Classificationপ্রথম পর্ব

গতপর্বেই আমরা আলোচনা করেছিলাম আমাদের “প্রাণিদের বিভিন্নতা ও শ্রেণিবিন্যাস ” চ্যাপ্টারটা কিরকম এবং এ সম্পর্কে কিছু প্রাথমিক ধারণা। আজ আমরা সরাসরি কাজের কথাতে চলে আসবো!
ধরো, আমি তোমাকে একটা তেলাপোকা দিলাম আর বললাম, “দেখি, বলো তো, এর সাথে তোমার পার্থক্য কোথায়?” তুমি বলবে, “ওমা এ কেমন কথা! কোথায় তেলাপোকা আর কোথায় আমি। তেলাপোকা কি আমার মতো ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে দেশ উদ্ধার করতে পারে, আমার মতো সেলফি তুলতে পারে? আর তাছাড়া আমিই কি তেলাপোকার মতো উড়তে পারি!” উঁহু, সেভাবে বললে চলবে না। আমি যদি তোমাকে আরো সুনির্দিষ্টভাবে বলতে বলি, “তোমার সাথে তেলাপোকার শারীরিক কি কি পার্থক্য আছে?” তখন হয়তো তুমি মাথা চুলকাতে আরম্ভ করবে আর তোমাদের দুজনের মধ্যে পার্থক্য বের করতে করতে রাত কাবার করে ফেলবে! কিন্তু ব্যাপারটা কি মোটেও ভালো কিছু হলো? হলো না কিন্তু! কারণ এক তেলাপোকার সাথে তুলনা করতেই যদি তোমার এমন কালোঘাম ছুটে যায় তাহলে পুরো পৃথিবীর প্রাণিগুলোর কি হবে!
কাজেই আমাদের পদ্ধতিগত ভাবে এগুতে হবে। ওরে বাবা! কি কঠিন শব্দ ব্যবহার করে ফেললাম, “পদ্ধতিগতভাবে”! যাই হোক, ঘাবড়াবার কিছু নেই। আমি ব্যাখা করছি। চিন্তা করো তো, এই পুরো পৃথিবীতে তেলাপোকার মতো দেখতে কিংবা শারীরিকভাবে তেলাপোকার সাথে সাদৃশ্য আছে এমন কি কোনো প্রাণি আছে? হ্যাঁ, আছে। না, তোমাকে সেটা আর কষ্ট করে যাচাই করতে হবে না, বিজ্ঞানীরা সেটা অনেক অনেক গবেষণা করে, পুরো পৃথিবী তন্ন তন্ন করে খুঁজে বের করেছেন!(মানুষ প্রেয়সীর জন্য নীলপদ্ম খুঁজে বের করে আর বিজ্ঞানীরা কিনা বের করে তেলাপোকা! কি আজব! বিজ্ঞানীদের আসলেই মাথা ঠিক নেই! কি বলো!) তো যাই হোক, তাহলে তাদের মধ্যে নিশ্চয় সাধারণ কিছু বৈশিষ্ট্য আছে? হ্যাঁ, তা-ও আছে! তাহলে, আমি সাধারণভাবে যদি এসব সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলো জেনে যাই তাহলে কি মোটামুটি তেলাপোকার সাথে রিলেটেড সবগুলো প্রাণিকে আমি মোটামুটি জেনে গেলাম না! Yay! দেখলেই তো, সাধারণ একটা পদ্ধতির মধ্য দিয়ে গিয়ে আমি তেলাপোকার সাথে রিলেটেড সবগুলো প্রাণিকে চিনে গেলাম। অন্তত আন্দাজ করতে পারলাম, তারা কেমন হতে পারে। একেই আমি বলছি “পদ্ধতিগতভাবে”! (এ ফাঁকে জানিয়ে রাখি, এটা আমার Idea না মোটেও! এ ব্যাপারে প্রথম ধারণা দেন বিজ্ঞানী ক্যারোলাস লিনিয়াস! তিনিই শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতির জনক।)

আচ্ছা, ধরো, এবার আমি আরো খুঁতখুঁত করলাম। ধুর, সাধারণ বৈশিষ্ট্য জানলেই কি আর সবাইকে চেনা যায়! আমি আরেকটু গভীরে যেতে চাই। বিজ্ঞানীরা বড়ই খুঁতখুঁতে হয়, জানো তো? তারা দেখলেন, সবাইকে মোটামুটি একই কাতারে ফেলা যায় কিন্তু তাদের মধ্যেও কিছু পার্থক্য আছে। ওই তেলাপোকা রিলেটেড সব প্রাণিগুলোর মধ্যে এক গুচ্ছ একরকম আচরণ করে, আবার আরেকগুচ্ছ অন্যরকম আচরণ করে! এবার বিজ্ঞানীরা তাদেরকে আলাদা করে আলাদা আলাদা নাম দিয়ে দিলেন!

