আমি চার বছরের বুয়েটে পড়ার অভিজ্ঞতায় একটা বিষয় খুব ভালোমত লক্ষ্য করেছি, এখানে নিয়মিত পড়াশোনা করলে টার্মে GPA ৩.৮ তোলাটা খুব কঠিন নয় কিন্তু তার উপর তুলতে হলে আসলে ভাগ্য লাগে।

 

বুয়েটে যারা নতুন আসে, তাদের অনেকেরই আসলে  প্রথম দিকে খাপ খাওয়াতে একটু কষ্ট করতে হয়। হওয়াটাই স্বাভাবিক। কারণ আমাদের দেশের স্কুল, কলেজগুলোতে আমরা আসলে Pure Science এর সাথে খানিকটা পরিচিত হতে পারলেও,  Applied Science এর সাথে আমাদের পরিচয় তেমন ঘটে না বললেই চলে। আর Engineering বিষয়টাই Applied Science । পদার্থবিজ্ঞানের শেষের ইলেক্ট্রনিক্স অধ্যায় বা রসায়নে বিভিন্ন যৌগের ব্যাবহার বিষয়ক অধ্যায় তো অনেকে বাদই দিয়ে দেয় কারণ পরীক্ষায় তেমন আসে না, আসলেও অন্য প্রশ্ন উত্তরের উপায় থাকে তাই।  এর বেশি আসলে আমাদের বইগুলোতে থাকেও না তাই কারো জানার সুযোগ বা আগ্রহ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। তাই অধিকাংশ ছাত্রই আসলে অনেকটা না জেনে হুজুগে বা “চান্স দিয়েছেন যিনি পাস করাবেন তিনি” এই বিশ্বাস নিয়ে সৃষ্টিকর্তার নামে বুয়েটে ভর্তি হয়ে যায়।  এরপর থেকেই বিভীষিকাটা শুরু হয়, “কি পাপ করেছিলাম আমি যে এখানে এনে ফেললে? :'( “।

প্রথমে কিছু বিষয় আসলে বলে নেওয়া যাক। বুয়েটে যথাক্রমে 2,3 বা 4 credit hour বিশিষ্ট  theory course এবং 0.75 বা 1.5 credit hour বিশিষ্ট lab course থাকে। আপাতত credit hour বলতে আমরা শুধু এইটুকু বুঝবো যে আমাদের কোনো একটা কোর্সের credit hour যদি 3 হয় তাহলে প্রতি সপ্তাহে ঐ কোর্সের ক্লাস তিনটা থাকবে। এর বেশি আর আপাতত না জানলেও চলবে।

 

প্রতি টার্মে সাধারণত ১৪ সপ্তাহ ক্লাস হয় (মাঝে মাঝে জমায়েত সাপেক্ষে সপ্তাহ কমবেশি হতে পারে 😉 , এটা unofficial কারণ বুয়েটের সব শিক্ষার্থী জানার প্রবল আগ্রহ নিয়ে থাকে তো তাই আসলে কখনো কর্তৃপক্ষ ফাকি দিয়ে কম পড়াতে চাইলে তখন ছাত্ররা তা মেনে নিতে চায়না। তাই ন্যায্য দাবি আদায়ে মাঝে মাঝে ছাত্ররা জমায়েত হয় তাই কিছুদিন ক্লাস বন্ধ  থাকতে পারে।  😉 ) এরপর ৩ সপ্তাহের একটা বন্ধ থাকে (পড়াশোনার জন্যে, PL নামের), তারপর ৩ সপ্তাহজুড়ে টার্ম পরীক্ষা হয়।

 

