কোনো ঘটনা কিংবা বস্তুর প্রতি ভয় মানুষের মাঝে খুবই সাধারণ। সাপ কিংবা মাকড়সা, উচ্চতা কিংবা বদ্ধ ঘর – একেকজনের ভয় একেকটা। আমাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ যেকোনো বিষয়ের ক্ষেত্রেই ভয় একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। কিন্তু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়া হয় অনেকটাই অমূলক। হয়তো সে বাড়িয়ে বলতে শুরু করে, কিংবা দেখা যায় এমন সব জিনিষ কল্পনা করতে শুরু করে যা বাস্তবে ঘটেই নাই। এমনও হয় যে, টিভিতে জিনিষটা দেখেই সে আঁতকে ওঠে, সামনে আনারও প্রয়োজন হয় না! এধরণের প্রতিক্রিয়া হল ফোবিয়ার লক্ষণ।
অনেক ক্ষেত্রেই ফোবিয়া আক্রান্ত ব্যক্তি নিজেই বুঝতে পারেন যে তাদের ভয় অনেকটাই অযৌক্তিক এবং আগবাড়ানো। কিন্তু তাদের হয়তো মনে হয় এই ধরণের প্রতিক্রিয়া নিজ থেকেই আসে, এবং একে নিয়ন্ত্রণও সম্ভব না। অনেক ক্ষেত্রেই ফোবিয়ার সাথে দেখা দেয় প্যানিক অ্যাটাক, তবে ফোবিয়া থাকলে প্যানিক অ্যাটাক হবেই, এমন কোনো কথা নেই। ADAA-র মতে ইউএসএর ৮.৭ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো ধরণের ফোবিয়াতে ভোগে।
ফোবিয়ার কারণ
জেনেটিক কিংবা আশেপাশের পরিবেশের প্রভাবে ফোবিয়া হতে পারে। যাদের নিকটাত্মীয়ের এনজাইটি ডিজঅর্ডার আছে, তাদের ফোবিয়া আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। কোনো বাড়ি পুড়ে যেতে দেখা, কিংবা ডুবে যাওয়া থেকে অল্পের জন্য বেঁচে যাওয়া – এধরণের অভিজ্ঞতা হলে ফোবিয়া সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়াও অনেক উচ্চতায় থাকা, কিংবা বদ্ধ ঘরে বসবাস, পোকামাকড়, জীবজন্তুর কামড় – যেকোনো কিছু থেকেই ফোবিয়া সৃষ্টি হতে পারে।
সাধারণত শৈশব কিংবা কৈশোরেই ফোবিয়া দেখা দেয়। শিশুদের কিছু সাধারণ ভয় থাকে, যেমন – অচেনা মানুষ, কাল্পনিক জীবজন্তু, অন্ধকার, পোকামাকড়। অনেক ক্ষেত্রে এগুলোর উপর ভিত্তি করেই পরবর্তীতে জটিল কোনো ফোবিয়া সৃষ্টি হয়।
লক্ষণসমূহ
কোনো ব্যক্তি ফোবিয়া আক্রান্ত হতে পারে যদিঃ
প্রথমত, তার কোনো বিষয়, কাজ কিংবা ঘটনার প্রতি ক্রমাগত একটা অমূলক, অতিরিক্ত ভয় কাজ করতে থাকে।
দ্বিতীয়ত, সে যদি বিভিন্ন ঘটনাকে ফোবিয়ার ভয়ে এড়িয়ে চলতে শুরু করে। [ যেমন – বদ্ধ ঘরের ভয়ে লিফট ব্যবহার না করে সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করা। ]
তৃতীয়ত, ভয়ের কারণে যদি তার দৈনন্দিন জীবনে [কাজ, পড়াশোনা কিংবা রিলেশনশিপ] প্রভাব পড়তে শুরু করে।
চতুর্থত, তার মাঝে যদি নিচের লক্ষণগুলো দেখা দেয়ঃ
- হৃদপিণ্ডে নিষ্পেষণ অনুভব করা
- শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হওয়া
- অতিরিক্ত দ্রুত কথা বলা বা কথা বলতে না পারা
- শুষ্ক মুখগহ্বর
- বমি বমি ভাব
- উচ্চ রক্তচাপ
- কম্পন
- বুকে ব্যাথা বা টান অনুভব করা
- হেঁচকি বা বিষমের ভাব করা
- মাথা ঘোরা বা হঠাত করে পরে যাব এমন অনুভুতি হওয়া
- অতিরিক্ত ঘাম হওয়া
- খুব খারাপ কিছু হবে, এমন অনুভূতি হওয়া
যদি উপরের লক্ষণগুলো অনেক দিন ধরে [কমপক্ষে ছয় মাস] উপস্থিত থাকে, তাহলে ফোবিয়া হতে পারে।
প্রকারভেদ
ফোবিয়াকে সাধারণত নিচের কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়ঃ
- জীবজন্তুঃ কোনো প্রাণী কিংবা পোকামাকড়ের প্রতি ভয়
- প্রাকৃতিকঃ প্রাকৃতিক বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত [ যেমন, উচ্চতা কিংবা নদী-সমুদ্র ]
- রক্ত/ইনজুরিঃ রক্ত কিংবা ক্ষতস্থানের ভয়। এ ধরণের ভয়ের কারণে বিভিন্ন মেডিকাল কার্যক্রমে বাধা [যেমন, ইনজেকশন]
- বিশেষ কোনো ঘটনাঃ যেমন, গাড়ি চালানো কিংবা বিমানে চড়া
- অন্যান্যঃ অন্য সব ধরণের ফোবিয়া! আসলে অনেক ধরণের ফোবিয়া কাজ করে। সবগুলো ক্যাটাগরাইজ করা সম্ভব না!
