চুম্বক ও চুম্বকত্ব নিয়ে পড়তে গিয়ে আমাদের অনেকের অনুভূতিই খুব একটা সুখকর হয় না। এর দায় হল এদের আলোচনায় আগত বিদঘুটে রাশিগুলোর, যাদের নিয়ে স্পষ্ট ধারণা অর্জন করা খুব সহজ কোনো কথা নয়। আমরা বিদ্যুৎশক্তি নিয়ে কাজ করে আসছি ক্লাস সেভেন কি এইট থেকেই। তড়িৎবর্তনীর বিভব, প্রবাহমাত্রা, রোধ তাই যত সহজে আমরা ভিজুয়ালাইজ করতে পারি; কলেজের তড়িঘড়ি করা চার মাসের সেকেন্ড ইয়ারে ম্যাগনেটিজম ততটাই কঠিন বিতৃষ্ণায় গিলে চুপ করে বসে থাকতে হয় (কাউকে কিছু বলাও যায় না)। স্বশিক্ষার এই পর্বে আমরা চুম্বকত্ব নিয়ে বিস্তারিত কথা বলব। আমাদের মূল ফোকাস থাকবে রাশিগুলোর বিশদ ও সহজবোধ্য আলোচনায়, আমরা সাহায্য নেব বিদ্যুৎ থেকে আমাদের ইতোমধ্যে প্রাপ্ত জ্ঞান থেকেও।

চুম্বক ও চুম্বকত্ব (Magnet & Magnetism)

চুম্বক (Magnet) এক প্রকার ধাতব পদার্থ। এতে বিদ্যমান এমন এক অদৃশ্য শক্তি যার প্রভাবে এটি লোহা, নিকেল, কোবাল্ট, প্রভৃতি ধাতু বা ধাতুমিশ্রিত সংকরকে (Alloy) আকর্ষণ করে। চুম্বকের অনন্য ধর্মসমূহকে (আকর্ষণ বা বিকর্ষণ ক্ষমতা, উত্তর-দক্ষিণমুখীতা) সামগ্রিকভাবে চুম্বকত্ব (Magnetism) বলে আখ্যায়িত করা হয়।

চুম্বক প্রধানত দুই প্রকার – প্রাকৃতিক চুম্বক ও কৃত্রিম চুম্বক।

প্রকৃতিতে স্বাভাবিক অবস্থায় যে চুম্বক পাওয়া যায় তা প্রাকৃতিক চুম্বক। এটি অক্সিজেন ও লোহার সংমিশ্রণে গঠিত ঈষৎ কালো বা ঘন ছাই রঙের খণিজ পদার্থ। এ ধরণের চুম্বকের ব্যবহার সীমিত কারণ এগুলো দুর্লভ এবং এদের নির্দিষ্ট আকারও নেই। তাছাড়া বহুদিন ধরে ব্যবহারে এদের চুম্বকত্ব লোপ পায়। অন্য একটি চুম্বকের সাহায্যে ঘর্ষণ বা বিদ্যুৎপ্রবাহের সাহায্যে যে চুম্বক তৈরি করা যায় তাকে কৃত্রিম চুম্বক বলে। এ চুম্বক স্থায়ী বা অস্থায়ী দুইরকম হতে পারে। ইস্পাতকে বিশেষ নিয়মে ঘর্ষণ করে স্থায়ী ও শক্তিশালী চুম্বক তৈরি করা যায়। অন্যদিকে কাঁচা লোহাকে ঘষে কিংবা একে বিদ্যুতায়িত করে যে চুম্বক বানানো হয় তা অস্থায়ী চুম্বকের উদাহরণ।

যেসকল পদার্থকে চুম্বক আকর্ষণ করে ও যাদের চুম্বকে পরিণত করা যায় তারা চৌম্বক পদার্থ (Magnetic material) এবং যেসকল পদার্থকে চুম্বক আকর্ষণ করে না ও যাদেরকে চুম্বকে পরিণত করা যায় না তারা অচৌম্বক পদার্থ (Non-magnetic material) বলে।

চৌম্বকক্ষেত্র (Magnetic field)

কোনো চুম্বকের চতুর্দিকে  যতদূর পর্যন্ত তার প্রভাব (আকর্ষণ বা বিকর্ষণ করার প্রবণতা) বজায় থাকে ঐ স্থানকে চৌম্বকক্ষেত্র বলে। তাত্ত্বিক বিচারে যে কোনো চুম্বকের ক্ষেত্র অসীম দূরত্ব পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে যে কোনো চুম্বকের চতুর্দিকে সামান্য দূর পর্যন্ত চৌম্বকক্ষেত্র বিস্তৃত থাকে। ক্ষেত্র কতটা বিস্তৃত থাকবে তা নির্ভর করে চুম্বক কতটা শক্তিশালী তার উপর।