অধিকাংশ শিক্ষকই টার্ম শুরুর প্রথম দিন কিছু পড়ান না। ওইদিন আসলে কোর্সে তিনি ১৪ সপ্তাহে কিভাবে কোন topic পড়াবেন আর কি কি reference বই দেখলে topic টি বুঝা যাবে তার একটা printed copy দেন (খুবই অল্প কিছু শিক্ষক এই কাজটা করেন না বাকি অধিকাংশই করেন)। তো পুরা ১৪ সপ্তাহ কতটা খারাপ বা ভালো যাবে তার একটা নমুনা প্রথমদিনই হাতে ধরিয়ে দেয়া হয়। উল্লেখ্য যে, এইটা আসলে একটা নমুনা, তাই প্রয়োজন বা কোর্স শিক্ষক বা পড়ানো শেষ হওয়া সাপেক্ষে এই সিলেবাসের কমবেশি হতে পারে। তো সহজভাবেই আমাদের কাছে এইটার গুরুত্ব আসলে ওতটা না শুধুমাত্র reference বই এর অংশটুকু ছাড়া।

 

অনেক শিক্ষক slide এ পড়ান , অনেকে হাতে লিখে পড়ান (তবে আমার একান্ত ব্যাক্তিগত মত যে, slide এ পড়ালে কম সময়ে বেশি পড়ানো যায় সত্য, কিন্তু গুছিয়ে হাতে লিখে পড়ালে ভালোমত বুঝা যায়) । তাই অনেক শিক্ষক দুইটার একটা combination করেও পড়ান।

 

এতক্ষণ অনেক ফালতু আলাপ হল এখন আসা যাক কাজের কথায়, কিভাবে টার্মে জিপিএ ভালো করা যায়? (আগেই বলে দিচ্ছি এখানে আমি generalized কিছু বিষয় বলবো, এখন তোমার ক্ষেত্রে কোনটা কাজে লাগে এইটা তোমাকে নিজেকেই খুজে বের করতে হবে কারণ সবাই একই রাস্তায় একইভাবে কাজ করে সাফল্য পাবে এমন কোনো কথা নেই। একেকজনের সাফল্য অর্জনের রাস্তা বা উপায় আলাদা হবে এইটাই স্বাভাবিক। )

 

একটা কোর্সে মোট ৩০০ নাম্বারের পরীক্ষা হয়। যার মধ্যে 240+ পেলে A+, 225-240 পেলে A, 210-225 পেলে A-, 195-210 পেলে B+, 180-195 পেলে B, 165-180 পেলে B-, 150-165 পেলে C+, 135-150 পেলে C, 120-135 পেলে D, 120 এর কম পেলে  F (ফেল)।  আমরা দুইটি ধাপে বিষয়টি নিয়ে বলব।

 

১) CT ও Attendance:

 

৩০০ এর মধ্যে ৯০ নাম্বার (সিটিতে ৬০ + উপস্থিতিতে ৩০) থাকে এই অংশে। মোট 4 টা সিটি হয় ২০ নাম্বারের (শিক্ষক সাপেক্ষে সিটির সংখ্যা ও নাম্বার কমবেশি হতে পারে) যার মধ্যে থেকে তোমার পাওয়া নাম্বারের ক্রমানুসারে best 3 গণনা করা হবে। যেমনঃ ধরো, তুমি চারটা সিটিতে ২০ নাম্বারের মধ্যে যথাক্রমে ১৬, ১৮, ৫,১০ পেলে। তাহলে তোমার ১৬+১৮+১০ =  ৪৪ নাম্বার টার্মে যোগ হবে, যেটাতে সবচেয়ে কম, ৫ পেয়েছ সেটা বাদ যাবে।  আর নিয়মিত উপস্থিতির জন্যে পাবে ৩০ নাম্বার। (এখানে উল্লেখ্য যে কোনো ৩ ক্রেডিটের কোর্সে তুমি সর্বোচ্চ ৩ দিন অনুপস্থিত থাকতে পারবে। কিন্তু একান্ত অসুবিধা না হলে অনুপস্থিত না থাকাই ভালো। তবে এটা নিয়ে আমি বেশি কথা বলব না কারণ আমি নিজেই নিয়মিত উপস্থিত থাকতাম না। যা নিজে করিনি তা আসলে পরামর্শ দেয়ার মত বাতুলতা আর হয় না।  🙁 )

