আসলে আমাদের ভাষায় ডিপ্রেশনের কোন সঠিক অনুবাদ হয়নি। যাকে বিষণ্ণতা বলে চালিয়ে দেওয়া হয়, তা আসলে বিষণ্ণতা না। ডিপ্রেশনকে শুধু বিষণ্ণতা বলে চালিয়ে দেওয়া আমাদের প্রচলিত সমাজের অনেক বড় একটি ভুল।আমাদের প্রথমে বুঝতে হবে কোনটি ডিপ্রেশন, আর কোনটি বিষণ্ণতা।
enhanced-7785-1437684027-1
বিষণ্ণতা একটি স্বাভাবিক ব্যাপার প্রতিটি মানুষের জীবনে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রতিনিয়ত এর সম্মুখীন হতে হয়। এমন কোনো মানুষ পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া যাবে না, যে জীবনে একবারের জন্য হলেও বিষণ্ণ হয়নি! মায়ের সাথে ঝগড়া, প্রেমিকের সঙ্গে অভিমান, বন্ধুর সাথে রাগারাগি – আরও অনেক কারণেই সেটা হতে পারে। এধরণের অনুভূতিগুলো যেমন হঠাত করে আসে, ঠিক তেমনি হঠাত করেই মিলিয়ে যায়। এক্ষেত্রে দৈনন্দিন কাজগুলো চালিয়ে যেতেও খুব বেশি সমস্যায় পড়তে হয় না।
ডিপ্রেশন এরকম হঠাত করে আসে না। এটি অনেক বছর ধরেই মনের মধ্যে গেঁথে যেতে থাকে। আক্রান্ত মানুষেরা যেকোনো কিছু নিয়েই অনেক বেশী ভাবতে (Over thinking – এখানেও কোন সঠিক বাংলা পেলাম না) ভালবাসেন। এই অধিক ভাবনা যেন তাদের বাঁচিয়ে রাখে। তাদের আবেগ, অনুভূতি, আচার-আচরণ সব একসময় এটি দ্বারা নিয়ন্তিত হতে থাকে। তাদের মধ্যে একসময় নিজের প্রতি একটা ঘৃণা চলে আসে। সেই সাথে থাকে প্রচণ্ড অপরাধবোধ – তাদের কাছে মনে হতে থাকে আশেপাশের প্রিয় মানুষগুলোর বেদনার জন্য সে নিজেই দায়ী, হতাশা – সে একটা বাস্তব সত্য চোখের সামনে দেখতে পায় যে সব কিছু দিন দিন কমপ্লিকেটেড হয়ে যাচ্ছে, একাকীত্ব – চারপাশে মানুষ দ্বারা পরিবেষ্টিত থেকেও সে কারো সাথে সহজভাবে মিশতে পারে না, প্রচণ্ড উদ্বিগ্ন থাকে সে প্রতিটি মুহূর্তে, সেই সাথে বিষণ্ণতা তো আছেই। তাই আজ আমরা প্রথমত যা শিখলাম, ডিপ্রেশন মানে শুধু “বিষণ্ণতা” না। 
enhanced-11124-1437675981-8
এই ডিপ্রেশন এক ধরণের মানসিক রোগ, এবং এর জন্য কোন নির্দিষ্ট ঘটনা ঘটার দরকার হয় না। হয়তো মানুষটি দৈনন্দিন জীবনের মধ্য দিয়েই যেতে থাকে, মুখে হাসি ফুটিয়ে, আর এদিকে ডিপ্রেশন তাকে কুড়ে কুড়ে খায়। বাইরের সবার কাছে মনে হবে তার জীবন পুরোপুরি ঠিক আছে, কিন্তু কিছু একটা থাকে, যেটা ঠিক খাপ খায় না, বাইরের কারো চোখে এটা পড়ে না, পড়ার কথাও নয়।
আজকাবানের ডিমেন্টরদের মত ডিপ্রেশন মানুষের মন থেকে সব ভাল লাগা শুষে নেয়। একসময় যার বই পড়তে অনেক ভাল লাগতো, সে আর বইয়ে মন বসাতে পারে না। তার কাছে এর গুরুত্ব চলে যায়। ভাল লাগাগুলো উধাও হয়ে যায়। আর আমাদের সমাজটি এমন যে, এখানে মানসিক সমস্যা বলতেই মানুষ বোঝে পাগল। কাউন্সেলিং এখানে এক প্রকার আভিজাত্য। মানুষটি তাই আস্তে আস্তে ভেতর থেকে মরে যেতে থাকে। তার আশেপাশের কোন কিছুই আর আগের মত ভাল লাগে না। ডিপ্রেশন তার সমস্ত শক্তি শুষে নেয়। তার মধ্যে কোন অনুপ্রেরণা, আনন্দ অবশিষ্ট থাকে না। তারা সব শেষে জীবনের অর্থ খুঁজে পেতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে ওঠে। ধীরে ধীরে এটা তার অভ্যাসে পরিণত হয়। সে ধৈর্য হারিয়ে ফেলে, অল্পতেই রেগে যেতে শুরু করে, খুব সহজেই ভেঙ্গে পড়ে, হতাশাকে আঁকড়ে ধরে। এবং তার স্বাভাবিক হতে সময় লাগে অনেক বেশী।
আশা করি আমরা বুঝতে পেরেছি, ডিপ্রেশন মানে বিষণ্ণতা না। আগামী পর্বে আমরা ডিপ্রেশন শনাক্ত করার চেষ্টা করবো!
সবাই ভাল থাকবেন, আশেপাশের মানুষগুলোকে ভাল রাখার চেষ্টা করবেন। ও আচ্ছা, শেষে আগে মনে করিয়ে দিই। <3
enhanced-8644-1437686549-8
পাদটীকাঃ এই লেখাতে বেশ কিছু গ্রাফ ব্যবহার করা হয়েছে। এগুলো আমার তৈরি না। আমি Buzzfeed থেকে সংগ্রহ করে নিয়েছি।
Muntasir Wahed

Muntasir Wahed

System Administrator at স্বশিক্ষা.com
Jack of all trades, master of none.
Muntasir Wahed
Muntasir Wahed