বিভাজ্যতা গণিতের খুব সৌখিন একটি বিষয়।এটির অনেক ডালপালা আছে।আপাতত আমরা কনগ্রুয়েন্স শিখব।
ছোটবেলায় ভাজ্য,ভাজক,ভাগশেষের বুলিগুলো আওড়ান নি এমন কমই আছেন।
আজ আমরা ফিরে যাব সেসব প্রাইমারির ছোটবেলায়।
খুব সাধারণ একটা সূত্র ছিল-
ভাজ্য=ভাজকভাগফল+ভাগশেষ
বা,ভাজ্য-ভাগশেষ=ভাজক
ভাগফল
কোন নির্দিষ্ট ভাজ্য ও ভাজকের জন্য যখন ভাগশেষ শূন্য হবে তখনই কেবল ভাজ্যটি ভাজক দ্বারা নিঃশেষে বিভাজ্য।
এটা খুবই জানা নিতান্ত সাধাসিধে একটি law।
গণিতের ক্ষেত্রে নিতান্ত সাধাসিধে law থেকেও অনেক কিছু করা যায়।দাগ থেকে যদি দারুণ কিছু হয় তবে দাগই ভাল :3
চলুন এইসব সাধাসিধে law থেকে দারুণ কিছু বের করে আনি।

ভাজ্য=a;ভাগশেষ=b;ভাজক=m;ভাগফল=n ধরে পাই,
a-b=m*n
এখানে যখনই b এর মান শূন্য হবে তখনই a,m দ্বারা বিভাজ্য হবে।

এটাকে মডিউলার এরিথমেটিকের ভাষায় এভাবে লেখা হয়(ঘাবড়াবেন না।মডিউলার কি জিনিস ব্যাখ্যা দিচ্ছি একটু পরেই।দাগ থেকে দারুণ কিছু আনা হবেই)
a≡b (mod m)
এটাকে পড়া হয় এভাবে “a কনগ্রুয়েন্ট টু b মডিউল এম”
এবং এটার অর্থ হল
a কে m দ্বারা ভাগ করলে b ভাগশেষ পাওয়া যাবে।(এখানে মূল বিবেচ্য বিষয় ভাগশেষ।তাই ভাগফল নিয়ে অতটা ঘাটাঘাটি করা হয় না।)
অনেকের এটা নিয়ে হালকা ইতস্তত বোধ হতে পারে এই মডিউলার এরিথমেটিকের কাজ আসলে কি।
মুহাহা হা!এত তাড়াতাড়ি সব জেনে গেলে হবে?ধৈর্য ধরুন 😛
এই মডিউলার এরিথমেটিক কিছু নিয়ম মেনে চলে।আর এই নিয়মগুলোর মাধ্যমে আমরা বিভাজ্যতার নানা ইতিকথা প্রমাণ করতে পারি।আর ভাগশেষ বের করতে পারি।মডিউলার এরিথমেটিকের মূল উদ্দেশ্য হল ভাগশেষ বের করা।আর এই ভাগশেষ শূন্য হলেই আমরা বিভাজ্যতার নানা নীতি পাই।আর এসবের মধ্যেই আপনি অনুভব করবেন মডিউলার এরিথমেটিকের শক্তি।
আচ্ছা এবার মডিউলার এরিথমেটিকের অল্প মৌলিক law গুলো জেনে নেওয়া যাক।

if a,b,m belongs to real number and
a≡b (mod m) হয়।তবে,
১,ac≡bc(mod m)
2,a^c≡b^c(mod m)
৩,a+c=b+c(mod m)
৪,a-c=b-c(mod m)

আপাতত এই চারটা law তেই সীমাবদ্ধ থাকুক আমাদের কনগ্রুয়েন্স।আমি এখন এগুলোর প্রয়োগ দেখবো।
ধরুন আমাকে বলা হল।

১৪^২৫ কে ১৩ দিয়ে ভাগ করলে কত ভাগশেষ থাকবে?

