গত পর্বের শেষের দিকে গোলীয় দর্পণ ব্যাপারটা নিয়ে শুরুটা করেছিলাম মনে হয়। আচ্ছা,ভুলে গেলেও অসুবিধা নেই,”গোলীয় দর্পণ” শব্দটা মাথায় থাকলেই হবে। 😀
বাইরে পারা লাগানো কাঁচের গোলকের একটা অংশ যদি আমরা কেটে নিই,তাহলে পাবো অবতল দর্পণ,আর ভিতরে পারা লাগানো কাঁচের গোলকের একটা অংশ যদি আমরা কেটে নিই,তাহলে সেটা হচ্ছে উত্তল দর্পণ।
আশা করি এতটুকু বুঝতে কারো অসুবিধা হওয়ার কথা না,তাও একটু ছবির মাধ্যমে পরিচিত হয়ে আসি।
( এগুলো হচ্ছে অবতল দর্পণ )
( আর এগুলো হচ্ছে উত্তল দর্পণ )
একটা গোলীয় দর্পণ আসলে যেই গোলকের অংশ ছিলো,সেই গোলকের কেন্দ্র থেকে দর্পণ এর মেরু পর্যন্ত দূরত্ব
কে আমরা বলবো সেই দর্পণের বক্রতার ব্যাসার্ধ। বক্রতার ব্যাসার্ধের অর্ধেক হচ্ছে প্রধান ফোকাস। প্রধান ফোকাস
কি,তা আমরা পরে আরো বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে বুঝে নিবো। আপাতত এতটুকু মাথায় রাখি,যে :
বক্রতার ব্যাসার্ধ = ২ X ফোকাস দূরত্ব
এটাও একটু চিত্রের মাধ্যমে দেখে আসি:
( এইযে,এইটা হচ্ছে অবতল দর্পণের জন্য। বক্রতার কেন্দ্র থেকে মেরুবিন্দু পর্যন্ত দূরত্বটা হচ্ছে বক্রতার ব্যাসার্ধ। উত্তলের জন্য কেমন হবে একটু চিন্তা করো তো? না পারলে কমেন্ট করো 🙂 )
গোলীয় দর্পণে রশ্মিচিত্র অংকনঃ
ভয়ের কিছু নাই ভাইয়া আপুরা,ধরো আলো উৎস থেকে যাত্রা শুরু করে দর্পণ এর স্বচ্ছ গায়ে প্রতিফলিত হয়ে
উল্টো পাশে ফিরে আসছে। এখন এই যে আলো একটা পথ ধরে এগিয়ে যাচ্ছে,এটাকেই আমরা দাগ টেনে টেনে
দেখাবো,রেখা টেনে দেখাবো কোনদিক থেকে কোনদিকে যাচ্ছে। গোলীয় দর্পণের ক্ষেত্রে কিছু কিছু বিশেষ
পথ ধরে আলো যাতায়াত করলে,সেগুলো কিছু ”বিশেষ” পথ ধরেই প্রতিফলিত হয়। 🙂
উত্তল এবং অবতল দর্পণের ক্ষেত্রে এমন কিছু বিশেষ ক্ষেত্র দেখে আসিঃ
১) আলো দর্পণের প্রধান অক্ষ বরাবর আপতিত হলে,ঐ পথেই ফিরে আসে। (উত্তল অবতল দুই ক্ষেত্রেই)
২) আলো দর্পণের প্রধান ফোকাস বরাবর আপতিত হলে,প্রতিফলিত হয়ে সেটা প্রধান অক্ষের সমান্তরালে চলে
যায়।
৩) আলো দর্পণের প্রধান অক্ষের সমান্তরালে আপতিত হলে,প্রতিফলিত হয়ে সেটা প্রধান ফোকাস দিয়ে চলে
যায়। ( উত্তল দর্পণের ক্ষেত্রে মনে হয় যেন আলো প্রধান ফোকাস থেকেই আসতেছে। 😀 )
৪) আরেকটা কেইস হচ্ছে,আলো যদি তুমি বক্রতার কেন্দ্র C বরাবর পাঠায় দাও,তাহলে সেটা ওই পথেই U-turn মারবে।
