প্রথম পর্বঃ শুরুর কথা

দ্বিতীয় পর্বঃ শ্রেণিবিন্যাস খায় না মাথায় দেয়!

তৃতীয় পর্বঃ ভ্রূণের ইতিবৃত্ত

আগেই জানিয়ে রাখি এ পর্বে আমরা মূলত গত পর্বের শেষ টানবো আর এর সাথে দুই চা চামচ বিবর্তন মিশিয়ে নিবো!

শুরুতেই বিবর্তন। এখন তোমাদের নিয়ে যাবো আঠারো শতকের লন্ডন শহরে। তখন ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লব শুরু হচ্ছে। শিল্প বিপ্লব মানে বোঝো তো? নতুন নতুন কল-কারখানা তৈরি হচ্ছে, ফলে বুঝতেই পারছো বায়ুমন্ডলে ধোঁয়া বেড়ে যাচ্ছে। এমন সময় সবচেয়ে বিপাকে পড়লো মথ নামের প্রজাপতি টাইপের প্রাণি। তাদের আগে রং-বেরঙের পাখনা ছিলো। কিন্তু যেহেতু বাতাসে ধোঁয়া বেড়ে যাচ্ছে ফলে তাদের ডানা কি আর আগের মতো রং-বেরঙের হতে পারবে? সেটা আস্তে আস্তে কালো হয়ে যাবে না?

এখন তুমি বলো, প্রকৃতি কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যাচ্ছে, তার সাথে যেসব মথের ডানাও কালো রঙে ছেয়ে যাচ্ছে তাদের টিকে থাকার সম্ভাবনা রঙ্গিন মথের চেয়ে বেশি
না? কারণটা আমিই বলে দিচ্ছি, যেহেতু প্রকৃতি কালচে হয়ে যাচ্ছে ফলে কালো রঙের মথের কালো রঙে মিশে যাওয়ার ক্ষমতা বেশি। যার কারণে মথ খেয়ে যারা বেঁচে থাকে তারা কিন্তু কালো রঙে মিশে থাকা মথগুলোকে আর সহজে ডিটেক্ট করতে পারবে না। ফলে দেখো তো, প্রকৃতিকে কারা টিকে গেলো। এখন এই কালো রঙের মথগুলোর আবার কালো রঙ্গা বাচ্চা-কাচ্চা হবে না? ফলে অনেক অনেক বছর পর কি দেখবে? চারদিকে কালো রঙের মথ, তাই না? (এখানে তোমরা প্রশ্ন করতেই পারো, কালো রঙের মথের কালো রঙ্গা বাচ্চা-কাচ্চা হবে তা-ই বা এতো নিশ্চিত কিভাবে? আসলে কালো রঙের মথগুলোর ডিএনএ এ তে একটু পরিবর্তন ঘটে যাবে। যাকে আমরা বলবো, Genetic Mutation! এ ব্যাপারে অন্য কোনোদিন সময় হলে আলোচনা করবো)। এই যে রং-বেরঙ্গের মথ প্রকৃতি থেকে অনেক অনেক বছরের ব্যবধানে হারিয়ে গেলো এটাই কিন্তু বিবর্তনের প্রধানতম সূত্র “Natural Selection”(প্রাকৃতিক নির্বাচন মতবাদ)। এবার মোটামুটি একটা ধারণা হলো তো?

এখন তোমাকে একটু আগের পর্বে ফিরিয়ে নিবো। খেয়াল করে দেখো, সেখানে আমি একটা টার্ম ব্যবহার করেছি, “Evolutional Benchmark”। জিনিসটা হলো, এই যে অনেক অনেক বছরের ব্যবধানে প্রাণিদের মধ্যে একটা পরিবর্তন চলে আসছে (হতে পারে সেটা আমাদের আগের উদাহরণের মতো বাহ্যিক কিংবা অভ্যন্তরীণ। ভুলেও ভেবে বসে থেকো না যে পরিবর্তন শুধু গায়ের রঙ চেঞ্জ হওয়াটাইপের বাহ্যিক পরিবর্তনে বিবর্তন সীমাবদ্ধ) তার প্রকাশ। ধরো আগে রঙ্গিন মথ পেতাম আর এখন কালো মথ পাচ্ছি। এই যে পরিবর্তন এটাই কিন্তু আমাদের বলে আসা Evolutional Benchmark!

