downloadপ্লুটো – আবিষ্কৃত হয় ১৯৩০ সালে, ফ্ল্যাগস্টাফ অ্যারিজোনা-র Lowell Observatory-তে। এটি প্রথম চিহ্নিত করেন Clyde W.Tombaugh. এর আগে বহু দিন ধরেই ধারণা ছিল যে, সৌরজগতে নবম একটি গ্রহ রয়েছে, যার নাম রাখা হয়েছিল প্ল্যানেট এক্স।

২২ বছর বয়সী Tombaugh সে সময় কাজটি করেছিলেন দু’টি ফটোগ্রাফিক প্লেট বিশ্লেষণের মাধ্যমে। এগুলো ছিলো দুই সপ্তাহের ব্যবধানে তোলা আকাশের একটি নির্দিষ্ট অংশের ছবি। যেকোনো ছুটে চলা বস্তু (হতে পারে এস্টেরইড, কমেট কিংবা গ্রহ) এতে ধরা পড়ে তুলনামূলকভাবে ভিন্ন অবস্থানের কারণে।

প্রায় এক বছরের বিশ্লেষণ শেষে Tombaugh শেষ পর্যন্ত একটি বস্তু দেখতে পান ডানের অরবিটে, এবং ঘোষণা দেন যে তিনি “প্ল্যানেট এক্স” আবিস্কার করে ফেলেছেন। Tombaugh এবং তার দল এর নাম দেন প্লুটো। এক রোমান গডের নামানুসারে প্লুটো নামটি প্রস্তাব করেছিল ইংল্যান্ডের ১১ বছর বয়সী এক মেয়ে।

তবে অ্যাস্ট্রোনমারদের প্লুটো সম্পর্কে কোনো বিস্তারিত ধারণা ছিল না ১৯৭৮ পর্যন্ত। ১৯৭৮ সালে প্লুটোর প্রথম (এবং সর্ববৃহৎ) উপগ্রহ আবিষ্কৃত হয়। এর নাম রাখা হয় Charon. এর ভর পরিমাপ করা হয় পৃথিবীর .21 শতাংশ। এই ভর এবং Charon-এর গতিপথের সাহায্যে প্লুটোর আকার সম্পর্কে একটি ধারণা করা হয়। বর্তমানে সবচেয়ে নিখুত হিসেব অনুযায়ী প্লুটোর ব্যাসার্ধ হল প্রায় ১১৮৫ কিলোমিটার। যদিও প্লুটো আকারে খুবই ছোট, এটি নেপচুনের অরবিটের পর সবচেয়ে বড় বস্তু হিসেবেই বিবেচিত হত।

pluto_attributes

শেষ কয়েক দশকে আবিষ্কৃত হতে থাকে আরও শক্তিশালী মহাকাশ গবেষণা যন্ত্র এবং পাল্টে যেতে থাকে সৌর জগত সম্পর্কে ধারণাও। এবং সেই সাথে বুঝা যায় যে, অন্যান্য গ্রহগুলোর মত প্লুটো মোটেই Forever Alone হয়ে অবস্থান করছে না, বরং প্লুটো এর উপগ্রহ নিয়ে অবস্থান করছে অসংখ্য একই ধরনের বস্তুর সমুদ্রে, যাদের একসাথে বলা হয় কাইপার বেল্ট (Kuiper Belt)। এট নেপচুনের পর থেকে আরও ৫৫ অ্যাস্ট্রোনমিকাল ইউনিট (১ অ্যাস্ট্রোনমিকাল ইউনিট = সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব) পর্যন্ত বিস্তৃত।  কুইপার বেল্টে প্লুটোর মতই অন্তত ৭০০০০ বস্তু রয়েছে।

এ কাইপার বেল্টে আরও অনেক বস্তু আবিষ্কৃত হতে থাকে, এবং অ্যাস্ট্রোনমাররা ধারণা করেন, প্লুটোর চেয়ে বড় বস্তুও হয়তো এখানে আছে। এবং ২০০৫ সালে মাইক ব্রাউন এবং তার টিম প্লুটোর চেয়েও দূরে একটি বস্তু আবিষ্কার করেন, তাঁদের ধারণা অনুযায়ী যার আকার ছিল প্লুটোর সমান কিংবা তার চেয়েও বড়। এর নাম অফিসিয়ালি দেওয়া হয়েছিল UB313, যার নাম পরে হয় Eris. পরবর্তীতে এর ব্যাসার্ধ ধারনা করা হয় ১১০০ থেকে ১৭০০ কিলোমিটারের মধ্যে। এবং ধারণা করা হয় এর ভর প্লুটো অপেক্ষা প্রায় ২৫ শতাংশ বেশি।