আমি এটা নিয়ে আর বেশি কথা বললাম না। কারণ বইয়ে এসব নিয়ে অনেক আলোচনা করা হয়ে গেছে এবং
তোমরা অনেকেই এগুলা আগে থেকেই জানো। তাও ফ্ল্যাশব্যাক দিয়ে দিলাম একটা,আমার আগাতে সুবিধা
হবে।
আচ্ছা,অবতল দর্পণের সামনে একেকটা পজিশনে বস্তু রাখলে একেক রকম বিম্ব পাওয়া যায়,এ ব্যাপার
টা খেয়াল করছো নিশ্চয়ই!! উত্তলের ক্ষেত্রে এমনটা হয়না,বস্তুর যেকোনো পজিশনের জন্যে বিম্বের অবস্থান একটা ফিক্সড রেঞ্জের মধ্যেই থাকে। খেয়াল না করে থাকলে ক্লাস নাইন-টেন,ইন্টারের একটা ফিজিক্স বই হাতে নিয়ে খুলে
দেখলেই হবে,অথবা নেট তো আছেই। বুঝতে হবেনা এখন কিছু,জাস্ট দেখো।
আমাদের অনেকেই এই ”একেক বস্তুর জন্য একেক জায়গায় বিম্ব” আঁকতে গিয়ে বা মনে রাখতে গিয়ে দারুণ
ঝামেলায় পড়ি। 🙁 মনেই থাকে না বস্তু কোথায় থাকলে বিম্ব কোথায় হবে,বিম্বের সাইজ কেমন হবে,বিম্ব কি
বাস্তব(সদ) হবে নাকি অবাস্তব(অসদ) হবে! আজ এই সব ধরণের সমস্যা আজীবনের জন্য দূর হবে! 😀
আজ তোমাদের শিখাবো ”৮- এর নিয়ম”। এই নিয়ম জানা থাকলে তোমার আর আলোর প্রতিফলন চ্যাপ্টারটা
নিয়ে কিছু ভাবতে হবেনা। কথা না বাড়িয়ে কাজে চলে যাই চলোঃ
নিচে একটা ছবি আছে,মন দিয়ে দেখোঃ
আমি এখানে কি করেছি বলি। ওই দেখো,অবতল দর্পণটার মেরুবিন্দু থেকে প্রধান ফোকাস অবধি সম্পূর্ণ
জায়গাটাকে আমি ”১” দ্বারা মার্ক করেছি।
প্রধান ফোকাস বিন্দুটাকে আমি ”২” ধরলাম।
প্রধান ফোকাস ও বক্রতার কেন্দ্রের মাঝের পুরোটা অঞ্চল কে আমি ধরলাম ”৩”।
বক্রতার কেন্দ্র কে আমি ধরলাম ”৪”।
অসীম ও বক্রতার কেন্দের মাঝের পুরোটা অঞ্চল কে আমি ধরলাম ”৫”।
আর অসীম অঞ্চল কে আমি ধরলাম ”৬”। 😀
ও হ্যাঁ, ”৭” নম্বর জায়গাটা হচ্ছে অবতল দর্পণের পিছনের পুরোটা জায়গা!
আমাদের আসল সূত্রটা হচ্ছেঃ
৮ – (বস্তুর অবস্থান) = বিম্বের অবস্থান
একটু এপ্লাই করলেই আসল মজা বুঝে যাবা। ধরো বস্তু আছে এখন প্রধান ফোকাসে,তার মানে ”২” নং অঞ্চলে।
তাহলে বিম্বের অবস্থান হবে কোথায়?
৮-২=৬
বিম্বের অবস্থান হবে ”৬” নং জায়গায়। দেখো তো উপরের ছবিতে ”৬” নং জায়গাটা কোথায়? অসীমে না? 😀
আবার দেখো,ধরো বস্তু আছে বক্রতার কেন্দ্র এবং প্রধান ফোকাসের মাঝের কোনো একটা জায়গায়,মানে ”৩নং”
জায়গায়। তাহলে বিম্বের অবস্থান কোথায় হবে?
৮-৩=৫
বিম্বের অবস্থান হবে ”৫” নং জায়গায়। দেখো তো উপরের ছবিতে ”৫” নং জায়গাটা কোথায়?