 

তো স্বাভাবিকভাবেই যেহেতু কম পরিমাণ নাম্বার তাই আমরা অনেকেই এই অংশে গুরুত্ব দেই কম। কিন্তু বিস্ময়কর হলেও সত্য, এই অংশে নাম্বার তোলা সবচেয়ে সহজ এবং ভালো গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই অংশের নাম্বার তোমাকে টার্মের বড় ইনিংসে ফলোঅন এড়াতে সাহায্য করবে।

 

তো সিটিতে ভালো করতে হলে কি করতে হবে? প্রথম কথা প্রতিদিনের ক্লাস লেকচার খুব ভালোমত সাজানো গোছানো অবস্থায় রাখতে হবে (হতে পারে তুমি নিজে তুলতে পারো অথবা তোমার কোন বন্ধু তুলতে পারে), এরপর  dept. এর ভালো রেসাল্টধারী সিনিয়র কোনো বড় ভাই অথবা dept. এর  archive (unofficial website) যদি থাকে ওইখানে থেকে আগের বছরের লেকচার ও অন্যান্য materials নামাতে হবে। এরপর দুটো মিলিয়ে সিটির সিলেবাস অনুসারে প্রথমে লেকচার খাতা তারপর ওই টপিকগুলো আছে এমন একটা রেফারেন্স বই থেকে theory টা পড়তে হবে। এরপর রেফারেন্স বই আর solution manual দেখে বেশ কিছু  example আর exercise করতে হবে (এক্ষেত্রে আসলে অধ্যায়ের শেষের দিকের সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত exercise গুলো অবশ্যই দেখে যাওয়া উচিত কারণ ওগুলো তুলনামূলক কঠিন থাকে)।  হতেই পারে তুমি কোন একটা exercise এর সমাধান না বুঝতে পারো, সেক্ষেত্রে যদি সময় না থাকে তাহলে মুখস্ত করে ফেলাটা হল সাময়িক সমাধান। এরপর সিটি শেষে এসে ভাবা যে আসলে কি হয়েছিল ওখানে (এতে আসলে নাম্বার বেশি পাবে তা আমি বলব না কিন্তু যদি বুঝতে পারো ঐ exercise টা তাহলে যে পৈশাচিক আনন্দ পাবে তা তোমার সামনের দিনে ভালো করার আগ্রহ দ্বিগুণ করে দিবে, দেখবে নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাসটা ফিরে আসতে শুরু করবে যে “আমিও পারি”)।

 

এখন এই অংশে আমরা সবচেয়ে বড় যে ভুলটা করি, সিটির তারিখ কমপক্ষে ১ সপ্তাহ আগে দিলেও আমরা আলসেমি করে পড়তে বসি সিটির আগের রাতে, ফলে দেখা যায় তাড়াহুরো করে না বুঝা যায় কিছু না হয় পড়া। কিছুই হয় না। তখন আমরা হতাশ হয়ে যাই, যে ধুর আমাকে দিয়ে হবে না। কিন্তু দোষটা যে আমাদের সেটা আমরা বেমালুম ভুলে যাই। তাই আমাদের উচিত অন্তত যেদিন সিটির তারিখ ক্লাসে ঘোষণা করা হয় ওইদিন থেকেই সিটির পড়াটা পড়তে শুরু করা। 

 

