বন্ধুবান্ধব,তোমরা সবাই কেমন আছো? যে যেখানে আছো আশা করি ভালো আছো,খারাপ যদি এই কারণে থাকো যে ‘’ফাংশন কি জিনিস… এক-এক ফাংশন,সার্বিক ফাংশন এসব কি জিনিস এগুলা বুঝিনা’’,তাহলেও আজকের পর থেকে ভালো থাকবে! :D।

আমাদের আজকের এই পর্বে আমরা ”ফাংশনের” কিছু ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করবো। পুরো সেট ফাংশন নিয়ে বিস্তর আলোচনা ,সবকিছু পেয়ে যাবে যখন আমরা সবগুলো পর্বের ইতি টেনে নিবো! 😀

আগেই একটু বলে নিলে ভালো,ফাংশন হচ্ছে একটা মেশিনের মতো।তুমি এর মধ্যে উপাদান দিবা,এই মেশিনটা সেটাকে চেইঞ্জ করে বা সেইম রেখে একধরণের আউটপুট দিবে। ধরো,একটা মেশিন জুস বানাতে পারে। কিন্তু তুমি সেই মেশিনে ইটের টুকরা দিয়ে জুস এর জন্য অপেক্ষা করতে থাকলা,জীবনেও আউটপুট পাবা? মেশিনটাই নষ্ট হয়ে যাবে! উদাহরণঃ

 f(x)=(x-3)/(x-2)

ফাংশন ইনপুট নিবে,মেশিনের মতো একটা আউটপুট দিবে।

ফাংশনের কাজ

এখানে x=2 বসিয়ে তুমি যদি আউটপুটের আশায় বসে থাকো,তাহলে ক্যালকুলেটর মসাই ”math error” ছাড়া তোমাকে অন্য কিছু দেখাবে না। কারন এর জন্য নিচের অংশটুকু ”শূণ্য” হয়ে যাচ্ছে! আর কোনোকিছুকে শূণ্য দিয়ে ভাগ করা সম্ভব না। তোমার কাছে ১০ টা চকলেট আছে,”কেউ একটি চকলেট ও পাবেনা” এই ভিত্তিতে তুমি তোমার কাছের ১০টা চকলেটকে কয়ভাগেই বা ভাগ করতে পারবে? এইটা সম্ভব না,তাই অসংজ্ঞায়িত(undefined) ধরা হয়,অনির্ণেয়(indeterminate) নয়! অনির্ণেয় কি সেটা নিয়ে পড়ে আলোচনা হবে।

যাই হোক,একটি মেশিনে তুমি কিছু ইনপুট দিয়ে দিবা,ফলাফল হিসেবে কিছু আউটপুট পেয়ে যাবা,এটাই ফাংশনের মেইন বেজ! একটা গিভেন ম্যাথমেটিকাল এক্সপ্রেশন কে চেইঞ্জ করে দেয়া,এসবই ফাংশনের কাজ। তুমি এক পথে যাচ্ছো,সেই পথ তো নিজে নিজে পালটে গিয়ে তোমাকে আরেক পথে নিয়ে যাবেনা,রাইট? হয় তোমাকে পথ পাল্টাতে হবে,না হয় বলে দিতে হবে ”ডানে যাও/বায়ে যাও”। ফাংশন সেই কাজটাই করে।

আর f(x) হচ্ছে মেশিন/ফাংশন ট্যাগ! (ধরে নিই! :D)

এমন অনেকগুলো ফাংশনঃ
১) f(x) = x2

২) f(x) = x3

৩) f(x) = sin(x)

৪) f(x) = ex

৫) f(x) = x3 +5

… আরো অনেক কিছু।

প্রথম ফাংশনটার কাজ হচ্ছে,একটা ইনপুট নিবে x এবং সেটার বর্গ করে আউটপুট দিয়ে দিবে! সেকেন্ডটার কাজ ও একরকম অনেকটা,এটা x ইনপুট নিয়ে সেটাকে ঘন করে বাইরে পাঠিয়ে দিবে। আমরা f(x) থেকে সেটাকে সংগ্রহ করে নিবো। পরেরগুলার কাজও আশা করি বুঝতে পারছো! ৫ নং ফাংশনটা আনার পিছনে কারণ হচ্ছে,এটা দিয়ে আমি INVERSE FUNCTION আলোচনা করতে ইচ্ছুক। 🙂

একটি ফাংশনের ক্ষেত্রে দুইটি অংশ থাকে,একটি থেকে আমরা ইনপুট নিবো,আরেকটিতে আউটপুট গুলো জমা রাখবো। দু’টি সেট যদি কল্পনা করি,তাহলে যেই সেট থেকে আমরা ইনপুট নিবো,সেই সেটটা হচ্ছে ”ডোমেইন” , আর যেই সেটটাতে আউটপুট গুলো জমা হবে,তার নাম হচ্ছে ”রেঞ্জ”!

