অনেকের ধারণা স্তন ক্যান্সার শুধু নারীদেরই হয়, কারণ পুরুষের কোনো স্তন টিস্যু নেই। ধারণাটি ভুল, কারণ পুরুষেরও স্তন টিস্যু রয়েছে। নারীদের ক্ষেত্রে এটি বয়ঃসন্ধির পরে বৃদ্ধি পায়, যা পুরুষের ক্ষেত্রে হয় না। আর যেহেতু পুরুষের স্তন টিস্যু রয়েছে, তাই পুরুষেরও স্তন ক্যান্সার হতে পারে। তবে নারীদের তুলনায় পুরুষের স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম। যুক্তরাজ্যে এক লক্ষ পুরুষের  মাঝে কেবল ১ জন স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন।

পুরুষের ক্ষেত্রে স্তন ক্যান্সার হয়ে থাকে বোটার (nipple) পেছনের দিকে অবস্থিত সামান্য কিছু স্তন টিস্যুতে। সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হল এই অঞ্চলে শক্ত এক ধরণের স্ফীতি। এক্ষেত্রে কোনো ধরণের ব্যাথা অনুভূত হয় না। তবে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে এ ধরণের স্ফীতি স্তন ক্যান্সার না, বরং এগুলো gyanecomastia-র কারণে হয়ে থাকে। এটি ক্যান্সার নয়, এবং খুবই সাধারণ একটি সমস্যা, যেখানে পুরুষের স্তন টিস্যু স্ফীত হয়ে ওঠে।

অন্যান্য লক্ষণের মধ্যে রয়েছে স্তনবৃন্ত ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়া, কিংবা স্তনবৃন্ত দিয়ে তরল পদার্থ বেরিয়ে আসা।

 

কাদের স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশী

৩৫ বছরের কম বয়সী পুরুষের স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এ সম্ভাবনা বাড়তে থাকে। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে পুরুষের স্তন ক্যান্সার হয় ৬০ থেকে ৭০ বছর বয়সে। নিচের বিষয়গুলো স্তন ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়ঃ

  • রক্ত সম্পর্কের কোনো নারীর স্তন ক্যান্সার
  •  বক্ষদেশে বিকিরণের প্রভাব
  • ড্রাগ কিংবা হরমোন ট্রীটমেন্টের কারণে স্তনের স্ফীতি (gynecomastia), অথবা ইনফেকশন
  • এস্ট্রোজেন হরমোন গ্রহণ করা
  • Klinefelter’s syndrome (একটি অত্যন্ত দুর্লভ জীনগত সমস্যা)
  • cirrhosis (যকৃতের এক ধরণের রোগ)
  • Mumps orchitis-এ রোগ
  • টেস্টিকলে (শুক্রাশয়) আঘাত পাওয়া
  • টেস্টিকল (শুক্রাশয়) ঠিক জায়গায় না থাকা

পুরুষের স্তন ক্যান্সার কতটা ঝুঁকিপূর্ণ

পুরুষের স্তন ক্যান্সারের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল এটি সাধারণত অনেক দেরীতে ধরা পরে। কারণ পুরুষের স্তন টিস্যুর পরিমাণ খুবই কম, এবং এই অল্প স্তন টিস্যুতে অস্বাভাবিক কিছু ঘটে থাকলেও সেটা সচরাচর ধরা পড়ে না। এছাড়াও, যেহেতু স্তন টিস্যুর পরিমাণ খুবই পাতলা, তার অর্থ হল টিউমার খুব সহজেই এই পাতলা স্তর ভেদ করে আশেপাশের অন্যান্য টিস্যুতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ ব্যপারে সচেতনতা খুব কম থাকায় অনেক ক্ষেত্রেই ধরা পড়ার আগেই ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ে। সেক্ষেত্রে নিরাময় কঠিন হয়ে পড়ে। এ কারণে নারীদের তুলনায় পুরুষের স্তন ক্যান্সারের নিরাময়ের হার কম।

লক্ষণসমূহ

পুরুষের স্তন ক্যান্সারের লক্ষণসমূহ বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই নারীদের মতই। এগুলো নিয়ে আলোচিত হয়েছে আগের পর্বে। নিচের লক্ষণগুলো দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের সাথে দেখা করা উচিতঃ

  • স্তনে থোকা থোকা দেখা দেওয়া।
  • বগলের নিচে বা স্তনে ব্যাথা হওয়া
  • স্তনবৃন্ত বা এর চারপাশে র‍্যাশ দেখা দেওয়া।
  • যেকোনো একটি বগলের নিচ ফুলে যাওয়া।
  • স্তনবৃন্তের আকৃতি বদলে যাওয়া অথবা স্তনবৃন্ত ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়া।
  • স্তনের আকৃতি ও আয়তন বদলে যাওয়া।
  • স্তন বা স্তনবৃন্তের ত্বক উঠে যাওয়া।
  • স্তনের যেকোন অংশের টিস্যু ভারী হয়ে যাওয়া।
  • স্তনবৃন্ত থেকে রক্ত বা স্বচ্ছ তরল পদার্থ নির্গত হওয়া।

কেউ নিজে যদি উপরে বর্ণিত কোন লক্ষ্ণণ দেখে থাকেন, তার উচিৎ দ্রুত চিকিৎসকের সাথে কথা বলা।

সতর্কতা

স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর হলঃ

  • এলকোহল গ্রহণ পরিমিত রাখাঃ সপ্তাহে ৩৫০ মিলিলিটারের বেশী এলকোহল গ্রহণ উচিত নয়।
  • স্বাস্থ্যকর খাবারের অভ্যাসঃ সুষম খাদ্য গ্রহণ। স্থূলতা (obesity) স্তন ক্যান্সারের অন্যতম কারণ।

রোগ শনাক্তকরণ এবং চিকিৎসা 

ম্যামোগ্রাফি, বায়োপসি (অল্প পরিমাণ টিস্যু নিয়ে মাইক্রোস্কোপে পর্যবেক্ষন) কিংবা ব্রেস্ট এক্সামিনেরশনের মাধ্যমে পুরুষের স্তন ক্যান্সার শনাক্ত করা হয়।  সার্জারি, র‍্যাডিয়েশন, ক্যামোথেরাপি, বায়োলজিক্যাল থেরাপি এবং হরমোন থেরাপি স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সাধারণত পুরুষের স্তন ক্যান্সার হরমোন থেরাপিতে নারীদের তুলনায় ভাল প্রতিক্রিয়া দেখায়। ৯০% ক্ষেত্রেই পুরুষের স্তন ক্যান্সারের হরমোন রিসেপ্টর থাকে, যার অর্থ হল, হরমোন থেরাপি বেশির ভাগ পুরুষের ক্যান্সার চিকিৎসায় কাজে লাগতে পারে।

রেফারেন্স

Muntasir Wahed

Muntasir Wahed

System Administrator at স্বশিক্ষা.com
Jack of all trades, master of none.
Muntasir Wahed
Muntasir Wahed