ধারকত্বঃ

নবম দশম শ্রেণীর চলতড়িৎ চ্যাপ্টারটায় একটা ছোট্ট অনুচ্ছেদ দেয়া Capacitor ( ধারক ) নামে। বিস্তারিত কোনকিছু আলোচনা নবম দশম শ্রেণীতে করা নেই। তবে ইন্টারমিডিয়েট লেভেলে এসে এই ক্যাপাসিটর নিয়ে মোটামুটি বিস্তারিতই ধারণা দেয়া আছে। আমার যেহেতু তড়িৎ বিষয়ক অধ্যায়গুলো নিয়ে লিখার কথা,তাই তড়িৎগতির তড়িৎ টপিকটির পাশাপাশি আজ আমি ধারকত্ব নিয়েও লিখা শুরু করলাম। আশা করি,খুবই সহজ গাণিতিক সমস্যা নিয়ে সাজানো আমাদের বইয়ের এই টপিকটির মূল ঘটনাটা কি সেটাই আমাদর এই লিখার মূল উপপাদ্য হবে।

ধারক কি?:

ধারক কে আমরা ক্ষণস্থায়ী ব্যাটারির সাথে তুলনা করতে পারি। এর কাজ হচ্ছে চার্জ বা আধান ধরে রাখা। একটি ব্যাটারি ( কোষগুচ্ছ ) দিয়ে যদি আমরা দুইটি পরিবাহককে এমনভাবে যুক্ত করে রাখতে পারি,যেন তাদের মধ্যে কোনো প্রকার সংযোগ না থাকে,তাহলে এই ব্যবস্থাটিকেই আমরা একটি ধারক বলে ফেলতে পারবো। একটু ছবির মাধ্যমে দেখে আসতে হবে। ব্যাপারটি সহজ,কিন্তু প্রাথমিক কিছু ধারণাগত ভুল থেকেই যায়!

capacitor

একটি ধারক ব্যবস্থা

চিত্রে দুইটি পাত দেখা যাচ্ছে,যেগুলো পরস্পরের সাথে সংযুক্ত ”না” , কিন্তু তারা ব্যাটারি ( কোষগুচ্ছ ) এর সাথে সংযুক্ত আছে,এবং ব্যাটারির বিপরীত প্রান্তগুলোর সাথেই সংযুক্ত আছে। মাথায় রাখতে হবে,পাত দুটোকে অবশ্যই তড়িৎ পরিবাহক হতে হবে! অন্যথায় এরা চার্জ জমা-ই বা কিভাবে করবে? 😀

আচ্ছা,এবার ব্যাটারির ধনাত্মক প্রান্ত ( Positive Pole) টির সাথে যেই পাতটি সংযুক্ত আছে,সেই পাতে বিদ্যমান ইলেকট্রনগুলো ( যা নেগেটিভলি চার্জড! ) ব্যাটারির ধনাত্মক প্রান্ত কর্তৃক স্বভাবগত কারনে আকৃষ্ট হবে। এতে পাতটি ধনাত্মক চার্জে চার্জিত হয়ে যাবে! সেইম ব্যাপারটি অপর পাতের ক্ষেত্রেও ঘটবে। কিন্তু এই ভুলটি করো না তোমরা,ধনাত্মক চার্জ বা প্রোটন যাকে আমরা বলি,সে কিন্তু নড়াচড়া করতে পারেনা! এরা নিউক্লিয়াসের ভিতর দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ থাকে নিউট্রনের সাথে। ইলেকট্রনগুলো মুক্ত ভাবে ঘুরতে থাকে। এই ইলেকট্রন যা নেগেটিভলি চার্জড,এর সংখ্যার তারতম্যের ভিত্তিতেই আমরা বলি যে একটি বস্তু ধনাত্মক/ঋণাত্মক চার্জে চার্জিত। যেমন ধরা যাকঃ

একটি বস্তুতে ইলেকট্রন আছে ৫ টি,প্রোটন আছে ৫ টি। তাহলে বস্তুটি Electrically Neutral ( নিরপেক্ষ )