অসীম এবং বক্রতার কেন্দ্রের মাঝে না? 😀
এভাবে তুমি অবতল দর্পণের সামনে যেকোনো অবস্থানে থাকা বস্তুর বিম্বের অবস্থান বের করতে পারবে।
আচ্ছা ভালো কথা,শুধু অবস্থান না,আকৃতি ও বের করা যাবে! 😀
আকৃতি=বিম্বের অবস্থান / বস্তুর অবস্থান
ধরো,বস্তু আছে প্রধান ফোকাসে মানে ”২” নং জায়গায়। বিম্ব হবে তাহলে ৮-২=৬ অর্থাৎ ”৬” নং জায়গায় মানে,অসীমে। এখন বিম্বের আকৃতি হবেঃ
আকৃতি = ৬ / ২ = ৩ , যা কিনা ”১” এর চেয়ে বড়!
যেহেতু বিম্বের অবস্থান আর বস্তুর অবস্থানের অনুপাত এখানে ১ এর চেয়ে বড় আসতেছে,তাই বিম্ব হবে
বিবর্ধিত! 😀 (বাস্তবে অত্যন্ত বিবর্ধিত)
বস্তু ”৪” নং অবস্থানে থাকলে,বিম্ব হবে ৮-৪=৪ নং জায়গায়! তাহলে আকৃতি হবে ৪/৪ = ১ । 😀
এর মানে কি? এর মানে হচ্ছে,বিম্ব আর বস্তুর আকৃতি সমান! 😀
আর সদ হবে কি অসদ হবে,তা মনে রাখতে বেশি ঝামেলা পোহাতে হওয়ার কথা না। বস্তু ”১” নং জায়গা ব্যতীত যেকোনো জায়গায় থাকলেই বিম্ব হবে সদ ও উল্টো! এবং বস্তু যদি ”১” নং জায়গায় থাকে,তাহলে বিম্ব হবে অসদ ও সোজা (কিছু ক্ষেত্রে সদ ও উল্টো ও হতে পারে। আর শোনো,সদ হলে উল্টো হওয়া মাস্ট গোলীয় দর্পণের ক্ষেত্রে,আচ্ছা? এটা গুলিয়ো না)
আমাদের সাথেই থাকো। আলোর প্রতিফলন এখনো শেষ হয়নি! 🙂
৮ এর নিয়মটা বেশ ভাল লাগল……তবে আরেকটু গভিরে গেলে ভাল হত
কিরকম গভীর?
vaia আমি দশম শ্রেনিতে পড়ি। এমন র কিছু থকলে এক টু পোস্ট করবেন।আমি উপক্রিত হব।।।please
অসংখ্যা thanx
ভাল পোস্ট 🙂
ভাল লাগল
Thank you so much.
অসাধারন!
৮ বছররে যা বুঝতে পারিনি, আজ মাত্র ৩ মিনিটে তা খুব সুন্দর ভাবে বুঝলাম।
আমার অন্তরের অন্তস্থ থেকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
Thank you so much. Keep in touch. 🙂
Dear,
উত্তল দর্পণের ক্ষেত্রে ৮ এর নিয়ম ও আকৃতি বর্ণনা করলে ভাল হয়
এটার প্রমান লাগত,
আপাতন কোণ একই রেখে দর্পনকেθ কোনে ঘোরালে প্রতিফলন কোণণ 2θ কোণণে ঘোরে
অসাধারন , উত্তল দর্পনের ক্ষেত্রে কি হবে?
উত্তল দর্পণে বিম্ব সর্বদা একই দিকে গঠিত হয়। রিলেটিভ পজিশনটাও সেইম থাকে। তাই এর ক্ষেত্রে ৮ এর নিয়ম দরকার নেই।
উত্তল দর্পণে বিম্ব সর্বদা একই দিকে গঠিত হয়। রিলেটিভ পজিশনটাও সেইম থাকে। তাই এর ক্ষেত্রে ৮ এর নিয়ম দরকার নেই।
উত্তল লেন্সের ক্ষেত্রে কি এরকম কোন নিয়ম আছে
অসাধারন
দর্পনে হাত উল্টা দেখায় কেন
ভাই একটা বিষয়ের সমাধান চাই। “গাণিতিকভাবে প্রমাণ কর যে, সমতল দর্পনের প্রতিবিম্ব অবাস্তব এবং লক্ষ্যবস্তুর সমান।” দয়া করে এটার সমাধানটা দিবেন? প্লিজ।।