ভয় পেলেন নাকি সংখ্যার আকার শুনে?১৪^২৫ নিতান্ত বড় রকমের একটা সংখ্যা।দশমিক পদ্ধতিতে লিখতে গেলে ৩৫/৪০ ডিজিট তো লাগবেই।এইখানেই হল মানুষের স্বকীয়তা।ক্যালকুলেটরে দিন এই ম্যাথ।তার “math error” লিখে দিয়েই কাজ শেষ।কিন্তু একজন মানুষ যিনি মডুলো এরিথমেটিক জানেন তাকে দিন।তিনি এত সহজে হার মানবেন না।তিনি খচখচ করে খাতায় লিখে অল্প সময়েই বলে দেবেন উত্তর।
চলুন সমাধানের ক্ষেত্রে মডুলার এরিথমেটিকের প্রথম ধাপে আসি।এই সব ধরনের ম্যাথ এ প্রথমে একটি কনগ্রুয়েন্স প্রতিষ্ঠা করে নিতে হয়।আর এই প্রাথমিকভাবে ধরা কনগ্রুয়েন্স এর উপরই অংকটির সাফল্য নির্ভর করে।
প্রথমে আমরা লিখি
14≡1(mod 13) ;অর্থাৎ ১৪ কে ১৩ দ্বারা ভাগ করলে এক ভাগশেষ থাকে।মনে রাখতে হবে যে সংখ্যাটিকে দিয়ে ভাগ করতে বলা হবে আমরা m এর জায়গায় সেটিকে বসাব।
এরপর,
14^25≡1^25(mod 13)
বা,14^25≡1(mod 13)
অর্থাৎ ১৪^২৫ কে ১৩ দ্বারা ভাগ করলে ১ ভাগশেষ থাকবে।দেখলেন তো।কি সহজেই বের করা গেল।আসলেই সহজ ভাবেই দিয়েছি প্রশ্নটা।

এবার আরেকটু কঠিন ধাপে যাওয়া যাক।

১৫^২৪ কে ১৩ দ্বারা ভাগ করলে ভাগশেষ কত থাকে?

প্রথমে, 15≡2(mod 13)
বা,15^24≡2^24≡(2^6)4≡64^4(mod 13)………..(1)
এখন 64 কে ভাজ্য ধরে আবার কনগ্রুয়েন্স প্রতিষ্ঠা করব।যা দ্বারা এই (1) কে প্রতিস্থাপন করব।কনগ্রুয়েন্স প্রতিস্থাপনযোগ্য যদি মডিউল একই থাকে।
64≡-1(mod 13)
বা,64^4≡ (-1)^4(mod 13)
বা,64^4≡1(mod 13)
এখন (1) কে এটা দ্বারা প্রতিস্থাপন করব।যেহেতু এদের মডিউল একই।
(1) থেকে পাই,
15^24≡1(mod 13)
অর্থাৎ ১৫^২৪ কে ১৩ দিয়ে ভাগ করলে আমরা ভাগশেষ পাব ১।
বিভাজ্যতার প্রথম পর্ব এট্যুকই।
পাঠকদের অনুরোধ করা হল তারা যেন বিভিন্ন র‍্যানডম সংখ্যার মাধ্যমে কনগ্রুয়েন্স পরীক্ষা ও প্রয়োগ করে দেখেন। (একটা জিনিস মাথায় রাখবেন।কনগ্রুয়েন্স এর উভয় পক্ষে যোগ,বিয়োগ,গুণ সম্ভব হলেও ভাগ বিনা শর্তে সম্ভব নয়।এই জায়গায় অনেক ভুল করে।)

জীবন হোক গণিতের মত সুন্দর।
বিদায়।

Sakib Abrar

Sakib Abrar

একটু অন্ধকার একটু আলো একটু জীবন একটু মৃত্যু