এই ডিএসএলআর-স্মার্টফোনের যুগে “ছবি তোলা” এই ব্যাপারটা আহামরি কিছু মনে হয়না। এখন এটা প্রায় ভাত খাওয়া বা হাঁচি দেয়ার মতই সাধারন ঘটনা। হাঁচি দিয়ে কেউ যেমন কখনো ভাবে না, “আল্লাহ একটা হাঁচি! কি আশ্চর্য!” তেমনি ক্যামেরায় ছবি তুলেও এখন কেউ অবাক হয়ে যায়না সময়কে থামিয়ে দিয়ে একটা মুহূর্তকে কি সহজেই ফ্রেমে আটকে রাখা গেলো।
কিন্তু ক্যামেরায় “ছবি ওঠা”র (আচ্ছা ছবি “ওঠে” কেমনে? 😕 ) ব্যাপারটা কিন্তু এতটা সহজ না, পেছনের প্রযুক্তিটুকু অনেকটাই চমকপ্রদ।


ছবি বা ফটোগ্রাফ জিনিসটা আসলে কি?
আমরা যা দেখি তা মূলত আমাদের চোখে সৃষ্টি হওয়া একটা অনুভূতি। চোখের ভেতরে রেটিনায় রড এবং কোন নামের কিছু কোষ থাকে, এই কোষ গুলো ফটো-সেনসিটিভ, যার অর্থ কোষগুলোতে আলো পড়লে তারা আলোর প্রতি রিয়েক্ট করে। এই রিএকশনটা ইলেকট্রিক সিগন্যাল হিসেবে আমাদের মস্তিষ্কে যায় আর আমরা ভালবেসে এই পুরো ব্যাপারটাকে বলি “দেখা”।
একজন মানুষ চোখে দেখতে পায়, একটা কই মাছও তার চোখ দিয়ে দেখতে পায়, (যদিও কই মাছের চোখ মানুষের মত না জন্য সে যা দেখে তা আমাদের থেকে একেবারেই অন্যরকম) কিন্তু একটা ঘন্টার চোখ নাই তাই সে কিছু দেখতে পারে না।

কাজেই আমরা যা দেখি তা যদি একটা ক্যামেরাকে দিয়ে দেখাতে চাই, মানে ছবি তুলতে চাই, তাহলে আমাদের ক্যামেরাটাকে দেখার জন্য একটা চোখ দেয়া প্রয়োজন।

Camera Eye

না এভাবে না। 😛

আসলে ক্যামেরার পুরো বডিটাই একটা চোখের মত কাজ করে। ক্যামেরার লেন্স আলো ফোকাস করে, এপারচার প্লেট চোখের আইরিস এর কাজ করে। শাটার অনেকটা চোখের পর্দার মতো, আর রেটিনার কাজ করে ফিল্ম বা (ডিজিটাল

camera-diagramক্যামেরায়) সেন্সর।

সুতরাং আমরা মোটামুটি আমাদের চোখের মত কাজ করতে পারে এরকম একটা ডিভাইস পেয়ে গেলাম। 😎 এখন সেই ডিভাইস ব্যবহার করে একটা ছবি সংরক্ষণ করার (ছবি তুলে রাখা আরকি 😐   ) পালা।

ছবি তোলার জন্য আমরা কী করি? ক্যামেরার উপরের দিকে একটা বাটন থাকে ওটাতে চাপ দেই। বাটনটার নাম শাটার বাটন, এই বাটনে যখন চাপ দেয়া হয় তখন শাটার নামক পর্দাটা ফিল্ম/সেন্সরের সামনে থেকে সরে যায় আর ক্যামেরার সামনে থেকে আলো লেন্সের মধ্য দিয়ে ফিল্ম বা সেন্সর যাই থাক ওটার উপর পড়ে।

ফিল্মের ওপরের একধরনের কেমিকেলের প্রলেপ থাকে যেটা আলোর প্রতি সংবেদী। আলোতে এক্সপোজড হলে এই কেমিকেলগুলোতে রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে, আলোর তীব্রতার ওপর নির্ভর করে রাসায়নিক পরিবর্তনের মাত্রা কম বেশি হয়। এই পরিবর্তনের ফলে “ফিল্ম নেগেটিভ” তৈরি হয়, যা পরবর্তীতে ডেভেলপ করে ছবিতে পরিণত করা যায়।