অনেকক্ষণ তো বিবর্তন নিয়ে কথা-বার্তা হলো। এবার চলো তোমাদের কোষের স্তর তৈরি হওয়াতে ফিরিয়ে নিয়ে যাই। আমরা কথা বলছিলাম গ্যাস্ট্রুলেশন পর্যায় নিয়ে, সেখানে কিন্তু পুরো কোষগুলোতে দুইটা ভাগ হয়ে যায়। এখানেই মজার ব্যাপার, পরবর্তীতে কিছু কিছু প্রাণির আবার তিনটা স্তরও দেখা যায়। জিনিসটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হলে নিচের ছবি দুইটা দেখো। প্রথমটা Diploblastic(মানে কিনা দ্বিস্তরী) দ্বিতীয়টা Triploblastoc(মানে হলো ত্রিস্তরী)। এটা আমাদের আলোচ্য অধ্যায়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ Evolutional Benchmark.

দুইটা লেয়ার(স্তর দেখছো তো?)

দুইটা লেয়ার(স্তর দেখছো তো?)

দেখো, আমার কথার সাথে মিললো কিনা! তিন রঙের তিনটা স্তর কি বোঝা যায়?

দেখো, আমার কথার সাথে মিললো কিনা! তিন রঙের তিনটা স্তর কি বোঝা যায়?

এখন এটাই বা কেন Evolutional Benchmark হবে? কারণটা সহজ। তুমি যদি পৃথিবীর সবচেয়ে আদিম প্রাণি বা শুরুর দিকের প্রাণিগুলোকে নাও দেখবে তারা কোনো layer বা স্তরই তৈরি করে না যেমন Porifera পর্ব। আবার তারপরের প্রাণি যেমন ধরো Cnidaria তারা কিন্তু আবার দুইটা layer তৈরি করে। কিন্তু তার পরে যাও Platyhelminthes – তারা কিন্তু এবার তিনটা স্তর তৈরি করে। কাজেই জেনারেশন বাই জেনারেশন 😛 চেইঞ্জটা ধরতে পারছো?
এবার এ পর্যন্ত এসে বিজ্ঞানীরা ঝামেলায় পড়লেন। তারা দেখলেন, Platyhelminthes থেকে সবাই ত্রিস্তরী। এখন কি করা? এখন তাদেরকে কিভাবে আগে পরে সাজানো যাবে? তখন তারা নতুন আরেকটা উপায় পেয়ে গেলেন। একটা নতুন Criteria পেয়ে গেলেন। যার নাম Coelom! কথা হলো জিনিসটা কি?
“সিলোম” বুঝতে নিচের ছবিটা দেখো!

প্রস্থচ্ছেদে সিলোমকে দেখলে যেরকম লাগে!

প্রস্থচ্ছেদে সিলোমকে দেখলে যেরকম লাগে!

কিছুই বুঝো নি তো? আমি বলছি। তোমাদের আগেই বলেছি একটু উন্নত(এতোদিনে উন্নত আর অনুন্নত বুঝে যাওয়ার কথা কিন্তু!) প্রাণিরা তাদের গ্যাস্ট্রুলেশন পর্যায়ের দিকে তিনটা লেয়ার form করে। এখন কথা হচ্ছে এই তিনজনার নাম কি? সবচেয়ে বাইরের জনকে আমরা বলি Ectoderm(Ecto শব্দের মানে যেহেতু বাহির) আর সবচেয়ে ভিতরের জনকে কিন্তু আমরা ডাকি Endoderm(Endo শব্দের মানে কিন্তু ভিতর)। আর মাঝের জনকে আমরা ডাকি Mesoderm. এখন মেসোডার্মে একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার ঘটে। এই মেসোডার্মে একধরণের গহবর তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়।(গহবর মানে যে সোজা কথায় গর্ত, আশা করি ব্যাপারটা বোঝো)। এখন তোমাদের মনে প্রশ্ন আসতেই পারে, আমি “গহবর তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়”- এই কথাটি কেন বললাম। কারণ Platyhelminthes থেকেই কিন্তু প্রথম ত্রিস্তরী প্রাণিদের দেখা শুরু হয় আর Platyhelminthes থেকেই কিন্তু সরাসরি “সিলোম” দেখা যায় না। কাজেই বিজ্ঞানীরা তাদের আকাঙ্ক্ষিত আরেকটি Evolutional Benchmark পেয়ে গেলেন যার উপর ভিত্তি করে আমরা ত্রিস্তরী প্রাণিদের আঙ্গুল তুলে বলতে পারবো, তারা উন্নত নাকি অনুন্নত।

