ টি। ০ জোড়-বিজোড় কোনোটাই না।

শয়তান – Evil

কোনো সংখ্যাকে Evil বলা হয়, যদি এর বাইনারি রিপ্রেজেন্টেশনে জোড়সংখ্যক ১ থাকে।

প্রথম দশটিঃ ৩, ৫, ৬, ৯, ১০, ১২, ১৫, ১৭, ১৮, ২০

১০০০০-এর ছোট এমন সংখ্যা রয়েছে ৪৯৯৯ টি।

অডিয়াস – ODIOUS

কোনো সংখ্যার বাইনারি রিপ্রেজেন্টেশনে বিজোড় সংখ্যক ১ থাকলে তাকে বলা হয় Odious সংখ্যা।

প্রথম দশটিঃ ১, ২, ৪, ৭, ৮, ১১, ১৩, ১৪, ১৬, ১৯

১০০০০-এর ছোট Odious সংখ্যা আছে ৫০০০ টি।

প্যালিনড্রম – PALINDROME

কোনো সংখ্যা সামনে থেকে এবং পেছন থেকে একই রকম হলে তাকে বলা হয় প্যালিনড্রম সংখ্যা। যেমন ১২৩৩২১, একে উল্টো করলেও আসবে ১২৩৩২১।

প্রথম দশটিঃ ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ১১

১০০০০-এর নিচে প্যালিনড্রম সংখ্যা রয়েছে ১৯৮ টি।

প্যালিনড্রম প্রাইম – PALINDROMIC PRIME

প্যালিনড্রম সংখ্যাটি যদি একইসাথে প্রাইমও হয়, তাহলে তাকে বলা হয় প্যালিনড্রম প্রাইম।

প্রথম দশটিঃ ২, ৩, ৫, ৭, ১১, ১০১, ১৩১, ১৫১, ১৮১, ১৯১

১০০০০-এর ছোট প্যালিনড্রম প্রাইম রয়েছে ২০ টি।

জমজ – Twin

একটি প্রাইম সংখ্যাকে Twin বলা হয়, যদি এর দুই ব্যবধানে আরেকটি প্রাইম থাকে।

প্রথম দশটি Twin প্রাইমঃ 3, 5, 7, 11, 13, 17, 19, 31, 41

১০০০০ থেকে ছোট ৪০৯ টি Twin প্রাইম রয়েছে।

অ্যাবানডেন্ট – Abundant

একটি সংখ্যাকে Abundant বলা হয়, যদি এর সবগুলো ধনাত্বক বিভাজকের (অবশ্যই সংখ্যাটি ছাড়া :p ) যোগফল সংখ্যাটি থেকে বড় হয়।

যেমন ১২ একটি Abundant সংখ্যা। ১২-এর বিভাজক ১,২,৩,৪,৬, ১২। ১২ ছাড়া অন্য বিভাজকের যোগফল = ১ + ২ + ৩ + ৪ + ৬ = ১৬, যা ১২ থেকে বড়। এজন্যই ১২ একটি Abundant সংখ্যা!

প্রথম দশটি Abundant সংখ্যাঃ 12, 18, 20, 24, 30, 36, 40, 42, 48, 52

১০০০০-এর নিচে Abundant সংখ্যা রয়েছে ২৪৮৭ টি।

ডেফিসিয়েন্ট – Deficient

Abundant সংখ্যার বিপরীত হল Deficient। একটি সংখ্যা x-কে ডেফিসিয়েন্ট বলা হয় যদি x ছাড়া এর অন্য পজিটিভ বিভাজকগুলোর যোগফল x অপেক্ষা ছোট হয়।

প্রথম দশটিঃ ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৭, ৮, ৯, ১০, ১১

১০০০০-এর চেয়ে ছোট এমন সংখ্যা রয়েছে ৭৫০৮ টি।

পারফেক্ট – Perfect

একটি সংখ্যা x-কে পারফেক্ট বলা হয়, যদি x ছাড়া এর অন্য পজিটিভ বিভাজকগুলোর যোগফল x-এর সমান হয়।

প্রথম দশটিঃ 6, 28, 496, 8128, 33550336, 8589869056, 137438691328, 2305843008139952128, 2658455991569831744654692615953842176, 191561942608236107294793378084303638130997321548169216

১০০০০-এর ছোট পারফেক্ট সংখ্যা রয়েছে ৪ টি।

শক্তিশালী – Powerful

যদি কোনো সংখ্যা x-এর যতটি প্রাইম বিভাজক p রয়েছে, তাদের বর্গগুলোও x-এর বিভাজক হয়, তবে x-কে বলা হয় পাওয়ারফুল সংখ্যা। যেমন, ৩৬-এর প্রাইম বিভাজক আছে ২ এবং ৩। ২২ = ৪, এটি ৩৬-এর বিভাজক। ৩৩=৯, এটিও ৩৬-এর বিভাজক। তাই ৩৬ একটি পাওয়ারফুল সংখ্যা।

প্রথম দশটিঃ ১, ৪, ৮, ৯, ১৬, ২৫, ২৭, ৩২, ৩৬, ৪৯

১০০০০-এর ছোট পাওয়ারফুল সংখ্যা রয়েছে ১৮৪ টি।

রেফারেন্স

Muntasir Wahed

Muntasir Wahed

System Administrator at স্বশিক্ষা.com
Jack of all trades, master of none.
Muntasir Wahed
Muntasir Wahed