গ্রেভিটেশনাল ওয়েভ, এইতো কিছু দিন আগেই বিজ্ঞানপাড়াকে মারাত্তক ভাবে আন্দোলিত করেছে এটি। কি এই গ্রাভিটেশনাল ওয়েভ? এই কথা বলতে গেলে ফিরে যেতে হবে আইনস্টাইনের যুগে।
আইনস্টাইনের মতে অভিকর্ষজ ত্বরণ হল স্পেসটাইমের বক্রতার ব্যসার্ধ। স্পেসটাইম!!! শব্দটা যতটা না মিস্টেরিয়াস তার থেকে বেশি বাস্তব। আবার উল্টো করেও বলা যায় যতটা না বাস্তব তার থেকে বেশি মিস্টেরিয়াস। স্পেস জিনিসটা আসলে কি? স্পেস জিনিসটা আসলে পরিষ্কার ভাবে বলতে গেলে একটি পুকুরের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। পুকুরের পানির অংশটুকুই হচ্ছে স্পেস। আমরা যখন ডুব সাতার দেই কিংবা মাছেরা যখন পানিতে ডুবে থাকে আমরাও ঠিক তেমনি স্পেসের মধ্যে ডুবে আছি। এখন আমরা যখন নড়াচড়া করি তখন যেমন পানি আন্দোলিত হয় ঠিক তেমনি বাস্তবেও স্পেস কোন কিছুর নড়াচড়ায় আন্দোলিত হয়। আমাদের চারপাশ থেকে সব কিছু যেমন মানুষ, গাড়ি, বিল্ডিং, পৃথিবী, সৌরজগত এমন কি সকল কিছু মিলিয়ে যায় তবে যা বাকি থাকবে তা কি??? কিছুই না, তাইনা!!! আসলে এই কিছুই না টাই সব কিছু। মানে এই কিছুই না টাই হল স্পেস, সেই মিস্টেরিয়াস স্পেস। ‘এই কিছুই না’ এর ভিতরে যে অনেক কিছু লুকিয়ে আছে তা জানা গেলেও কি কি লুকিয়ে আছে তার অনেক কিছুই অজানা রয়েগেছে আমাদের।
এবার আসি আলোর কথায়। আলো!!! আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞানের আরও অতি আশ্চর্যজনক একটি বিষয়। বেগের আপেক্ষিকতা নিয়ে আমারা সবাই কম বেশি জানি। তাও জিনিসটা আরও একটু পরিষ্কার করা যাক। ধরি, একটি ট্রেন ৭০ কিঃ মিঃ/ঘন্টা বেগে চলছে। ঠিক তার পাশেই একজন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে আর একজন একটি ট্যাক্সিতে করে ৩০ কিঃমিঃ/ঘন্টা বেগে ট্রেনের দিকেই যাচ্ছেন। তাহলে যে মজার ঘটনাটা ঘটবে তা হল দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটির কাছে ট্রেনটির বেগ ৭০ কিঃমিঃ/ঘন্টা মনে হলেও ট্যাক্সির ভিতরের মানুষটির কাছে ট্রেনটির বেগ মনে হবে ৪০ কিঃমিঃ/ঘন্টা। আসল মজাটা হল বেগের এই আপেক্ষিকতা আলো মানে না। সে সব সময়, সকল স্থানের জন্যেই একই বেগে চলমান থাকে। বাস্তব জীবনে যেমন একগুঁয়ে মানুষের সাথে তার চারপাশের মানুষ গুলো মানিয়ে নেয় ঠিক তেমনি আলোর এই একগুঁয়ে আচরননের সাথেও মানিয়ে চলে স্পেস এবং টাইম। কোন কিছু যদি আলোর কাছাকাছি বেগ অর্জন করে তখনই কেবল ঘটনাটা আরও ভালভাবে উপলব্ধি করা যাবে। দেখা যাবে তার চারপাশের স্পেস বাকিয়ে গেছে এবং সময়ও ধীরে চলা শুরু করেছে।
অতিদ্রুত গতিতে চলা সেই বস্তুর বেগের সাথে মানিয়ে নেয়ার সময় স্থান ও সময়ের ভেতর যেই গভীর সম্পর্কের সৃষ্টি হয় আইন্সটাইন তাকেই স্পেসটাইম হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন।
তিনি মহাবিশ্বকে একটি স্থিতিস্থাপক রাবারের সিট হিসেবে কল্পনা করেছেন। যেটাকে স্পেসের মতই বাঁকানো কিংবা মুচড়ানো যায়। রাবারের কোন সিটের উপরে কোন ভর রাখলে সেটি যেমন ডেবে যাবে ঠিক তেমনি স্পেসটাইম নামক এই রাবারের সিটের উপরে বিন্যস্ত গ্রহ, উপগ্রহ, নক্ষত্র গুলির ভরের কারনে এটি বেকে যায়। যার ভর যত বেশি তার কারনে সৃষ্টি হওয়া বক্রতার পরিমানও ততো বেশি। একি সাথে তার গ্রেভিটিও বেশি।
এখন কথা হচ্ছে এই বক্রতার সাথে গ্রেভিটেশনাল ওয়েভের কি সম্পর্ক? আগেই বলছি এই মহাবিশ্বকে আইনস্টাইন একটি বিশাল রবারের সিট হিসেবে কল্পনা করেছেন। আর এর উপরেই আছে সকল কিছু। এখন এরা যখন গ্রেভিটির কারনে একে অন্যকে কেন্দ্রকরে ঘুরে তখন এই রাবারের সিট এর মধ্যে এক কম্পনের সৃষ্টি হয় যাকেই আমরা বলি গ্রেভিটেশনাল ওয়েভ। এমন কি মানুষের নড়াচড়ার কারনেও সৃষ্টি হয় এই ওয়েভ, কিন্তু তার পরিমান এতই কম যে এখনও মানুষ পরিমাপ করতে পারেনি।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই ওয়েভ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ? কেনই বা এটি এত আলোড়ন সৃষ্টি করল? এই গ্রেভিটেশনাল ওয়েভে হল আইনস্টাইনের রিলেটিভিটি থিওরির একটি প্রেডিকশন। তিনি এর অস্তিত্বের কথা বলেছিলেন আর সাথে এটিও বলেছিলেন যে এটি এতই ক্ষুদ্র যে তা সনাক্ত করা সম্ভব না। এই সনাক্তকরণের ফলেই তার রিলেটিভিটি থিওরির নির্ভূলতা প্রমাণিত হল। পদার্থ বিজ্ঞানের জ্ঞানের নতুন দিক উন্মোচন হল। গ্রেভিটিকে আমারা নতুন করে শিখব এখন থেকে। ব্ল্যাক হোল যার শুধু নামটি এতদিন জানতাম আমরা তার সম্পর্কে ধারনা আরও পরিষ্কার হবে। কারন আমরা যেই ওয়েভটি সনাক্ত করেছি তার সৃষ্টি দুইটি ব্ল্যাক হোলের সংঘর্ষের কারনেই। এই ওয়েভকে বিশ্লেষণ করে আমরা যেমন ব্ল্যাক হোল সম্পর্কে আরও পরিষ্কার ধারনা পাব তেমনই এই মহাবিশ্ব সৃষ্টির রহস্য নিয়ে আমাদের জ্ঞান আরও গভীর হবে। এক কথায় বলতে গেলে এই মহাবিশ্ব নিয়ে আমরা এতদিন অন্ধ ও বধির ছিলাম, সবকিছুই ছিল আমাদের অনুমান। এই আবিষ্কারের পর থেকে আমার সব দেখতে ও শুনতে পাব।
well done.