এখন তোমাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে, আচ্ছা Platyhelminthes দের না হয় সিলোম নেই। কিন্তু তার চেয়ে উন্নত প্রাণিদের কি “সিলোম” আছে? বিজ্ঞানীরা দেখলেন Platyhelminthes দের চেয়ে আরেকটু উন্নত যারা তাদের ঠিক এক্সাক্টলি সিলোম তৈরি হয় না কিন্তু সিলোম টাইপের কিছু একটা তৈরি হয়। অর্থাৎ জিনিসটা সিলোমের মতো তবে পুরোপুরি সিলোম না। একে আমরা বলি Pseudocoelomate(এখানে Pseudo শব্দের মানে হলো ছদ্মবেশী। আর Coelom মানে তো বুঝতেই পারছো)। আর এইসব প্রাণিদেরকে আমরা বলি Nematoda. এ থেকেই বুঝে যাওয়ার কথা Nematoda কে ক্যানো Platyhelminthes এর পরে স্থান দেয়া হয়।

তবে তোমাদের চিন্তা করার কোনোই কারণ নেই। তোমরা বলবে, তাহলে কি কোনো প্রাণিরই সিলোম তৈরি হয় না। উঁহু, সিলোম টাইপের কিছু একটা যদি এক শ্রেণির প্রাণিতে তৈরি হয় তাহলে পরের ধাপের প্রাণিদের সিলোম না হয়ে যাবে কই? কাজেই Nematoda’র পরেই যারা আছে অর্থাৎ Mollusca- তাদের কিন্তু ঠিকই এক্কেবারে সিলোম দেখা যায়! ও আচ্ছা ভালো কথা, Mollusca নামটা দেন মহান বিজ্ঞানী, জীববিজ্ঞানের জনক, মহামতি অ্যারিস্টটল(পরীক্ষায় মাঝেমধ্যে চলে আসে এই প্রশ্ন। তাই একটু জানিয়ে রাখলাম।)

আচ্ছা তোমার এবার মনে হচ্ছে না, যে, তাহলে তো Mollusca থেকে সবাই তো তাহলে সিলোমওয়ালা। তাহলে এরপর আমরা কোন Evolutional Benchmark দিয়ে একটা থেকে আরেকটা কে আলাদা করবো। চিন্তা কোরো না, এরপরের প্রাণিগুলোতে আরেকটা বৈশিষ্ট্য দেখা যায়, যাকে আমরা বলি Segmentation বা খণ্ডকায়ন। এটা হচ্ছে সিলোমযুক্ত প্রাণিদের আলাদা করার Evolutional Benchmark!

নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ আমরা কোনদিকে এগুচ্ছি। এভাবে একটা একটা করে Evolutional Benchmark আমরা ব্যাখ্যা করবো আর একটা একটা করে পর্ব নিয়ে আলোচনা করবো। আর এরই মাধ্যমে আমরা বুঝে যাবো, ক্যানো পর্বগুলোকে একটার পর একটা নির্দিষ্ট সিকুয়েন্সে লিখতে হয়। কেন একটার চেয়ে আরেকটা উন্নত।

এ ব্যাপারগুলো নিয়ে তোমরা নিজেরা ভাবতে থাকো আর আমিও একটু রেস্ট নিয়ে আসি। আগামী পর্বে তো দেখা হচ্ছেই!