আগের পর্বে সূচক-লগারিদমের সূত্রপাত, শর্ত নিয়ে আলোচনা হয়েছিল; এবারের পর্বে থাকবে e ভিত্তিক (natural) ও 10 ভিত্তিক (common) লগারিদম, ln এর তাৎপর্য, e কেন ভিত্তি হিসেবে বহুল ব্যবহৃত। এছাড়াও থাকবে লগারিদম ও সুচকের ব্যবহার , রিখটার স্কেল, pH, ডেসি-বেল ইত্যাদিতে লগারিদমের প্রয়োগের সুবিধা।

loga(0)  :

শুরু করা যাক আগের পর্বের সেই অমীমাংসিত প্রশ্ন দিয়ে, loga(0)   =?   এর মানে কী আসলে? লগারিদম সংজ্ঞা অনুযায়ী বলতে গেলে এমন, a এর ঘাত (পাওয়ার) কত হলে এর মান ০ হবে। এটা আদৌ সম্ভব? কোন কিছুর উপর পাওয়ার দিলে তা কি কখনও ০ হতে পারে? একটু অন্যভাবে চিন্তা করি,

ধরুন a এর মান 10। এখন 10 (a) এর ঘাত (পাওয়ার) আমরা ধীরে ধীরে কমাচ্ছি; অর্থাৎ প্রথমে 0 তারপর -1, তারপর -2 এভাবে…(নিচের মত করে)

100  =1

10-1 =0.1  (ঘাত -1 , দশমিকের পর 0 টি 0)

10-2 = 0.01  (ঘাত -2 , দশমিকের পর 1 টি 0)

10-3 =0.001 (ঘাত -3 , দশমিকের পর 2 টি 0)

10-4 =0.0001 (ঘাত -4 , দশমিকের পর 3 টি 0)

………

10-100  =0.000000………1  (ঘাত -100 , দশমিকের পর 99 টি 0)

………

10  =0.000000………1  (ঘাত -∞ , দশমিকের পর অসীম সংখ্যক 0)

খেয়াল করলে দেখা যাবে, যত ঘাত কমাচ্ছি তত মান কমছে; এবং মান ততই ০ এর দিকে আগাচ্ছে ।  তাহলে আমরা বলতে পারি , ঘাত যখন -∞ হবে তখন এর মান ০ হবে। তখন দশমিকের পর অসীম সংখ্যক ০ বসবে, তারপর 1 বসবে।  দশমিকের পর অসীম সংখ্যক ০ থাকলে শেষের 1 এর কোন মূল্য আছে? নাই, তাই এটা ০ ই হবে।

তার মানে, a এর ঘাত (পাওয়ার) -∞ হলে এর মান ০ হবে। অর্থাৎ, loga(0)   = -∞

লগারিদমের ভিত্তি

যদিও লগারিদমের ভিত্তি যে কোন সংখ্যাই হতে পারে (শর্তাধীন) , তবুও ভিত্তির বিচারে লগারিদম কে ২ অংশে ভাগ করা যায়ঃ

  1. 10 ভিত্তিক লগারিদমঃ এর ভিত্তি হল 10 (log10x ) । একে Common লগারিদম ও বলা হয়।
  2. e ভিত্তিক লগারিদমঃ এর ভিত্তি হল e (logex ) । e হল π এর মতই বহুল ব্যবহৃত একটি অমূলদ সংখ্যা যার মান 7182…..। logex  কে সংক্ষেপে লেখা হয় lnx (উচ্চারন –এলএন এক্স , লন এক্স নয়); অর্থাৎ logex = lnx। e ভিত্তিক লগারিদম কে প্রাকৃতিক (natural)  লগারিদমও বলা হয়।

ভিত্তি (বেস) উল্লেখ না থাকলে, 10 ভিত্তিক ধরে নিতে হয়।

সাধারণ নিয়মঃ

লগ (log) একটি অপারেটর (যেমন sin,cos) এর মত সুনির্দিষ্ট কাজ করে। অন্যান্য অপারেটরের মত লগারিদমেও log এর জন্য কিছু নিয়ম প্রযোজ্যঃ

Rule name Rule Example
Product rule log(x ∙ y) = log(x) + ln(y) log(3 ∙ 7) = log(3) + log(7)
Quotient rule log(x / y) = log(x) – log(y) log(3 / 7) = log(3) – log(7)
Power rule log(x y) = y ∙ log(x) log(28) = 8∙ log(2)

ভিত্তি (base) রুপান্তরঃ

এছাড়াও লগারিদমের ক্ষেত্রে,  log(x y)= 1/log(y x)  ও

logax  =  logay  . logyx    এই ধরণের ফাংশন প্রযোজ্য।  আমরা এর মাধ্যমে যেকোন ভিত্তির log কে অন্য ভিত্তির মাধমে প্রকাশ করতে পারি, যেমন ধরা যাক 10 ভিত্তির log কে e ভিত্তিতে (ln) নেব,

logax= logae  . logex  =  logex /logea   অর্থাৎ, 

logax= lnx/lna

ভিত্তি কেন e:

