জ্যাক আর জিল পাহাড়ের উপরের কুয়ো থেকে পানি আনতে যাচ্ছিল। জিলের পিছু পিছু ওঠার সময় জ্যাক হঠাৎ গড়িয়ে পড়তে লাগল।গড়াতে গড়াতে পাহাড়ের নিচে এসে থামলে জ্যাকের চোখে পড়ল একটা সুন্দর হলুদ পাখি।সে কিছুক্ষণ পাখির সাথে খেলা করার পর একটা প্রজাপতি দেখল।প্রজাপতি দেখে তার ক্লাসের সেই মেয়েটির কথা মনে পড়ল, যার সংগ্রহে ৩০টি প্রজাপতি আছে। ওমা! আজ ভোরেই তো জ্যাকের মেয়েটাকে ফোন দেয়ার কথা ছিল, সে ভুলেই গেছে। দে ছুট! জ্যাক মেয়েটাকে ফোন করতে বাসায় ফিরে গেল।তো, জ্যাকের আসল কাজ ছিল পানি তোলা আর সেটাই তার করা হলনা।এই যে জ্যাক কোন কাজে মনোযোগ ধরে রাখতে পারেনা,একটা কাজ অসমাপ্ত রেখেই আরেকটাতে চলে যায়, এ লক্ষণগুলো যেনতেন সমস্যা না বরং  এডিএইচডি (ADHD) র লক্ষণ।


ADHD কী?


এ নিবন্ধে আমরা এডিএইচডির প্রাথমিক ধারণা এবং তার লক্ষণগুলো নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করব। ADHD কে রাবারের মত টেনে  লম্বা করে দিলে Attention Deficit Hyperactivity Disorder হয়ে যায়।এটা একটা নিওরোডেভলাপমেন্ট ডিজিজ।
নাম থেকেই অসুখটার ব্যাপারে প্রাথমিক ধারণা নেয়া যায়।Attention Deficit মানে মনোযোগের অভাব আর hyperactivity মানে অতিচাঞ্চল্য।20160611_114114

এডিএইচডি মূলত বাচ্চাদের অসুখ। ১২ বছর বয়সের আগেই রোগটির লক্ষণ বাচ্চাদের মধ্যে উপস্থিত থাকে। তবে সাধারণত স্কুলে যাওয়ার আগে কারো মধ্যে রোগটির উপস্থিতি নির্ণয় করা যায়না। যেহেতু বাসার আবহাওয়া স্কুলের চেয়ে কম নিয়ন্ত্রণমূলক তাই লক্ষণগুলো ওভাবে চোখে পড়েনা। তবুও এডিএইচডি আক্রান্ত বাচ্চারা বাসায় এবং সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে বিভিন্ন ধরণের সমস্যায় পড়ে। একেবারে শৈশবে সুত্রপাত ঘটলেও  কৈশোর এমনকি প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পরেও রোগটি পিছু না ছাড়তে পারে।

 

আগেই বলেছি, এডিএইচডি নিউরোডেভলাপমেন্ট ডিজর্ডার। কাজেই মস্তিষ্কের গঠনের অস্বাভাবিকতাই জন্ম দেয় রোগটির।মস্তিষ্কের অস্বাভাবিকতাগুলো আমি এ নিবন্ধে লিখছিনা তবে কেউ জানতে চাইলে ভিডিওটি দেখে আসতে পারেন।

তবে সহজ ভাষায় বুঝতে গেলে ছোট একটা কল্পনা কল্পনা খেলা খেলতে হবে। কল্পনা কর  অনন্ত জলিলের একটা ছবির শুটিং হচ্ছে। অনন্ত-বর্ষা ঠিকঠাক সংলাপ দিচ্ছে কিন্তু ছবির ডিরেকটর ঘুমিয়ে পড়েছেন। তাহলে কি ছবিটা ধারণ করা যাবে? উঁহু, মোটেই না। কারণ ছবির পরিকল্পনা, দৃশ্যক্রম সাজানো, সময় বরাদ্দ করা, যেকোন সমস্যার সমাধান করার কাজটুকু তো ডিরেক্টরকেই করতে হবে। আর সে ঘুমিয়ে পড়েছে 🙁

pr

একই ভাবে এডিএইচডি আক্রান্ত মানুষের মস্তিষ্ক ঘুমন্ত ডিরেক্টরের মত আচরন করে। সব কাজকে সমন্বয় করার দায়িত্ব যেহেতু মস্তিষ্কের, সে ঘুমিয়ে পড়লে সমন্বয়ের অভাবে কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পাদিত হয়না।

ছবিতে যেমন সুপারস্টার অনন্ত জলিল, বর্ষা আছ, সুন্দর সুন্দর গানের অভাব নেই তেমনি এডিএইচটি আক্রান্ত মানুষের দক্ষতা বা গুণের কোন অভাব নেই। ঘুমন্ত ডিরেক্টরের মত মস্তিষ্কটার জন্যই কাজগুলো আপাতত ঠিথাকভাবে করা যাচ্ছেনা।  🙂

এডিএইচডি জিনের মাধ্যমে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে প্রবাহিত হয়। তাই পরিবারের কারো রোগটি থাকলে পরবর্তী প্রজন্মের আক্রান্ত হওয়ার আশংকা থাকে। এছাড়াও,গর্ভাবস্থায় ধূমপান, বিষন্নতার ঔষধ সেবনের জন্য ও বাচ্চার মধ্যে রোগটি দেখা যেতে পারে।পরিবেশের প্রভাবেও এডিএইচডি হতে পারে।
তবে নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, গর্ভে, জন্মের পরে বা শৈশবে মস্তিষ্কে যেকোন খারাপ প্রভাবের কারণে এডিএইচডির সূত্রপাত হতে পারে।

ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের মধ্যে এডিএইচডির উপস্থিতি কম লক্ষ্য করা যায়। আক্রান্ত ছেলেরা সাধারণত অতিরিক্ত চঞ্চল হয় তবে মেয়েরা অমনোযোগী হয় আর দিবাস্বপ্নে ডুবে থাকে।

এডিএইচডি বা অন্য কোন মানষিক সমস্যা শুধু মাত্র একজন। ক্লিনিক্যাল সাইকোলোজিস্ট বা ডাক্তার দ্বারাই নির্ণয় করা সম্ভব। তাই ম্যাগাজিন বা অন্য কোন সূত্রে পড়া লক্ষণ বিশ্লেষন করে কাউকে রোগী ঘোষণা করা কোন সাধারণ মানু্ষেরই উচিৎ হবেনা। অনেক সময় বাচ্চাদের মধ্যে অতিচাঞ্চল্য বা অস্থিরতা থাকলেও সেটা এডিএইচডি হয়না।

লক্ষণ বিচারে এডিএইচডিকে প্রাথমিকভাবে ৩টি ভাগে করা যায়। লক্ষ্য করার মত লক্ষণগুলো হল

১/প্রধানত অমনোযোগিতা
২/প্রধানত অস্থিরতা
৩/বা একই সাথে দুটোর উপস্থিতি।

এডিএইচডি আক্রান্তরা অমনোযোগী এবং অথবা অতিচঞ্চল হয়ে থাকে। তবে মোটা দাগে কেবল অমনোযোগী এবং অতিচঞ্চল না বলে এবারে এ দুটো পর্যায়কে একটু ভেতর থেকে লক্ষ্য করব।
অমনোযোগিতা

  • একটা কাজ সম্পুর্ন না করেই অন্য কাজ শুরু করে দেয়া।
  • কোন কিছুতে গভীরভাবে মনোনিবেশ করতে না পারা।
  • ধারাবাহিক নির্দেশনা বা কার্য ক্রম অনুসরণ করতে না পারা।
  • চারপাশে হওয়া ঘটনা ভুলে যাওয়া। যদিও মনে হয় ঘটনাগুলো তারা ভুলে যাচ্ছে কিন্তু আসলে পর্যাপ্ত মনোযোগ না দেয়ার কারণে তারা ঘটনাগুলো মনে করতে পারেনা।adhd
  • সামান্য শব্দ বা গোলমালেই নিজের কাজ থেকে ডিস্ট্রাক্টেড হয়ে যাওয়া।
  • অধিক মনোযোগ প্রয়োজন এমন কাজ এড়িয়ে যাওয়া।
  • কোন খেলার নিয়মকানুন পড়ায় সময় না দিয়েই অংশগ্রহণের জন্য তাড়াহুড়া করা।
  • গাণিতিক সমস্যা ধাপে ধাপে করতে না পারা।
  • জিনিশপত্র হারিয়ে ফেলা। তাদের কী কী সম্পত্তি আছে তা তারা মনেই রাখতে পারেনা ফলে সেসব হারিয়ে ফেলে।
  • ক্লাসে মনযোগ ধরে রাখতে না পেরে পাঠদানকালে সহপাঠীর সাথে কথা বলে।

anime attention adhd disorder deficit

 

অতিচাঞ্চল্য

  • নির্দিষ্ট জায়গায় বসে থাকতে কষ্ট হয়।

IMG-20160611-WA0001

  • নীরবতা বজায় রাখা প্রয়োজন এমন পরিবেশেও প্রচুর হট্টগোল করে।কম বয়সী রা গ্রিল, ফার্নিচার বেয়ে উঠে।
  • তাদের ধৈর্য কম হয়, প্রায়ই অন্যদের বিরক্ত করে।
  • পরিণাম এর কথা চিন্তা না করেই কাজ করে ফেলে।
  • খারাপ অভিজ্ঞতা বা ভুল থেকে শিক্ষালাভ না করা।

লাইনে দাড়িয়ে যেসব কাজ করতে হয় সেসবে নিজের পালার জন্য অপেক্ষা করতে পারেনা। মাঝে মাঝে লাইন ভেঙে সামনে চলে যায়।

এ প্রাথমিক লক্ষনগুলো প্রায় সব এডিএইচডি রোগীর মধ্যেই থাকে। কেউ কেউ অতিচাঞ্চল্যের লক্ষণ দেখায় না।সেক্ষেত্রে, রোগটিকে এডিডি বা এটেনশন ডেফিসিট ডিজর্ডার বলা হয়।

আজকের মত এখানেই শেষ। পড়তে পড়তে যারা বিরক্ত হয়ে গেছেন তারা ভিডিওটি দেখে আসুন। এডিএইচটি রোগি শারলট হেসে খেলে রোগটির ব্যাপারে বুঝিয়ে দিয়েছে। আর বাংলা ভিডিও লেকচার পড়তে চাইলে ক্লিক ক্লিক!

এ পর্বে এ পর্যন্তই। ধৈর্য নিয়ে এতটুকু পড়ে ফেলার জন্য ধন্যবাদ 🙂

Nuzhat Tabassum Prova

Nuzhat Tabassum Prova