১৯৩০ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত প্লুটো একটি গ্রহ বলেই বিবেচিত হত। ২০০৬-এ এসে প্লুটো সম্পর্কে নতুন কিছুই আবিষ্কার হয়নি। বরং বদলে যায় গ্রহের সংজ্ঞা! নিন্দুকেরা বলে, প্লুটোকে সরাতেই এই ষড়যন্ত্র। [শেষ কথাটি আব্রাহাম লিংকনের “Tamim kala para na” উক্তির সমান বিশ্বাসযোগ্য! 😀 ]

pluto

নতুন নিয়ম অনুযায়ী গ্রহ হতে হলে অবশ্যই তিনটি শর্ত পূরণ করতে হবেঃ

  • এটিকে সূর্যকে কেন্দ্র করে একটি অরবিটে ঘুরতে হবে – প্লুটো এই শর্ত পূরণ করে
  • এর নিজেকে গোলাকার আকৃতি দানের মত যথেষ্ট গ্র্যাভিটি থাকতে হবে – তাও ঠিক আছে!
  • এটা এর আশপাশের সবকিছু “পরিষ্কার” করে ফেলবে, অর্থাৎ এর গ্র্যাভিটির কারণের আশপাশে অন্য কোনো বস্তু থাকবে না, কিছু এর পৃষ্ঠে এসে পতিত হবে, বাকিরা এর উপগ্রহে পরিণত হবে – এখানেই সমস্যা!

প্লুটোর চারপাশের বস্তুগুলোর তুলনায় এর ভর মাত্র ৭ শতাংশ বেশি। যেখানে পৃথিবী এর আশেপাশের বস্তুগুলোর তুলনায় ১.৭ মিলিয়ন গুণ ভারী। একারণে প্লুটো এর আশপাশের বস্তুগুলোকে সরিয়ে দিতে পারে না। এবং এর গ্রহের মর্যাদাও হয় ক্ষুণ্ণ! একারণেই এটি কোনো গ্রহ নয়, কাইপার বেল্টের একটি অংশ মাত্র।

rB9FS36l

তবে প্লুটোকে নিয়ে মন খারাপ করার কিছু নেই। এর নতুন একটি পরিচিতি আছে – Dwarf planet! এই বামন গ্রহগুলো এদের অরবিট পুরোপুরি পরিষ্কার করে দিতে পারে নি। যদি পারে, তখনই এরা গ্রহ হিসেবে পরিচিত হবে!

আপাতত কেবল পাঁচটি বামন গ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে – Ceres, Makemake, Haumea and Eris. এদের মধ্যে Ceres-এর অবস্থান মঙ্গল এবং বৃহস্পতির মাঝের অ্যাস্টেরইড বেল্টের মধ্যে। আর বাকিগুলোর অবস্থান প্লুটোর মতই নেপচুনের অরবিটের আরও পরে। তবে বিজ্ঞানীরা এধরণের আরও বামন গ্রহ খুঁজে পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।

সৌরজগতের বস্তুগুলোকে যে তিন ভাগে ভাগ করা হয়ঃ

  • Planets: Mercury, Venus, Earth, Mars, Jupiter, Saturn, Uranus, Neptune
  • Dwarf planets: Pluto, Ceres, Makemake, Haumea and Eris
  • Small solar-system bodies: Everything else, including asteroids and comets

প্লুটো সম্পর্কে কিছু তথ্যঃ

  • প্লুটো আকারে চাঁদের চেয়েও ছোট। চাঁদের ব্যাসার্ধ ১৭৩৭ কিলোমিটার।
  • সূর্যের চারপাশে একবার ঘুরতে প্লুটোর লাগে ২৪৮ বছর। আবিষ্কারের পর থেকে এটি এখনো একবার পুরো অরবিট ঘুরে আসতে পারে নি!
  • প্লুটো এতই দূরে যে, সেখানে সূর্যের আলো পৌছতে সময় লাগে পাঁচ বছর। অন্য দিকে পৃথিবীতে সূর্যের আলো আসতে সময় লাগে আট মিনিট!
  • অন্য সব গ্রহের অরবিট একই সমতলে থাকলেও প্লুটো সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরে ১৭ ডিগ্রি কোণে। এছাড়াও, এর অরবিট কিছুটা ব্যতিক্রমধর্মী এবং এটি নির্দিষ্ট সময়ে নেপচুনের অরবিটকেও ওভারল্যাপ করে। এমনকি ১৯৭৯ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত সূর্য থেকে প্লুটোর দূরত্ব নেপচুন অপেক্ষাও কম ছিল!

plutos-orbitorbit

  • প্লুটোর আরও চারটি উপগ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছেঃ Styx, Nix, Kerberos, Hydra

enhanced-10867-1436960973-1

এই ভিডিওটি দেখতে পারেন!

প্লুটোর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ এই লেখাটি পড়ার জন্য! 😀

CJ6TJ3AUYAAfKdv

রেফারেন্সঃ

(১) কলোরাডো ল্যাবরেটরি

(২) ইউনিভার্স টূডে

(৩) ওয়ান্ডারোপলিস

(৪) How Stuff Works

(৫) Aerospace Web

(৬) কার্বাল স্পেস প্রোগ্রাম

Muntasir Wahed

Muntasir Wahed

System Administrator at স্বশিক্ষা.com
Jack of all trades, master of none.
Muntasir Wahed
Muntasir Wahed