প্রথম পর্বে অনেকটা হুট করেই মেশ এনালাইসিস নিয়ে কথা শুরু করে দিয়েছিলাম। আমার ঐ লিখাটা ছিলো মূলতঃ যারা এইচ.এস.সি কমপ্লিট করে এডমিশনের প্রস্তুতি নিচ্ছো কিংবা যারা কিছু অন্যরকম সার্কিট সল্ভ করতে চাচ্ছো তাদের উদ্দেশ্য করে। যেহেতু এটি একটি ব্যতিক্রমধর্মী ওয়েবসাইট,এবং আমরা হচ্ছি ভার্সিটি পড়ুয়া কিছু ছেলেপেলে,আমাদের কাজটাই হচ্ছে *যতটুকু* সহজে একটা বিষয়কে তোমাদের সামনে উপস্থাপন করা যায়,সেই কাজটা করা। পুঁথিগত বিদ্যার জন্য বই ছাড়া আর কিই বা আছে,আমরা সেইদিকটা থেকে অনেকটা সরে! তাই আজ লিখবো স্থির তড়িৎ নিয়ে।
*আধান* বা *চার্জ* হচ্ছে পদার্থের মধ্যে বিদ্যমান একেবারে মৌলিক কণাগুলোর বৈশিষ্ট্যমূলক যে ধর্ম,সেটা। বৈশিষ্ট্যমূলক বলতে,সেই কণাটার চরিত্র বিশ্লেষণে আধান নামক ব্যাপারটি খুব কাজে দেয়! পরমাণুর নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকে ইলেকট্রন,যার প্রতিটির ভর এক প্রোটনবিশিষ্ট নিউক্লিয়াসের মোট ভরের তুলনায় প্রায় ১৮৩৬ গুণ কম! এই হিসাবটা কিভাবে এলো তা বুঝার আগে একটি চার্ট দেখে আসিঃ
এখন আমরা একটি প্রোটন আর একটি ইলেকট্রনের ভরের অনুপাত নিলেই দেখবো প্রায় ১৮৩৬ এর মতো আসে।
এবার আমাদের কাজ হচ্ছে দুইটি পরমাণু নেয়া,ভিন্ন ভিন্ন পরমাণু নিতে হবে। সবচেয়ে কমন উদাহরণ হিসেবে যাদের নেয়া হয়,তাদেরই নিচ্ছি। একটি ক্লোরিন আর একটি সোডিয়াম পরমাণু নিয়ে আজকের কাজ চালিয়ে দিই!
Na(11) = 2,8,1
Cl(17) = 2,6,7
ইলেকট্রন বিন্যাসটি আমরা দেখতে পাচ্ছি। এবার এদের অ্যাটোমিক ডায়াগ্রামটা কেমন হবে দেখে আসিঃ
একটি ইলেকট্রন ”দান” করে সোডিয়াম এখন একটি ইলেকট্রন কম +1 পজিটিভ চার্জে চার্জিত আছে বলা যায়। একইভাবে,ক্লোরিন সোডিয়াম কর্তৃক ”দান করে দেয়া” ইলেকট্রনটাকে গ্রহণ করে ঋণাত্মক চার্জে চার্জিত হয়ে যায়। আর তার নেট চার্জ হয় -1
খুব সহজভাবেই কি আমরা এবার বলতে পারি না,যে এদের মাঝে এক প্রকার আকর্ষণ বল এবার কাজ করবে? কেননা এরা বিপরীতমুখী সমপরিমাণ নেট চার্জ নিয়ে অবস্থান করছে! সোডিয়াম আর ক্লোরিন এর মাঝে এই আকর্ষণ বলটাকেই আমরা বলি ”স্থির বৈদ্যুতিক আকর্ষণ বল” , যার মান কুলম্বের সূত্র দিয়ে বের করা যায় এবং যার দরূন এই আয়নিক বন্ধনটি টিকে থাকে! 😀
মোটামুটি ছোটখাটো রসায়ন ক্লাসের মাঝ দিয়েই আমরা যা যা শিখে আসলাম,স্থির তড়িৎ এর শুরুটা খুব ভালোভাবেই আমাদের আয়ত্তে নিজের মনের অজান্তেই চলে এসেছে। বিশ্বাস করতেই হবে! ১৭৮৫ সালের দিকে বিখ্যাত ফরাসী বিজ্ঞানী কুলম্ব নানান পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে দু’টি চার্জের মধ্যবর্তী বলের মান বের করার একটি সুত্র আবিষ্কার করেন,যেটি দেখতে অনেকটা এরকমঃ
এখানে F হচ্ছে কুলম্ব বল (এই বলটি দু’টি চার্জের ক্ষেত্রেই);
q1 হচ্ছে প্রথম চার্জের মান;
q2 হচ্ছে দ্বিতীয় চার্জের মান;
d হচ্ছে চার্জ দু’টির মধ্যবর্তী দূরত্ব;
আর k হচ্ছে একটি সমানুপাতিক ধ্রুবক,যার মান 9 x 10^9 Nm^2/C^2 [ k = 1/4*pi*epsilon not) ]
এই সূত্রটির মাধ্যমে সোডিয়াম আর ক্লোরিন পরমাণুর *নিউক্লিয়াসদ্বয়ের* মধ্যবর্তী দূরত্ব জেনে আমরা সহজেই কিন্তু স্থির বৈদ্যুতিক আকর্ষণ বলের মানটি বের করে ফেলতে পারি! 😀
একটি বিষয় এবার মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করো,আমরা যখন স্থির তড়িৎ পড়ার সময় জেনেছিলাম যে ঘর্ষণের ফলে কোনো দু’টি বস্তুর মাঝে কেবল আকর্ষণ বলের-ই উদ্ভব হয়,কেন *শুধুই* আকর্ষণ , বিকর্ষণ কেন নয়,কেউ কি বলতে পারো?
