পৃথিবীটা কি অসাধারণ সুন্দর, তাই না? কিন্তু আপনি জানেন কি আপনার খুব কাছের কিছু মানুষই এ সুন্দর পৃথিবীতে থেকেও সৌন্দর্য অনুভব করতে পারছেনা। আরে বাবা, যে মন দিয়ে সৌন্দর্যটা অনুভব করবে সে মনই যখন অসুস্থ হয়ে যায় তখন সুন্দর বুঝবে কেমন করে?
মন বলে তো কিছু নেই। মস্তিষ্কটাকেই আমরা আদর করে মন বলি। হাত, পা,চোখ, লিভার, কিডনির মতোই দেহের ভেতর থাকা মস্তিষ্কটাতে মাঝে মাঝে গোলমাল লেগে যাওয়া খুব স্বাভাবিক। গলায় যেমন খুচখুচও করতে পারে আবার গলগন্ড হয়ে যেতে পারে ঠিক তেমনি, মনটা গোলমাল করে মাঝে মাঝে স্রেফ মন খারাপ হয়। আবার মাঝে মাঝে কঠিন কঠিন মানসিক সমস্যা পর্যন্ত গড়ায়।
পারিবারিক, পারিপার্শ্বিক, এমন কি বংশগত কারনে যেকোনো মানুষের, যেকোনো বয়সে, যে কোন সময় মানসিক রোগ হতে পারে। মানসিক রোগের লক্ষণগুলো মূলত আচরনের পরিবর্তন। প্রথম দিকে আচরণগত পরিবর্তনগুলোকে আমরা আমলে নেই না । এমনিই হচ্ছে, মনে হয় মন খারাপ, ঠিক হয়ে যাবে চিন্তা করে কোন পদক্ষেপ নেইনা। কিন্তু তাদের এ ভাল না লাগা, চুপচাপ থাকা, উত্তেজিত হয়ে পড়া যে কখন হতাশা, বিষন্নতা, বাইপোলার ডিসঅর্ডার বা অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার পর্যন্ত গড়ায় আমরা বুঝতেই পারিনা। তাদের অস্বাভাবিক আচরণ গুলোর প্রকটতা বাড়লে আমরা প্রায়ই বিরক্ত হয়ে অযথা চিল্লাচিল্লি করি,এক পর্যায়ে সরে পড়ি।আমাদের সমাজে মানসিক রোগ নিয়ে যথেষ্ঠ সচেতনতা না থাকায় আমরা রোগ এবং রোগীকে বুঝতে পারি না, বুঝলেও বুঝি না তাদের সাথে কেমন আচরণ করা উচিৎ।
কিন্তু আপনি চাইলেই তো আমাদের খুব কাছের বন্ধুটির ফার্স্ট এইড হতে পারেন। উঁহু, আমি মোটেই আপনাকে ঘন্টার পর ঘন্টা তার কথা শুনতে বলছিনা। শুধু একটু সহানুভূতিশীল হতে বলছি। একটু সাহায্য করতে বলছি।
আমি কীভাবে সাহায্য করব?
- তাকে বলুন যে আপনি তাকে ভালবাসেন, তার পাশে আছেন এবং তাকে ছেড়ে যাবেন না।
- তাকে বলুন যে সে ভেঙ্গে পড়েনি সে আগের মতই ‘জোস’ আছে।
- তার অসুখটি সম্পর্কে একটু খোঁজ খবর নেন এবং তার প্রাত্যহিক কাজ এ সাহায্য করুন।
- মন দিয়ে তাদের কথা শুনুন (ঠিক বা বেঠিক)।
- তারা কাঁদতে চাইলে কান্না থামানোর চেষ্টা করবেন না। তাদেরকে কাঁদতে দিন, এবং কান্না শেষ হলে চোখ মুছে দিয়ে জড়িয়ে ধরুন। আপনি জানেন না, এ সামান্য কাজটি কি অসামান্য সহানুভূতি প্রকাশ করে।
- মানসিক চিকিৎসা আমাদের সমাজে এখনো প্রচলিত নয়।তাদেরকে চিকিৎসা পেতে সাহায্য করুন। তাদের কাছের মানুষকে বোঝান মানসিকভাবে অসুস্থ মানেই পাগল নয়।
- ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে তাদের ঘুম বেড়ে যেতে পারে। তাদেরকে নিদ্রাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করে দিন।
- মনে রাখুন, তারা ‘রোগী’, তাই তাদের সব কাজকর্মকে সাধারণ উচিৎ অনুচিতের পাল্লায় মাপবেন না।
- তাদেরকে বুঝতে দিবেন না যে তারা রোগী।
আমি এ কাজগুলো কেন করব?
- আপনার খুব কাছের প্রফুল্ল বন্ধুকে বিষণ্ন দেখতে নিশ্চয়ই আপনার ভাল্লাগবেনা। তাকে ভাল হতে সাহায্য করুন। বিশ্বাস করুন,তার মুখে একবার হাসি ফোটাতে পারলে আপনি অপার্থিব আনন্দ পাবেন।
- মানুষটি যদি আপনার সাহায্যের অভাবে ক্রমেই ঝরে পড়ে তবে একটা সময় আপনি তীব্র অপরাধবোধে ভুগবেন।
- সে সেরে উঠলে আজীবন আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে।
মস্তিষ্ক মানুষের চালিকাশক্তি। একজন মানুষের মস্তিষ্ক সারিয়ে তুলতে সাহায্য করা মানে তাকে একটি সুন্দর জীবন ফিরিয়ে দেয়া।আর তাকে সাহায্য করা কত সহজ। তাই না? সহজ কয়েকটি কাজ করে একটা মানুষের জীবন সুন্দর করে দেয়ার ঐশ অনুভূতি থেকে আপনি নিজেকে বঞ্চিত করবেন?
মোটেই না। চলুন কাছের এ ধরনের মানুষগুলোকে সাহায্য করি। কাছে দুঃখী কেউ থাকলে আমরাও সুখী থাকতে পারব না। আমাদের সুখ ভাগ করে গুণ করি।
অনেকের জন্যই হয়ত এই লেখাটা সুফল বয়ে আনবে ^_^
Much appreciated
Nice writing on such an important yet undiscussed topic
সহজ এবং সাবলীল ভাষায় লিখনি, রচনার বিষয় বস্তুকে চমৎকার ভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। সর্বোপরি ধন্যবাদ আপনাকে সময় উপযোগী একটি লিখার জন্য। এমন আরো লিখার প্রত্যাশা করছি।
nice nd keep it up… hope 2 see more like this
অন্যেক ভালো লেগেছে :’)
খুব সুন্দর লিখা,আমিও ও ভুগছি।ভগবান করুন যেন সুস্থতা লাভ করি
ধন্যবাদ 🙂
আপনার সুস্থতা কামনা করছি। 🙂