আবার অনেক সময় একই দিনে দুইটা তিনটা সিটি পড়ে যায়। তখন দেখা যায় একটার পড়া ভালো হলেও বাকি দুইটা পড়া ঠিক ভালোমত হয় না।  তখন ওই দুইটা সিটি খারাপ যায়। মনে রাখবে এক কোর্সের সিটির নাম্বার দিয়ে আরেক কোর্সের নাম্বার উঠবে না তাই সব কোর্সের সিটিই সমান গুরুত্বপূর্ণ। তো এখানে সমাধান কি? খুবই সাধারণ। তোমার পছন্দ অনুসারে ৫ টা থিওরি কোর্সের যেকোনো দুইটি (departmental course হলে ভালো) একদম টার্ম শুরুর প্রথম দিন থেকেই স্যারের সাথে পড়া শুরু কর। স্যার প্রতিদিন যেটুকু পড়াবে ঐটুকু উপরে যেভাবে বললাম ওভাবে পড়তে থাকো। যদি দেখো যে নিজে পড়েই বুঝতে পারছো তাহলে স্যার থেকেও আগিয়ে যাও, বেশি পড়ে রাখো। (কেন পড়বে তা নিচের অংশে বলবো) এভাবে দুইটি কোর্স তোমার আসলে ভালোই আগানো থাকবে বাকি তিনটা কোর্সের জন্যে সিটির আগের সপ্তাহে পড়া শুরু কর। দেখবে সিটি ভালো হবে।

 

সিটি ভালো করা কেন জরুরি? কারণ ধর তুমি সিটিতে ৬০ এর মধ্যে ৫০ পেলে,  attendance এ ৩০ পেলে  তাহলে তোমাকে A+ পেতে হলে অর্থাৎ ২৪০ পেতে হলে টার্মে ২১০ এর মধ্যে  মাত্র ১৬০ নাম্বার পেতে হবে। কিন্তু তুমি যদি সিটিতে ৬০ এর মধ্যে ৩০ পাও,  attendance এ ৩০ পেলে  তাহলে তোমাকে A+ পেতে হলে অর্থাৎ ২৪০ পেতে হলে টার্মে ২১০ এর মধ্যে ১৮০  নাম্বার পেতে হবে যা তুলনামূলক কষ্টকর (কারণ এতে তোমাকে টার্ম অনেক ভালো দিতে হবে এবং প্রায় সব প্রশ্নের উত্তর নির্ভুলভাবে করতে হবে যা টার্মে করা আসলে প্রচুর কষ্টকর)। তাই সিটিতে ভালো নাম্বার পাওয়া অত্যন্ত জরুরি।

 

২) Term final (আসল খেলা):

 

৩০০ এর মধ্যে ২১০ নাম্বার থাকে এই অংশে। তো বুঝাই যাচ্ছে , টার্ম ফাইনাল ভালো হওয়ার উপর গ্রেড ভালো পাওয়া প্রায় সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল।  এখানে ভালো করার সবচেয়ে বড় উপায় হল, শিক্ষকের গতিবিধির উপর নজর রাখা। 😀 মানে আসলে উনি যখন আগে অন্য ব্যাচে এই কোর্স নিয়েছেন কিভাবে পড়িয়েছেন, কি প্রশ্ন করেছেন ওইটা ভালোমত খেয়াল করা।  এখানে আসলে কথা বলার মত অনেক জায়গা আছে। আমরা একে একে সবগুলো নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করব।

 

প্রথম যে ব্যাপারটা আসলে, টার্মের শুরুর প্রথম ৪-৫ সপ্তাহে যা পড়ানো হয় তা থেকে আসলে দেখা যায় টার্ম ফাইনাল পরীক্ষায় ৮ সেট প্রশ্নের মাত্র ১ সেট বা ০.৫ সেট আসে। বাকি পরের ৯-১০ সপ্তাহে যা পড়ানো হয় তা থেকে দেখা যায় প্রায় ৭-৭.৫ সেট প্রশ্ন আসে এবং অনেক ক্ষেত্রেই শেষ তিন সপ্তাহে যে টপিক পড়ানো হয় তা থেকে  দেখা যায় ২-২.৫ সেট প্রশ্ন আসে। এর কারণ প্রথম দিকে আসলে কোর্স সম্পর্কে basic ধারণা দিতে শিক্ষকেরা যথেষ্ট সময় নেন। কিন্তু যেহেতু সময়সীমা নির্ধারিত তাই পরের দিকে গিয়ে দ্রুত সিলেবাস শেষ করার একটা তাড়া থেকেই আসলে শেষের দিকে আসলে বেশি অধ্যায় পড়ানো হয় এবং ওই টপিকগুলো থেকে প্রশ্ন বেশি আসে।  এখন কিভাবে আসলে প্রস্তুতিটা নেয়া উচিত?