এর কারণটা খুব সহজ! ঘর্ষণের ফলে দু’টি বস্তুই যদি চার্জিত হয়,তাহলে অবশ্যই তাদের মধ্যে আধানের পরিমাণগত একটা ভ্যারিয়েশন অবশ্যই হয়েছে! এবং সেটি কেবল মাত্রই সম্ভব হয় একজনকে ইলেকট্রন ছেড়ে আরেকজনকে দিতে হবে এবং সেই আরেকজন নেগেটিভলি চার্জড হবে,নতুবা উলটো ব্যাপারটা। একইসাথে দুইজনই ইলেক্ট্রন ছেড়ে দিচ্ছে বা গ্রহণ করছে,দু’টি নিরপেক্ষ পরমাণুর ক্ষেত্রে তা কখনোই সম্ভব নয়!
এবং… এই বিপরীতধর্মী চার্জের অবশ্যম্ভাবী উদ্ভবের জন্যই শুধু আকর্ষণটাই সম্ভব,বিকর্ষণটা নয়।
আচ্ছা,আমরা যে উপরে কুলম্বের সূত্রটি নিয়ে কথা বলেছিলাম,সেটি কিন্তু শুধুমাত্র ”শুন্য মাধ্যমের ক্ষেত্রেই” ওমন! যদি মাধ্যমটি শুন্য না হয়ে অন্য কোনো মাধ্যম হতো,তাহলে শুধুমাত্র ঐ ধ্রুবকটির মান পালটে যেত। খেয়াল করো, ধ্রুবকটি হচ্ছেঃ
প্রায় 9 ই ধরা যায়। মাধ্যমের পরিবর্তনে শুধুমাত্র ( 4*pi*epsilon not) এর সাথে ওই মাধ্যমের পরাবৈদ্যুতিক ধ্রুবকটাকে গুণ করে দিতে হয়। তাহলেই কাজ শেষ।
মোটামুটি স্থিরতড়িৎ এর মেইন ব্যাসিক এগুলো। এসব থেকে আস্তে আস্তে আরো গভীরে প্রবেশ করা যায়। আবেশী প্রক্রিয়াটিও অনেক সুন্দর,এর মাধ্যমে কোনো স্পর্শ ছাড়াই চমৎকার ভাবে একাধিক বস্তুকে আহিত করে ফেলা যায়!
ঘর্ষণে তড়িৎগ্রস্থ হওয়ার ব্যাপারে দু’টি শব্দ মনে রাখলে কাজে দেয় প্রচুর।
১) ইরিঃ আমরা যদি ”ই”বোনাইট দন্ডকে ফ্লানেলের সাথে ঘষি,তাহলে ”ই”বোনাইট দণ্ডে ”ঋ”ণাত্মক চার্জের উদ্ভব হবে।
২) কাধঃ আমরা যদি ”কাঁ”চ দন্ডকে রেশমের সাথে ঘষি,তাহলে ”কাঁ”চদণ্ডে ”ধ”ণাত্মক চার্জের উদ্ভব হবে।
ব্যস,এই দু’টো মনে রাখলেই অনেক অব্জেক্টিভ এর সহজ সমাধান মাথায় চলে আসার কথা। :v
ধারণার পর্ব ছিলো এটি। আস্তে আস্তে আমরা স্থিরতড়িৎ এর ভিতরে প্রবেশ করবো। সেখান থেকে কিছু গাণিতিক সমস্যা সমাধান করে সূত্রগুলো নিজেদের মধ্য কতোটা সম্পর্কযুক্ত,সেগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বের করবো। শেষের আগে কিছু কথা বলে যাই,সবসময় মাথায় রাখবেঃ
১) চার্জের সর্বনিম্ন মান হচ্ছে -1.6 x 10^-19 C . এই পরিমাণ চার্জ সর্বনিম্ন হিসেবে কোনো বস্তুতে অবস্থান করতে পারবে। এর চেয়ে কম কোনোভাবেই সম্বব নয়! কারন তখন তার মানে দাঁড়াবে ইলেকট্রন এর ভঙ্গুর কোনো অংশ কোনো বস্তুতে অবশিষ্ট আছে এবং সেটি স্বাভাবিকভাবে স্থায়ী আছে,যেটা অসম্ভব।
২) দু’টি বস্তুর চার্জের পরিমাণ ৫ এবং ১০০ কুলম্ব এবং এরা পরস্পর থেকে ১০ মিটার দূরত্বে অবস্থান করছে। মনে রাখতে হবে,৫ কুলম্ব আধান বিশিষ্ট বস্তুটি এখন যেই পরিমাণ বল অনুভব করবে,১০০ কুলম্ব আধানবিশিষ্ট বস্তুটিও ঠিক সমান পরিমাণ বল অনুভব করবে।
৩) ”চেয়ে যদি দেখতে,কত কিছু বুঝতে” – কুলম্বের সূত্র আর নিউটনের মহাকর্ষ সূত্রের মাঝে কত চমৎকার একটি মিল আছে!! সূত্র দু’টিকে পাশাপাশি রেখে বলতে পারবে কোন বলটির মান বেশি হবে এবং কোন বলটির মান কম?
৪) এবার প্রথম থেকে আরেকবার শান্তমনে পড়ে ফেলো। 😀
আজ এতোটুকুই…
kuv balo lagasa bae. samne ro erkm pust cai
thanks bae.
ভাল তো…আরো বড় পুস্ট চাই সামনে…
Do we need free electrons in partical for creating statical electricity????