“মুই কি হনুরে!!”
শুরুতেই বলছি, কোন আঞ্চলিক ভাষা বা ঐ ভাষাভাষীর লোকদের অশ্রদ্ধা করে ‘মুই কি হনুরে’ টাইটেলটি ব্যবহার করিনি। কেউ আঘাত পেলে ক্ষমাপ্রার্থী।
নিচের কথা গুলোর সাথে মিলিয়ে দেখুন:
আমি ক্লাস সিক্স থেকে ক্লাস সেভেনে উঠেছি, ক্লাস সিক্সের নতুন পোলাপানরে দাবড়ানি দিবার সময় আসলো!
আমি এতদিন ৩ নাম্বার বাসে ঝুলে ঝুলে গিয়েছি, আজকে আমার গাড়ি আছে, হর্ণ দিয়ে শালাদের দেখিয়ে দিবো কি সুখে আছি!
আমি এতদিন ৩ নাম্বার বাসে ঝুলে ঝুলে গিয়েছি, আজকে আমার গাড়ি আছে, হর্ণ দিয়ে শালাদের দেখিয়ে দিবো কি সুখে আছি!
বাপের সাথে ঝগড়া করে মায়ের পীড়াপীড়ি অত:পর কলেজ পড়ুয়া আমার হুন্ডা প্রাপ্তি; তাই রাস্তা দিয়ে যাবার সময় হুন্ডার স্টান্ডটা মাটির সাথে ঘষা দিয়ে শব্দ করে যাবো বা ধুম ধুম শব্দে পুরা এলাকা কাঁপাবো!
আমি গোল্ডেন এ+ পেয়েছি ঐ বি পাওয়া মেয়ে কোন সাহসে আমার সাথে কথা বলে!
আমি গোল্ডেন এ+ পেয়েছি ঐ বি পাওয়া মেয়ে কোন সাহসে আমার সাথে কথা বলে!
আরে ভাই, এই যে ঘড়িটা দেখছেন সেটা দুবাই থেকে আনা, চেইন পুরা গোল্ডের আর ঐ যে টাইপিনটা দেখছেন সেটার দাম—-!
বারে! আমার ছেলে আম্রিকায়(!!) চাকরি করে তার জন্য দুধে আলতা মেয়ে না হলে হবে কিভাবে?
ভাবি জানেন আমার মেয়ের শ্বশুর বাড়ির মানুষগুলো একদম ছোটলোক, আমার মেয়ের গায়ের রঙ নিয়ে খোঁটা দেয়!
দেখেছিস, তারমতো একটা মডেল এরকম একটা কালো ছেলেকে বিয়ে করলো, সবই টাকার খেলা।
ওহ! কি বললি, ছেলের টাকা নাই, ওতো গেছেরে।
আমার জামাইতো প্রতি মাসে আমাকে শাড়ি কিনে দেয়, এইটা যে দেখছিস এটার দাম—!
কেমন খেলেন ভাই? দেখেছেন আমার বউয়ের হাতের রান্না, বাবা-মার পছন্দে বিয়ে করলে এরকম সুন্দর রুটি(!!) পাবেন আর প্রেম করলে পোড়া রুটি। হা হা হা!
বারে! আমার ছেলে আম্রিকায়(!!) চাকরি করে তার জন্য দুধে আলতা মেয়ে না হলে হবে কিভাবে?
ভাবি জানেন আমার মেয়ের শ্বশুর বাড়ির মানুষগুলো একদম ছোটলোক, আমার মেয়ের গায়ের রঙ নিয়ে খোঁটা দেয়!
দেখেছিস, তারমতো একটা মডেল এরকম একটা কালো ছেলেকে বিয়ে করলো, সবই টাকার খেলা।
ওহ! কি বললি, ছেলের টাকা নাই, ওতো গেছেরে।
আমার জামাইতো প্রতি মাসে আমাকে শাড়ি কিনে দেয়, এইটা যে দেখছিস এটার দাম—!
কেমন খেলেন ভাই? দেখেছেন আমার বউয়ের হাতের রান্না, বাবা-মার পছন্দে বিয়ে করলে এরকম সুন্দর রুটি(!!) পাবেন আর প্রেম করলে পোড়া রুটি। হা হা হা!
ভাই কালকে বুঝলেন একটা ফকিরকে ৫০০ টাকা দিয়ে দিলাম বুঝলেন আর আব্বাস ভাইয়ের কি কোন কাজ নাই, দিন রাত রাস্তার ড্রেনের ময়লা করে, মাস্টার মানুষ ভার্সিটিতে ক্লাস নিবে তা না, ড্রেন পরিষ্কার করে পাবলিসিটি করে, নিজে ভাল সেটা লোককে দেখাতে হবে, যত্তসব শো অফ!
এবার আরেক ধাপে যাচ্ছি:
আরেহ ও জানে আমি কে? আমাকে লাইনে দাড়াতে বলে। ওর লাইন আমি *** দিয়ে ভরে দিবো! আমি ওমুক, আমি তমুক আমি সোজা রাস্তা দিয়ে যাবো কেন?!