 

এক্ষেত্রে অধিকাংশ কোর্সেই (বিশেষ করে লেভেল-২,৩,৪ এর) সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে, বিগত ৪-৫ বছরের টার্ম প্রশ্নের  analysis. কোন কোন অধ্যায় বা টপিক থেকে কয় সেট প্রশ্ন আসবে তার একটা সম্যক ধারণা পাওয়া যায় বিগত বছরের প্রশ্ন থেকে। তাই বিগত বছরের প্রশ্নের সমাধান করা এবং প্রশ্ন দেখে টপিক দাগিয়ে রাখা একটা বড় ভূমিকা রাখে পরীক্ষা ভালো দেয়ার জন্যে। আর স্যারের লেকচার দেখে রেফারেন্স বই পড়া তো আছেই।

 

কিন্তু এক্ষেত্রে একটা বড় সমস্যা হয়, যে অনেকে শুধু সিটির সিলেবাসটুকুই ক্লাস চলাকালীন ১৪ সপ্তাহে শেষ করে রাখে এবং অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায় তা মোট সিলেবাসে মাত্র ১০-১২% বাকি দেখা যায় অনেক কিছু আসলে বাদ রয়ে যায় যা সিটিতে পড়ে শেষ করার সুযোগ হয় না। এইজন্যেই আসলে ৩ সপ্তাহের একটা পিএল থাকে পরীক্ষার আগে। এখন কথা হল ধরি প্রতি কোর্সে যদি ৭ টা করে অধ্যায় পড়ানো হয় এবং প্রতিটা অধ্যায় যদি পড়ে শেষ করতে  ১ দিন করে লাগে তাও ৭ দিন এবং সম্পূর্ণ পিএলে মাত্র তিনটি কোর্স শেষ করা সম্ভব কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই টার্মে কোর্স থাকে ৫টি করে। বাকি দুইটি কোর্সের অবস্থা খারাপই থেকে যায়। এখন মনে রাখা দরকার একটিমাত্র কোর্সে B গ্রেডই তোমার জিপিএ অনেকখানি নামিয়ে দেয়ার জন্যে যথেষ্ট। তাহলে করণীয় কি?

 

সবচেয়ে ভালো হয় প্রতিটা কোর্সের ৫০% করে সিলেবাস আসলে ক্লাস চলাকালীন ১৪ সপ্তাহ সময়ে শেষ করে রাখা। বাকি ৫০% এর যতটুকু পারা যায় তা পিএলে শেষ করে আগের পড়া আবার রিভিশন দেয়া। মানে মোট কথা ৮ সেট প্রশ্নের মধ্যে ৬.৫-৭ সেট প্রশ্নের খুব ভালো preparation  নিয়ে পরীক্ষা দিতে যাওয়া (কারণ তোমাকে ৮ সেট উত্তর করতে হবে না উত্তর করতে হবে ৬ সেট যার মধ্যে যদি তোমার সিটিতে ভালো নাম্বার থাকে তাহলে তোমাকে ৫ সেট নির্ভুলভাবে দিতে হবে বাকি ১ সেট common পড়া সাপেক্ষে উত্তর দিতে হবে, এইটাই আসলে সিটিতে ভালো নাম্বার পাওয়ার সুবিধা। তোমার নিজের উপর চাপ কম থাকবে।)। আমরা এখানে যে ভুলটা করি আমরা পুরো সিলেবাসটাই পড়তে চাই এবং তাও যদি সময় দিইয়ে পড়তাম তাহলেও কথা ছিল। আমরা চাই সুপারম্যান হয়ে পিএলে সব পড়ে শেষ করে ফেলব যা আসলে কখনোই সম্ভব নয়। যদি কোনো সিনিয়র ভাই কখনো বলে যে সে শুধু পিএলে পড়েই সব বিষয়ে ভালো গ্রেড পায় তাহলে বুঝবে তার উপর সৃষ্টিকর্তার বিশেষ রহমত আছে। যা তোমার উপর নাও থাকতে পারে, তাই তার পরামর্শ অনুসরণ না করাই শ্রেয়।