একটি বস্তুতে ইলেকট্রন আছে ৫ টি,প্রোটন আছে ৪ টি। তাহলে বস্তুটি Negatively Charged ( ঋণাত্মক চার্জে চার্জিত )

একটি বস্তুতে ইলেকট্রন আছে ৪ টি,প্রোটন আছে ৫ টি। তাহলে বস্তুটি Positively Charged ( ধনাত্মক চার্জে চার্জিত )

আনুপাতিক ব্যাপার স্যাপার আর কি।

যেখানে ছিলাম…এইভাবে ধনাত্মক ঋণাত্মক চার্জের স্থানান্তরের মাধ্যমে,একটা সময় আমাদের সেই ব্যাটারীটির চার্জও শেষ হয়ে যায়। :/ খুব স্বাভাবিক ব্যাপার এটা,হওয়ার ই কথা,একটি ব্যাটারী তো অসীম সময় পর্যন্ত কাজ ও করতে পারবেনা! :/ ব্যাটারির চার্জ শেষ হয়ে গেলে পাতদুটো তে সমান পরিমাণের বিপরীত চার্জের সঞ্চার হবে। কেনই বা সমান পরিমাণে বিপরীত চার্জের সঞ্চার হচ্ছে? ব্যাপারটি খুবই সহজ। চার্জ এমনভাবেই জমা হয় যেন পাতদুটোকে কোনো তার বা কোনোকিছুর মাধ্যমে সংযুক্ত করে দিলে তারা আবার আগের অবস্থায় চলে আসে!
আগের অবস্থা কিন্তু ”চার্জ নিরপেক্ষ” ছিলো। খেয়াল করো,ধনাত্মক চার্জে চার্জিত পাতটিকে জমা চার্জের পরিমাণ যদি +Q হয়,আর ঋণাত্মক চার্জে চার্জিত পাতটিকে জমা চার্জের পরিমাণ যদি -Q হয়,তাহলে এদের সংযুক্ত করে দিলে তড়িৎ প্রবাহের মাধ্যমে নেট চার্জের পরিমাণ কিন্তু +Q-Q = 0 হয়ে যাবে,যা নির্দেশ করে পাত দুইটির ”চার্জ নিরপেক্ষ” অবস্থা! 😀

আমরা আগেই সংযুক্ত করে না দিই,সংযুক্ত করে দিলে ধারকত্ব ব্যাপারটিই উধাও হয়ে যাবে। একটি ছবি দেখে আসি আবার,আগের ছবিটাই একটু জুম করে দেখবোঃ

1111

খেয়াল করে যদি দেখি, বিপরীত ধর্মী এই চার্জ জমা হওয়ার কারণে স্বভাবগত কারণেই পাতদুটির মাঝে একটি তড়িৎ ক্ষেত্রের সৃষ্টি হবে। কারণ বিপরীত ধর্মী চার্জের জন্য কুলম্ব বল F এর উদ্ভব হচ্ছে এখানে। আরেকটা ব্যাপার,আমরা যদি এই পাতদু’টির মাঝে একটি প্রোটন ( আলাদা ভাবে খুলে এনে পরমাণু থেকে 8| ) কিংবা একটি ইলেকট্রনকে এনে ছেড়ে দিই,তারা এক পাশ থেকে চলতে চলতে আরেক পাশের পাতে গিয়ে জমা হয়ে যাবে। এটিই তো তড়িৎ প্রবাহ! 😀 তড়িৎ প্রবাহ যেহেতু হচ্ছে,তাই এই চলার পথ বরাবর নিশ্চয়ই তড়িৎ বলরেখাও আছে! তাই ধরাই যায়,তড়িৎ ক্ষেত্রের উপস্থিতিও এখানে অপরিহার্য! 🙂

ধারক মানে যে ”ধরে রাখতে পারে”। এখানে ধরে রাখতে হবে ” চার্জ বা আধান ”। এই দুই পাতের মাঝে একটি বিভব পার্থক্য ও সৃষ্টি হয়। যার দরূন এটি ধারক হিসেবে পরবর্তীতে চার্জ ডিস্ট্রিবিউট করে দিতে পারে। মনে রাখতে হবে,এটি ব্যাটারীর মতোই,তবে এটি খুব স্বল্প সময়ের জন্য তড়িৎ প্রবাহের সৃষ্টি করবে। আমরা এই আলোচনার শেষে কিছু ধারকের ছবি দেখবো।