neg_small (1)final_small

ফিল্মে যেরকম কেমিকেল মাধ্যমে আলোর তীব্রতার তথ্য সংরক্ষণ করা হয়, ডিজিটাল ক্যামেরায় সেই কাজটি করা হয় ডিজিটাল সেন্সরের সাহায্যে। ডিজিটাল সেন্সর মূলত অসংখ্য “ফটোরিসেপ্টর” (Photo-receptor) বা “ফটোসাইটস”(photosites)  এর একটি গ্রিড। এই ফটোরিসেপ্টরগুলো আলোর কণা(Photons) কে ইলেক্ট্রিক সিগন্যালে রূপান্তরিত করতে পারে। কোনো ফটোরিসেপ্টরে যত বেশি আলো প্রবেশ করবে তা তত বেশি ভোল্টেজ তৈরি করবে, এবং ঐ ফটোরিসেপ্টরের সংশ্লিষ্ট পিক্সেল (Pixel) তত উজ্জ্বল হবে। এভাবে অসংখ্য ফটোরিসেপ্টর অসংখ্য পিক্সেল কে আলোকিত করে, এবং অসংখ্য পিক্সেল মিলে একত্রে একটি ছবি তৈরি করে।

[ সাইড নোটঃ ছবির রেজল্যুশন মাপার ক্ষেত্রে মেগাপিক্সেল শব্দটি খুব বেশি ব্যবহৃত হয়। মেগাপিক্সেল অর্থ আসলে “এক মিলিওন পিক্সেল”। কোনো একটি ছবিতে মোট পিক্সেল সঙ্খ্যাকে এক মিলিওন দিয়ে ভাগ করলে যা পাওয়া যায় তা-ই ওই ছবির “মেগাপিক্সেল” সংখ্যা।
যেমন একটি ছবির দৈর্ঘ্য বরাবর যদি ৬০০০টা আর প্রস্থ বরাবর যদি ৪০০০টা  পিক্সেল থাকে তাহলে ছবিটির রেজল্যুশন হবে (৪০০০*৬০০০/১০০০০০০)=২৪ মেগাপিক্সেল এর। ]

সুতরাং সকল ডিজিটাল ফটোগ্রাফই মূলত অসংখ্য পিক্সেল এর সমষ্টি। কোনো ছবিকে কম্পিউটারে zoom করতে থাকলেই ব্যাপারটা বোঝা যায়।

pixels

[সাইডনোটঃ আমরা যদিও Photo, Image, আর Picture নিজেদের ইচ্ছা মত ব্যবহার করি কিন্তু আসলে তিনটা এক জিনিস না। Photograph হল যেকোনো রকম ক্যামেরা ব্যবহার করে তোলা ছবি, Picture হল যেকোনো কিছুর ভিজুয়াল রিপ্রেজেন্টেশন। মোট কথা সব ফটোই পিকচার, কিন্তু সব পিকচার ফটো না। আর কোনো পিকচার যখন ডিজিটালি তৈরি করা হয় বা এক বা একাধিক ফটোকে যখন ডিজিটালি এডিট করে উরাধুরা লেভেলের কিছুতে পরিণত করা হয় তখন তাকে বলে Image  😛 ]

ছবির কোয়ালিটি যেরকম সেন্সরের পিক্সেল এর সংখ্যার ওপর নির্ভর করে, তেমনি সেন্সরের আকারের ওপর ও নির্ভর করে। একটা ২০ মেগাপিক্সেল এর ফুল ফ্রেম ক্যামেরা আর একটা ২০ মেগাপিক্সেল এর পয়েন্ট এন্ড শ্যুট ক্যামেরার ছবির কোয়ালিটি একরকম হবে না, কারন ফুল ফ্রেম ক্যামেরার তুলনায় পয়েন্ট এন্ড শ্যুট ক্যামেরার সেন্সরের আকার অনেক ছোট (প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ছবির কোয়ালিটি বা মান শুধু সেন্সর নয়, ক্যামেরার লেন্সের ওপর ও নির্ভর করে)। তাছাড়া একটি বড় সেন্সরে এবং একটি ছোট সেন্সরে সমান পরিমাণ পিক্সেল থাকলে জায়গা সংকুলান করার জন্য ছোট সেন্সরের পিক্সেলগুলোর আকৃতি হতে হবে ছোট ছোট, ফলে তাদের আলোক সংবেদনশীলতা কমে যাবে। সেন্সরের আকার বড় হলে ছবিতে ডিটেইল বেশি পাওয়া যায় এবং ছবিতে নয়েজ এর সৃষ্টি হয় অনেক কম।

সুতরাং আমরা অনেক জল ঘোলা করে ফটোগ্রাফ বলতে কি বোঝায় সেটা মোটামুটি শিখে ফেলেছি।   😀
সামনের পর্বগুলোতে আমরা ক্যামেরায় ফটোগ্রাফ ধারন করা নিয়ে শেখার চেষ্টা করব। আপাতত এই পর্যন্তই। 🙂