 

এখন আসা যাক ৫০% সিলেবাস বলতে আসলে আমি কি বুঝিয়েছি? মানে ধর মোট তোমার কোর্সে সর্বসাকুল্যে ৮ টি অধ্যায় আছে। তাহলে ৪টি অধ্যায় নয়, বিগত বছরগুলোর প্রশ্ন দেখে দুই সেকশনে ৪ সেট করে ৮টি প্রশ্নের টপিকের মধ্যে , এক সেকশনের ২টি এবং অপর সেকশনের ২টি টপিক শেষ করা বুঝিয়েছি। এই ৪টি টপিকের মধ্যে তুমি লেকচার দেখে প্রথমে লেকচারে স্যার কি কি পড়িয়েছে তা তোমার রেফারেন্স বইয়ে দাগিয়ে ফেল, ভালো হয় যদি তুমি লেকচারটা অল্প কিছু টাকা খরচ করে প্রিন্ট করিয়ে নিয়ে নিজের কাছে রাখো এবং পড়ার সময় লেকচার এর কপি আর বই এর কপি একইসাথে পাশাপাশি রেখে পড়। এবার এসো তোমার ঐ টপিকটি নিজের লেকচার ও বই দেখে পড়া শেষ হলে  example গুলো এবার নিজে করার চেষ্টা কর, না পারলে বই দেখে বুঝার চেষ্টা কর যে কি করল এরপর নিজে আবার করার চেষ্টা কর। এবার  solution manual টা খুলে টপিক অনুসারে বই এর কিছু exercise কর, প্রথম দিন সহজ গুলো করাটা উচিত যাতে আত্মবিশাস বাড়ে। এরপর exercise এর প্রশ্ন এবং solution manual এর উত্তর মিলিয়ে দেখো এবং কিছু কঠিন বেখাপ্পা exercise এর নাম্বার বইয়ে দাগিয়ে রাখো (হতে পারে ওইগুলো তোমার মুখস্ত করতে হবে)। এবার এসো প্রস্তুটির শেষ অংশে, টার্ম এর বিগত বছরের প্রশ্ন নেও hardcopy (পলাশীর বাজারে পাওয়া যায়) বা softcopy(বুয়েটের লাইব্রেরির ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়)। নিয়ে থিওরি টপিকগুলো বইয়ের কোথায় আছে তা দাগাও এবং দেখো তা তোমার পড়া হয়েছে কিনা যদি না হয় তাহলে পড়ে ফেলো সাথে সাথে। এবার ম্যাথগুলো খুজে দেখো রেফারেন্স বইয়ে পাও কি না (অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পাবে না)। যদি পাও দাগিয়ে রাখো এবং solution manual দেখে সাথে সাথে করে ফেলো। যদি না পাও হতাশার কিছু নেই, সিনিয়র ব্যাচের ভালো রেসাল্টধারী (যাকে তার ব্যাচমেটরা আতেল ডাকে) ভাইটিকে খুজে বের কর। তার কাছে যাও। আগের বছরের প্রশ্নের সমাধানের কপি থাকলে চেয়ে নিয়ে আসো।  যদি না পাও তাহলে সবগুলো সমস্যা জড়ো করে এবার ফোন দিয়ে appointment নিয়ে লেকচারার পদভুক্ত শিক্ষকের কাছে যাও (সমাধান পাবে আশা রাখি)। যদি তাও না পাও সমস্যা নেই নিজে সমাধান করার চেষ্টা করো এবং ক্লাসের আতেল বন্ধুদের জড়ো করে মিলিয়ে নাও। এভাবে করে তোমার প্রতি সেকশনে অন্তত ২ সেট করে ৪ সেট প্রশ্নের উত্তর পড়া হয়ে যাবে ১৪ সপ্তাহের মধ্যে। এবার বাকি রইল প্রতি কোর্সে ২.৫-৩ সেট প্রশ্নের প্রস্তুতি। এই বাকি অংশের প্রস্তুতি একইভাবে পিএলে নাও। এবার প্রতি পরীক্ষার আগে ৩-৪ দিন করে বন্ধ থাকে ওই বন্ধে যা আগে পড়েছো তা রিভিশন দেয়া শুরু কর। নতুন কিছু না পড়ে যা বাদ রয়ে গেছে ১ সেট প্রশ্নের টপিক তা বাদ থেকে যাক যদি সময় না থাকে। দেখবে টার্ম ফাইনাল অনেক relax অবস্থায় দিতে পারবে আর ঠান্ডা মাথায় পরীক্ষা দিতে পারলে যেকোনো পরীক্ষাই ভালো হয়।