লগারিদমের ভিত্তি 10 খুবই জনপ্রিয় ও কাজের, কারণ আমরা দৈনন্দিন জীবনের বেশিরভাগ হিসেবই 10 এর ভিত্তিতে করি। যেমন অনেক বড় কিংবা ছোট হিসেব আমরা 10 এর ঘাত আকারে প্রকাশ করি। প্রশ্ন হল, তাহলে e ভিত্তিক লগারিদমকে আলাদাভাবে বিশেষ  মর্যাদা দেয়ার কারণ কি? আসলে প্রাকৃতিক প্রায় সকল বস্তু, জীব ইত্যাদির জীবনসীমা (লাইফটাইম), কিংবা পণ্যের লাভক্ষতি , চক্রবৃদ্ধি  ইত্যাদি সুচকীয় হারে বাড়ে/কমে। এবং এই সূচকের ভিত্তি হল e (2.7182…)। এজন্যই e কে π এর মতই গুরুত্ব দেয়া হয়। আমরা যদি এই সূচকীয় ফাংশনের সূচক বের করতে চাই তবে লগারিদমের সাহায্য নিতে হবে, এবং সেই লগারিদমের ভিত্তিও হবে e, অর্থাৎ ln। এছাড়া জ্যামেতিকভাবে দেখলে (নিচের চিত্র),

300px-Logarithm_plots

সকল লগারিদমিক ফাংশনই X অক্ষকে (1,0) বিন্দুতে ছেদ করে। আমরা যদি এই বিন্দুর ঢাল বের করি তবে তা log এর ভিত্তির সাপেক্ষে ভিন্ন ভিন্ন হবে, যেমনঃ

log10x এর জন্য ঢালের মান 0.434,

log2x এর জন্য ঢালের মান 1.44,

log3x এর জন্য ঢালের মান 0.91

আচ্ছা, এমন কোন ভিত্তি আছে কি? যার জন্য ঢালের মান 1 হবে। হ্যা, সেটাই,

logex এর জন্য ঢালের মান 1।

ঢালের মান 1 , খুবই চমৎকার; কিন্তু এই মান কি কারণে তাৎপর্যপূর্ণ? ঢাল 1 মানে হল, Δy/Δx = 1। মানে x ও y সমান হারে বাড়ে। অর্থাৎ একে বৃদ্ধির হারের একক বিবেচনা করা যায়।

এসবকারণেই log/ln  এত বেশি ব্যবহৃত হয়।

ব্যবহারঃ

দৈনন্দিন জীবনে সূচকের ব্যবহার প্রচুর, অনেক বড় বড় দুরত্ব, ভর কিংবা অনেক ছোট কিছু পরিমাপে সূচকের সাহায্যে আমরা জটিল জটিল হিসেব সহজে করে ফেলি।

লগারিদম ব্যবহৃত হয় যেখানে আমাদের মুখ্য বিষয় থাকে ঘাত (পাওয়ার) । ঘাতের (পাওয়ার) সাহায্যে সহজেই এসিড ক্ষারের pH, রিখটার স্কেল, ডেসি-বেল প্রকাশ করা যায়।

যেমন্, pH = 3 বলতে আমরা বুঝি দ্রবণে H এর ঘনমাত্রা 10-3 । এবং pH=3  এর pH=4 যুক্ত দ্রবণের ঘনমাত্রা ১০ গুণ কম ( যেহেতু লগারিদম স্কেল ব্যবহৃত হচ্ছে)।

একইভাবে ডেসি-বেল দিয়ে শব্দের তীব্রতা মাপা হয়। একটি প্রমান তীব্রতার সাপেক্ষে শ্রুত শব্দ কত তীব্র তা বোঝা যায় ডেসি-বেল দিয়ে। তবে এখানে সরলরৈখিক ভাবে তীব্রতা বৃদ্ধি পায় না (যেহেতু লগারিদমিক স্কেল)। যেমন, ১ ডেসি-বেল এর জন্য তীব্রতা ২৬% বাড়ে।

ভুমিকম্প মাপার রিখটার স্কেল লগারিদম এর উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। ভূমিকম্পের তীব্রতা , কম্পাঙ্ক, দূরুত্ব ইত্যাদি বিবেচনায় রাখা হয় এ স্কেলে। এই স্কেলে মাত্রা ১ বৃদ্ধির অর্থ হচ্ছে তীব্রতা ১০ গুণ বেড়েছে ,  এবং শক্তি বাড়ে ৩১ গুণ। অর্থাৎ ভূমিকম্পের মাত্রা ৬ এবং ৭ এর পার্থক্য শুধু ১ নয়, তীব্রতার পার্থক্য ১০ গুণ ও শক্তির পার্থক্য ৩১ গুণ।

কৃতজ্ঞতাঃ

  • সালাউদ্দিন আহমেদ
  • হিমাদ্রী
  • খালেদ মোশাররফ মুকুট
  • গুগল