তারপর ধরো যাদেরকে আলাদা করে নাম দিয়ে দিলেন তাদের মধ্যেও যদি কোনো “সিগনিফিকেন্ট” পার্থক্য থাকে তবে তাদেরকে আবারো ভাগ করলেন। এভাবে কাহিনী করতে করতে একটা হায়ারার্কি বা আর্কিটেকচার বা পিরামিড বা গঠন দাঁড়িয়ে যায় না!? আর এই গঠনটাকেই আমরা বলি শ্রেণিবিন্যাস!
এখন তুমি বলবে, “সবই তো বুঝলাম! কিন্তু এতো কাহিনী করে আমার লাভটা কি হলো?” আসলে দেখো, এর মাধ্যমে আমি সঅঅব প্রাণিকে বললাম এরা একটা গ্রুপ। তারপর তাদের মধ্যে “সিগনিফিকেন্ট” পার্থক্যযুক্ত প্রাণিদের আরেকটি গ্রুপ, তারপর আবার গ্রুপ- এমন করতে করতে একদম নিচে নেমে একেবারে বিশেষ বৈশিষ্ট্য ধরে ধরে প্রাণিদের চিনহিত করতে পারবো। দেখলে তো জিনিসটা কতো সহজ হয়ে গেলো!

দেখি বলো তো, এখন নিচের ছবিটাকে অতোটা বিরক্তিকর লাগে কিনা!
stock-vector-hierarchy-of-biological-classification-major-taxonomic-ranks-classification-system-by-carl-451118377
(ছোট্ট একটা কুইজ। আচ্ছা, বলো তো, জিনিসটা এভাবে মোটা থেকে ছোটো হয়ে গেলো ক্যানো! এর উত্তর দিতে পারলে অনেকখানি বুঝে গেছো তুমি। না পারলে সমস্যা নেই। চিন্তা করতে থাকো)।

এবার আমরা সবচেয়ে মজার পার্টে ঢুকবো! আচ্ছা, তেলাপোকার চেয়ে “উন্নত” কিংবা “অনুন্নত” কোনো প্রানি আছে! Wait, “উন্নত” কাকে বলবো কিংবা “অনুন্নত”ই বা কাকে বলবো? ভালো সমস্যায় পড়া গেলো না? এখন তুমি বলবে, “এ আর এমন কি, মানুষ সবচেয়ে উন্নত”। ধরো, এতে পাখিরা কিংবা তারা মাছেরা ভীষণ খেপে গেলো! তারাও তো দাবি করতে পারে যে, তারা সবচেয়ে উন্নত। এখন উপায়! চিন্তা করো না। বিজ্ঞানীরা তোমাকে বাঁচাতে হাজির!
বিজ্ঞানীরা কিছু শর্ত জুড়ে দিলেন, বললেন, এই এই বৈশিষ্ট্যগুলো যদি তোমার থাকে তাহলেই তুমি উন্নত না হলে অনুন্নত! আর বৈশিষ্ট্যগুলোকেই আমরা বলবো “Evolutional Benchmark”! এরকম বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য আছে, যেমন ধরো, Embryonic Layer(ভ্রুণীয় কোষস্তর), Coelom(সিলোম), Fragmentation(খন্ডকায়ন), Tagmetization(অঞ্চলায়ন) এইসব!

কি! কিছুই বুঝলে না তো! চিন্তার কিছু নেই। একে একে সবই ব্যাখ্যা করা হবে! তবে এসব ফীল করতে গেলে আমাদের “বিবর্তন” সম্বন্ধে এবং “ভ্রূণীয় দশা” সম্বন্ধে কিছু জেনে নেয়া প্রয়োজন! কাজেই আগামী পর্বে দেখা হচ্ছে এইসব নিয়ে। আশা করছি, ভয় পেয়ে পালিয়ে যাবে না! 😛