একক বিভব পার্থক্যে সঞ্চিত চার্জের পরিমাণকেই ”ধারকত্ব” হিসেবে নাম দেয়া হয়। ধারকত্ব ব্যাপারটি থেকে ধারকটির চার্জ ধারণ ক্ষমতা সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যায়! যার ধারকত্বের মান যত বেশি,সে তত বেশি পরিমাণ চার্জ জমা করতে পারবে। ঐকিক নিয়মের হিসেব থেকেই ধারকত্বের সমীকরণটি বের করা যায়ঃ

 C= Q/V—–(1)

C = ব্যবস্থাটির ধারকত্ব বা Capacitance.
Q = চার্জের পরিমাণ।
V = দুই পাতের মধ্যবর্তী বিভব পার্থক্য।

একটু অন্যভাবে এইবার C এর আরেকটি বহুল প্রচলিত সমীকরণ কে বের করে নিয়ে আসা যাক। আমরা জানি,

V=Er

যেখানে V,E এবং r হচ্ছে যথাক্রমে বিভব পার্থক্য,তড়িৎ ক্ষেত্রের তীব্রতা এবং পাতদ্বয়ের মধ্যবর্তী দূরত্ব।

1 নং সমীকরণে এই V এর মানটি বসিয়ে দিইঃ

C=Q/Er

=> E=Q/Cr——(2)

এবার আরেকটি পরিচিত সমীকরণঃ

E= ( 1/4*pi*epsilon not ) * Q/r*r

এবার E এর মান 2 নং এ বসিয়ে দিইঃ

( 1/4*pi*epsilon not ) * Q/r*r = Q/Cr

=>( 1/4*pi*epsilon not*r) = 1/C ( Q/r দ্বারা  ভাগ করে )

=> C = 4*pi*epsilon not*r

দুঃখিত আমি একটু লিখে লিখেই প্রমাণটা করলাম। তো চেনা যাচ্ছে সমীকরণটা তাইনা? 😀 ধারকত্ব বের করার এটি আরেকটি সমীকরণ,যা গাণিতিক অনেক ধরণের সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে দারূণভাবে কাজে লাগে। এটি মূলতঃ গোলাকার পরিবাহীর ধারকত্ব বের করার কাজে ব্যবহার করা হয়,যেখানে r হচ্ছে গোলাকার পরিবাহীর ব্যাসার্ধ! 🙂

আমাদের কম্পিউটারের ভিতর হাজারটা ক্যাপাসিটর আছে। নানান রকম ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী ক্যাপাসিটরে ভরা থাকে। আমরা দেখলেও এই মহান বস্তুটিকে খুব সহজেই চিনতে পারি। কিন্তু এটিই যে Capacitor,তা ১১-১২ শ্রেণিতে আসার আগ পর্যন্ত অনেকেই জানেনা! :3 তাই কিছু ছবি দেখে আসিঃ

capacitor

ceramic-capacitors

cp4700-16v

খেয়াল করে দেখো,ছোট ছোট করে এদের গায়ে C এবং V এর ভ্যালু লিখা আছে। এই দু’টো তথ্য থেকে সহজেই কিন্তু বলে ফেলা যায় এরা কি পরিমাণ চার্জ সঞ্চয় করে পরবর্তীতে সাপ্লাই দিতে পারবে! কি,তোমরা পারবে? পারলে উত্তরগুলো কমেন্ট সেকশনে লিখতে ভুল করো না। 🙂

কয়েকটি ধারককে একসাথে বিভিন্নভাবে সংযুক্ত করে ধারকের সমবায় তৈরি করা যায়,ঠিক রোধের শ্রেণী বা সমান্তরাল সমবায়ের মতো। এসব নিয়ে জানা যাবে অন্য কোনোদিন,আজ এই পর্যন্তই।