তাহলে ”কো-ডোমেইন” কোনটা???
কো-ডোমেইন হচ্ছে সেই সকল আউটপুটের সেট,রেঞ্জটা যার একটা সদস্য সেট মাত্র! 😀

ছবি দেখোঃ

slide8

ফাংশনের একটু কঠিন কঠিন পাঠ্যপুস্তক বেইজড গুরুগম্ভীর একটা সংজ্ঞা অনেকটা এমন 🙁  :

” A function is a relation that uniquely associates members of one set with members of another set. More formally, a function from A to B is an object f such that every a in A is uniquely associated with an object f(a) in B. ” (wolfram)

বাংলায় বললে,একটি ফাংশন হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যা নির্দেশ করে দুটি সেটের মধ্যে সম্পর্ক জুড়ে দেয়।

ফাংশন দু'টি সেটের মাঝে সংযোগ ঘটায়

ফাংশন এবং সেট

 

এবার তাহলে আমরা বিপরীত ফাংশন নিয়ে কিছু কথা বলি। একটি ফাংশন এর কাজ হচ্ছে , সে যেই ইনপুটটা নিবে,তাকে সে ”যেই প্রসেসে”  মোডিফাই করে দিচ্ছে,ঠিক সেই প্রসেসটাই যদি উল্টো করে ঘটানো সম্ভব হয়,তাহলেই সেই ফাংশনটার একটা বিপরীত ফাংশন থাকবে। আমরা আমাদের উপরের ৫ নং ফাংশনটা নিয়ে আসি এবারঃ

f(x) = x3 + 5

এই ফাংশনটার কাজ হচ্ছে,ধরো,উম্মম,তোমার ছোটবেলার স্কুলড্রেস পরিধান করার মতো কাজটা করে। x হচ্ছো তুমি,আর তোমাকে সুন্দরভাবে পরিপাটি করে স্কুলড্রেস পরিয়ে দিলে তোমার যেই চেহারাটা দাঁড়াবে , তা হচ্ছে f(x)। তুমি ফুলপ্যান্ট পরে বসে আছো,কিন্তু জানো না কিভাবে স্কুল ড্রেসটা পরতে হবে! 🙁  তোমার আম্মু এসে তোমাকে সবার আগে একটা শার্ট পড়িয়ে দিলো। ধরে নিলাম,এই প্রসেসে তোমার অবস্থা x থেকে x3 ! 😀 এবার তোমাকে স্কুলে টিফিনবাবদ ৫ টাকা পকেটে দিয়ে দিলো। তোমার সামগ্রিক চেহারা দাড়ালো এরকমঃ

x3 + 5

এবার,এই যে অপারেশনগুলো তোমার উপর চালানো হলো,একে একটা ট্যাগ দিয়ে দিলাম y অথবা f(x).
স্কুল থেকে ফিরে আসার পর তুমি পকেটে হাত দিয়ে দেখলে তুমি টিফিনবাবদ টাকাটি খরচ করতে ভুলে গেছো,এখন সেটি তোমার আম্মুকে ফেরত দিয়ে দিতে হবে। 🙁 বাসায় ঢুকার পর তোমার পকেট থেকে আম্মু ৫ টাকা বের করে নিলেন। তোমার কিন্তু স্কুলে যাওয়া অবস্থায় অবস্থা x থেকে y এ চলে গিয়েছিলো! এবার তোমার কাছ থেকে ৫ টাকা নিয়ে নেয়ায় তোমার বর্তমান চেহারা হবেঃ

y-5

এরপর কি হবে?? তুমি তোমার ড্রেস খুলতে পারো না,মা পরম মমতা নিয়ে তোমার স্কুল শার্ট খুলে দিলো । আচ্ছা,যখন তোমাকে স্কুল শার্ট টা পরিয়ে দেয়া হয়েছিলো,তখন ঘটনাটিকে আমরা ঘন করার সাথে তুলনা করেছিলাম,এবার যেহেতু খুলে দিয়েছে,মানে উলটা কিছু একটা ঘটেছে,তাহলে সেটাকে আমরা ”ঘনমূল” হিসেবে কাউন্ট করতেই পারি! 😀 শার্ট খুলে দেয়ার পর তোমার বর্তমান অবস্থা হবে অনেকটা এরকমঃ

(y-5)1/3

আচ্ছা,তুমি এবার একেবারে আগের অবস্থায় ফিরে এসেছো,তাইনা! ফুলপ্যান্ট পড়া ছোট্ট একটি বাচ্চা! 😀 এটিই কি তোমার আদিপরিচয় x নয়?

x=(y-5)1/3

বিশ্বাস করো,আমি ৫নং ফাংশনটিকে বিপরীত ফাংশনে রুপান্তর করে দিয়েছি। ম্যাথমেটিকালি করলে আমরা এমনটা পেতামঃ

Untitled

এভাবেই বিপরীত ফাংশনগুলো বের করতে হয়,বিপরীত ফাংশন বলতে সাধারণত এটাকেই বুঝায়। তবে সব ফাংশনকে চাইলেই বিপরীত করে দিতে পারবেনা। কেবলমাত্র ”এক-এক ফাংশন” গুলো ছাড়া অন্য কাউকে তুমি বিপরীত ফাংশনে রুপান্তর করতে পারবেনা! 😀

এক-এক এবং অনটু(সার্বিক) ফাংশন নিয়ে বিস্তারিত নিয়ে আসবো পরের পোস্টে। আমাদের সাথেই থাকো! 🙂