এ পর্যায়ে এসে একটু দম নেওয়া ভাল। আমরা হড়হড় করে বইয়ের লাইন বলে যেতে নিশ্চয়ই এখানে আসি নি। বইয়ে চৌম্বকক্ষেত্রের কথা আসলেই চৌম্বক আবেশ ক্ষেত্র, চৌম্বকক্ষেত্র, চৌম্বক আবেশ, চৌম্বক ফ্লাক্স ঘনত্ব, চৌম্বক ক্ষেত্র প্রাবল্য বা চৌম্বক প্রাবল্য, চৌম্বক ক্ষেত্র তীব্রতা বা চৌম্বক তীব্রতা হ্যানত্যান হ্যানত্যান হেভিওয়েট কথাবার্তা আমাদের নাভিশ্বাস উঠিয়ে ছাড়ে। আমরা এদের চিনতে শিখব খুব যত্ন করে, তবে এখনই নয়। এ পর্বে চৌম্বক প্রাবল্য, অন্যকথায় চৌম্বক তীব্রতা (Magnetic intensity, যাকে তোমরা H বলে প্রকাশ কর) নিয়ে আলোচনা থাকবে। তার পূর্বে আরো কিছু মৌলিক ধ্যানধারণা ঝালাই করে আসি।

চৌম্বক বলরেখা (Magnetic lines of force)

আমরা চৌম্বক বলরেখার সংজ্ঞা অবশ্যই অতি আদর দিয়ে মুখস্ত করেছি। এত ভালবেসে যা পড়ে এসেছি তা আসলে একটা গাঁজাখুরি ব্যাপার। কেন কেন? এই উত্তর দেওয়ার আগে চল স্মরণ করে আসি তড়িৎ বলরেখাকে।

একটা তড়িৎগ্রস্ত বস্তু তার চারপাশে তড়িৎক্ষেত্র সৃষ্টি করে। তড়িৎক্ষেত্র সৃষ্টি করার অর্থই ঐ এলাকার ভেতর অন্য কোনো চার্জ আসলে তা আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল অনুভব করবে। বিজ্ঞানীরা স্ট্যান্ডার্ড একটা পরিস্থিতি চিন্তা করলেন, তারা সিদ্ধান্ত নিলেন যেকোনো তড়িৎক্ষেত্রে একটি ধনাত্মক চার্জ রেখে দেখবেন ঐ চার্জটির গতিপথ কীরূপ হয়। দেখা গেল, ক্ষেত্র সৃষ্টিকারী চার্জটি ধনাত্মক হলে একক ধনাত্মক চার্জটি বিকর্ষণ অনুভব করে নিচের চিত্রের মত তীরচিহ্ন বরাবর বাইরে ছিটকে আসছে আর ক্ষেত্র সৃষ্টিকারী চার্জটি ঋণাত্মক হলে আকর্ষণের কারণে ঘটছে উল্টো ঘটনা। এই যে তীরচিহ্নগুলো দিয়ে তড়িৎক্ষেত্রে ধনাত্মক চার্জটির গতিপথ বোঝানো হচ্ছে এগুলোই তড়িৎ বলরেখা।

 

PosAndNegEField

কৃতজ্ঞতা : aplusphysics.com

যদি আমরা তড়িৎদ্বিমেরু (Electric dipole) নিয়ে চিন্তা করি, যেখানে ধনাত্মক আর ঋণাত্মক উভয় চার্জ থাকবে, সেক্ষেত্রে ধনাত্মক চার্জটির চলার পথ নিচের চিত্রের মত হবার কথা না?

Field

কৃতজ্ঞতা ucdavis.edu

একটা চুম্বকও এরকম একটা দ্বিপোল ছাড়া আর কিছুই না। চুম্বকের ক্ষেত্রে পোল বা মেরুগুলো হল উত্তর আর দক্ষিণ মেরু। চুম্বক বলতেই তাতে উত্তর আর দক্ষিণ দু’টি মেরু থাকতেই হবে। মেরু নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা আমরা খানিক পরেই করব।

আমরা তড়িৎ বলরেখা খুঁজতে গিয়ে যেমন ধনাত্মক চার্জের গতিপথ বিবেচনায় এনেছিলাম, চৌম্বক বলরেখা ব্যাখ্যা করতে একটা বিচ্ছিন্ন উত্তর মেরু চৌম্বকক্ষেত্রে কীভাবে চলে তা দেখতে চাই। কিন্তু এটা ঘটানো অসম্ভব কারণ বলেই এসেছি উত্তর আর দক্ষিণ মেরু যুগপৎ অবস্থান করে, একটা চুম্বকের উত্তর মেরু থাকলে দক্ষিণ মেরু থাকবে না – এমনটা অবাস্তব। তাই বিচ্ছিন্ন ধনাত্মক চার্জ পাওয়া সম্ভব হলেও বিচ্ছিন্ন উত্তর মেরু পাওয়া কখনই সম্ভব নয়। এটা তড়িৎ আধান (Electric charge) এবং চৌম্বক মেরুর (Magnetic pole) মধ্যে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য।