আমার গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে, আমার গাড়ি বা বাস অন্য সবার মতো জ্যামে থাকবে কেন? জানেন আমি বা আমরা কি দিয়েছি!!
আমার গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে, আমার গাড়ি বা বাস অন্য সবার মতো জ্যামে থাকবে কেন? জানেন আমি বা আমরা কি দিয়েছি!!
আমার জন্য প্রাইমারী স্কুলের বাচ্চারা গরমে দাড়িয়ে থেকে অজ্ঞান হবে আর আমাকে মহারাজাদের মতো সম্মান দেখানোর জন্য রাস্তার দুপাশে তারা দাঁড়িয়ে থাকবে, হাততালি দিবে!
আমি শিক্ষিত, তাই রিক্সাওয়ালা আর বাসের কন্ডাক্টরকে তুই তুকারি করার অধিকার রাখি!
আমি শিক্ষক, তাই আমি ভুল করতে পারি না! আমি আইনজীবি, তাই তোমার খবর আছে!
আমি পুলিশ, থানায় চল, ডলা খাবি! আমি রেব, চল অস্ত্র উদ্ধারে যাই!
আমি রাজনীতিবীদ, তাই যা খুশি তাই করবো! আমি সচিব, এইখানেই থাম, কিছু লিখবি বুঝবি!
আমি ছাত্রলীগ/দল/শিবির করি, ক্যাম্পাসে আয়, আঙ্গুল ভাইঙ্গা হাতে ধরায়া দিবো, ঐটারে কলম বানায়া লিখবি!
আমি ভার্সিটি/কলেজের ছাত্র, কি হইছে জানি না, কিছু বুঝি না ভাঙচুর করে সমাধান করবো সব!
আসুন এখন কিছু আসলেই বড় মানুষের(জীবিত) গল্প শুনি:
ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুত সাইকেলে যায় অফিসে। জ্বি, সত্যি শুনেছেন। সাধারণ বারে বসে ফুটবল দেখে। আর শুনুন, ডাচ রাজা(উইলেম আলেকজান্ডার) তার মেয়েকে নিয়ে ম্যাকডোনাল্ডে বসে খাবার খায়। ম্যাকডোনাল্ড হচ্ছে গরীবের বন্ধু (সস্তায় ফাস্ট ফুড পাওয়া যায়, ১ ডলার/ইউরোর বার্গার)। হাঙ্গেরীর প্রেসিডেন্ট হোজে মুজিকা পৃথিবীর সবচেয়ে দরিদ্র প্রেসিডেন্ট। তার দেহরক্ষীসহ ড্রাইভার নাই, নিজে গাড়ি চালিয়ে যান, বেতনের ৯০% চ্যারিটিতে দান করেন। তার একটি উক্তি আমার অনেক ভালো লেখেছে:
“আমি নিজেকে গরীব মনে করি না। গরীব তারাই যারা শুধু কাজ করে নিজেদের বিত্তশালী জীবন ধরে রাখার জন্য, এবং সবসময় আরো বেশি চায়।”
বার্ষিক বেতনের হিসেব সবচেয়ে গরীব প্রেসিডেন্টের তালিকায় আছেন পোপ ফ্রান্সিস(শূন্য ডলার), তারপরে ইরানের আহমেদিনেয়াজ আর হামিদ কারজাই। পাশের দেশ ভারত ষষ্ট আর চীন অষ্টম। কিন্তু বেশিদূর যাবো না, আমাদের দেশের প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদকেই দেখেন। উনি রিকশায় চড়ে যাচ্ছেন গার্ডসহ, মানুষের সাথে কত স্বাভাবিক ভাবে মিশেন। আপনার অর্থ, গাড়ি-বাড়ি, লেখাপড়া, ক্ষমতার বড়াই করে যদি আপনি “মুই কি হনুরে!!” ভাব ধরেন, তবে এই মানুষগুলোকে দেখেন।
আপনার জন্য আলাদা কোন নিয়ম খাটবে না। নিজের জন্য আলাদা আইন বানাবেন না। আপনার জন্য রাস্তার সিগন্যাল উল্টা করবেন না।
আমরা নিজেরা সব অদ্ভূত নিয়ম করে রেখেছি।একটু চিন্তা করে দেখুন, আমরা কয়টা আইন মানি? ট্রাফিক? অফিসে কাজ না করে চা খাওয়া? ডিউটিতে থাকা অবস্হায় ভাবেন এক্সটা খাতির ‘ইজ ওকে!’ কারণ আপনি অমুক! আপনার নিজেকে বড় মনে করা এক চক্র তৈরি করে। আমরা রিক্সায় বসে মন্ত্রীর উল্টো পথে গাড়ি দেখে মন্ত্রীকে গালি দেই, রিক্সাওয়ালাকে দুইটাকা কম দিয়ে বলি মামা স্টুডেন্ট তারপর সিগারেট কিনতে যাই, রিক্সাওয়ালা গালি দিয়ে রাস্তায় মুততে বসে। আসুন, আমরা সাধারণ হই। সাধারণ হবার মধ্যেই সম্মান।
ইন্সপিরেশনাল!
ধন্যবাদ
🙂