 

এবার এত কথার সারকথা একটাই, বুয়েটে ঢুকে আমরা আসলে অনেকটা বেপরোয়া হয়ে যাই অনেকে নিজের লাগাম ধরা রাখতে পারি না। তাই দেখা যায় পড়াশোনা ছেড়ে দেই। টিউশন বা আরও অন্যান্য কাজে এতটাই সময় দেয়া শুরু করি যা আসলে নিজের জন্যেই ক্ষতিকর হয়। একটা নির্দিষ্ট সীমায় থেকে যদি টিউশন বা অন্যান্য কাজ করা যায় এবং নিয়মিত একটু পড়াশোনা করা যায় তাহলে মোটামুটি ভালো ফলাফল করা বুয়েটে মোটেও কষ্ট না। বরং আমার মতে টিউশনের পরিবর্তে যদি কেউ Freelancing কর (graphics design, web developing, robotics, app developing ইত্যাদি আরো অনেক কিছু শিখো এবং সামান্য টিউশনের পুজি দিয়ে যদি নিজের একটি ছোট খাট startup দাড় করাতে পারো ওইটা তোমার দক্ষতা বাড়াবে, সেখানে প্রচুর টিউশন করিয়ে তুমি হয়ত অনেক টাকা কামাতে পারবে যা আগের কাজগুলোয় পারবে না কিন্তু নিজের অজান্তেই তুমি নিজের সবচেয়ে সুন্দর সময় বিশ্ববিদ্যালয় জীবনটাকে নষ্ট করে ফেলবে। 🙁 )

 

পরামর্শ একটাই, যাই কর না কেন, নিজেকে জানো, তুমি কতটুকু নিতে পারো তা জানো, জেনে ততটুকুই বাহ্যিক বোঝা নেও, অন্যকে দেখে তার মত হতে চেয়ে নিজের সত্তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করো না। আর নিয়মিত পড়াশোনা কর ভালো ফলাফল ধরা দিবেই। 😀

 

সম্পূর্ণ লেখাটি আমার লেভেল-২ এর অভিজ্ঞতা থেকে লিখা।

 

হয়তোবা অনেকেই বলবে তোমার সিজিপিএ তোমার আসলে ভবিষ্যতে তেমন কাজে আসবে না। আমি এ নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে কোনো মন্তব্য করবো না।

 

আমি শুধু বলব, যখন পাস করার পর নিজের সার্টিফিকেটটা হাতে পাবে তখন তাতে সিজিপিএ ৩.৪৮ না দেখে যদি ৩.৭৫+ দেখো তোমার মনের মধ্যে যে সামান্য আনন্দ আসবে আর এতে তোমার মুখের কোণায় যে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠবে তা হাজার টাকার বিনিময়ে তুমি পাবে না। তাই সময় থাকতে সাধন করো। বেলা ফুরোলে শত কাদলেও লাভ হবেনা, সোনার তরী আর ফিরে আসবে না। 🙂