অনেক ক্ষেত্রে ব্যক্তির একের অধিক ফোবিয়া থাকতে পারে। আরেক ধরণের ফোবিয়া আছে, সোশ্যাল ফোবিয়া, সেটি আলোচিত হবে অন্য কোনো পর্বে।
বিভিন্ন ধরণের ফোবিয়া
পৃথিবীতে কত ধরণের ফোবিয়া আছে, তার আসলে কোনো হিসাব নাই! মনোবিজ্ঞানীরা এ পর্যন্ত ৪০০র বেশি ফোবিয়া আবিষ্কার করেছেন।আমরা এখানে কিছু সাধারণ ফোবিয়ার তালিকা দেওয়ার চেষ্টা করবো। হয়তো সময় বিশেষে এগুলো নিয়ে বিস্তারিত লেখার সুযোগও আমাদের হবে।
- Arachnophobia – মাকড়সার ভয়।
- Hippopotomonstrosesquippedaliophobia – বড় শব্দের প্রতি ভীতি 😛
- Ophidiophobia – সাপের ভয়।
- Acrophobia – উচ্চতাভীতি। পাঁচ শতাংশ ব্যক্তি এই ভয়ে ভোগে।
- Didaskaleinophobia – স্কুল ভীতি
- Agoraphobia – খোলামেলা জায়গার ভীতি। যাদের এই ভীতি আছে, তাঁরা ঘরের বাইরে যেতে চান না।
- Cynophobia –কুকুরের ভয়
- Astraphobia – বজ্রপাতের ভয়
- Claustrophobia – বদ্ধ ঘরের ভয়
- Mysophobia – জীবাণুর প্রতি ভয় [ যেমন, ব্যাকটেরিয়া ]
- Aerophobia – বিমানে চড়তে ভয়
- Carcinophobia – ক্যান্সারের ভীতি
- Thanatophobia – মৃত্যু ভীতি। তাঁরা সাধারণত এই ব্যাপারে কথা বলতেও ভয় পেয়ে যান।
- Glossophobia – সবার সামনে কথা বলতে ভয়
- Monophobia – একা থাকার [খাওয়া কিংবা ঘুমানো] ভয়।
- Atychiphobia – ব্যর্থতার ভয়
- Ornithophobia – পাখির প্রতি ভয়
- Alektorophobia – মুরগীভীতি
- Enochlophobia – জনসমাগমভীতি
- Aphenphosmphobia – ঘনিষ্ঠতার ভীতি।
- Trypanophobia – সূচের ভীতি
- Anthropophobia – মানুষভীতি
- Aquaphobia – পানির প্রতি ভয়
- Autophobia – কারো ছেড়ে চলে যাওয়ার ভীতি
- Hemophobia – রক্তভীতি
- Gamophobia – কমিটমেন্টের ভয়
- Xenophobia – অচেনা জিনিষের প্রতি ভয়
- Vehophobia – গাড়ি চালানোর ভীতি
- Basiphobia – পরে যাওয়ার ভয়
- Achievemephobia – সাফল্যভীতি
- Metathesiophobia – পরিবর্তনভীতি
- Nyctophobia – অন্ধকারভীতি
- Androphobia – পুরুষমানুষের ব্যাপারে ভীতি
- Phobophobia – এটা ইন্টারেস্টিং। এটা হল ফোবিয়া আক্রান্ত হওয়ার ফোবিয়া!
- Philophobia – প্রেমে পড়ার ভীতি!
- Somniphobia – ঘুমাতে ভয়
- Gynophobia – নারীভীতি
- Pyrophobia – আগুনভীতি
- Phasmophobia – ভুতের ভয়!
- Catoptrophobia – আয়না ভীতি, কী না কী দেখবো দেখবো!
- Agliophobia – বেদনাদায়ক কিছু হবে, তার ভয়
- Tokophobia – গর্ভধারণভীতি
- Telephonophobia – ফোনে কথা বলার ভীতি
- Bathophobia – গভীরতা ভীতি [গুহা, সুরঙ্গ, লেক]
- Gerascophobia – বুড়ো হয়ে যাওয়ার ভয়
- Technophobia –প্রযুক্তি ভীতি
- Allodoxaphobia – অন্যরা কী ভাবছে সেই ভয়
- Photophobia – আলোকভীতি
- Numerophobia – সংখ্যাভীতি
- Thalassophobia – সমুদ্রভীতি
- Taphophobia – জীবন্ত কবরে যাওয়ার ভয়
- Phobophobia – ফোবিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ভয়
রেফারেন্স
১। Beyond Blue
২। Anxiety and Depression Association
৩। Health Line
৪। http://www.fearof.net/
৫| www.factslides.com