গাঁজাখুরি হলেও ধরা যাক বিচ্ছিন্ন উত্তর মেরু আমরা আসলেই পেয়েই গেলাম আর একে রাখলাম চৌম্বকক্ষেত্র সৃষ্টিকারী একটা চুম্বকের উত্তর মেরুর কাছে। সমধর্মী মেরু একত্রে আসায় বিকর্ষণ ঘটবে এখানে এবং বিচ্ছিন্ন উত্তর মেরুটি চুম্বকের উত্তর মেরুর কাছ থেকে সরে গিয়ে দক্ষিণ মেরুর দিকে আকর্ষিত হয়ে সেদিকে পাড়ি জমাবে।output_C3qG1yউত্তর মেরুর চলার এই পথই আমাদের চৌম্বক বলরেখা। উপরের এনিমেশনটার মত চলার পথ তো আর একটা নয়। তাই সম্ভাব্য সকল গতিপথকে একীভূত করে চৌম্বক বলরেখাগুলো এভাবে উপস্থাপন করতে হয়: magfluxwতবে একটা স্থায়ী চুম্বক এবং একটা তড়িৎচুম্বকের সৃষ্ট বলরেখার ধরণে একটু পার্থক্য আছে। নিচের চিত্র থেকে দেখ তো তা বুঝতে পারো নাকি!

rXact

তড়িৎচুম্বকে বলরেখাগুলো কুন্ডলীর অভ্যন্তরে বেশি কেন্দ্রীভূত হয়

চৌম্বক বলরেখাগুলো যতটুকু জায়গা জুড়ে ব্যাপ্ত হয়ে থাকে, ততটুকু স্থানেই চৌম্বকক্ষেত্র বিরাজমান থাকে। চৌম্বক বলরেখাগুলো ঘন হলে শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্র নির্দেশ করে। এ ব্যাপারে আরো জানতে আলোচনার শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

মেরু ও মেরুশক্তি (Pole & Pole strength)

চুম্বককে মুক্তিভাবে ঝুলিয়ে দিলে এর যে প্রান্ত সর্বদা উত্তর দিকে মুখ করে থাকে তাকে উত্তর মেরু (North pole) এবং যে প্রান্তটি দক্ষিণমুখী হয়ে থাকে তাকে দক্ষিণ মেরু (South pole) বলে। উত্তর-দক্ষিণ মেরু একটি গুণগত ধারণা (ধনাত্মক-ঋণাত্মক চার্জের মত)। চার্জের পরিমাণ যেমন গণনাযোগ্য তেমন মেরুর শক্তিশালীতাও পরিমাপ করা যায়। এই পরিমাপযোগ্য রাশিটিকে মেরুশক্তি বলে।

সোজা কথায়, চৌম্বক মেরুর আকর্ষণ বা বিকর্ষণ করার শক্তিকে তার মেরুশক্তি বলে। দু’টি তড়িৎগ্রস্ত বস্তুর চার্জ বাড়লে যেমন তাদের মধ্যকার বল বাড়ে, ঠিক তেমনই অধিক মেরুশক্তির মেরু বেশি বেশি আকর্ষণ বা বিকর্ষণ ঘটানোর ক্ষমতা রাখে। এটা ধারণা করে নিতে অসুবিধা হয় না যে চুম্বকের মেরুগুলো উচ্চ মেরুশক্তির হলে স্বভাবতই চুম্বকটিও শক্তিশালী হয়। একটা মেরু কত পরিমাণে বলরেখা নির্গত করতে পারে তা দিয়েও তার শক্তি সম্পর্কে আন্দাজ করা যেতে পারে, তাই নয় কি?

m

বামে কম মেরুশক্তি ও ডানে উচ্চ মেরুশক্তির মেরু

 

মজার ব্যাপার হল, চার্জের মত মেরুসমূহও কুলম্বের সূত্র মেনে চলে। অর্থাৎ

  • দু’টি চৌম্বক মেরু তাদের সংযোজক সরলরেখা বরাবর একটি বল দ্বারা পরস্পরকে আকর্ষণ বা বিকর্ষণ করে
  • এই আকর্ষণ ও বিকর্ষণ বল মেরুশক্তির গুণফলের সমানুপাতিক এবং তাদের মধ্যবর্তী দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক এবং
  • আকর্ষণ ও বিকর্ষণ বল মাধ্যমের প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল

তাহলে, দু’টি মেরুর মেরুশক্তি যথাক্রমে m1 ও m2 ও তাদের মধ্যবর্তী দূরত্ব d হলে, কোনো নির্দিষ্ট মাধ্যমে ক্রিয়াশীল আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল

F ∝m1m2/d2

এখান থেকে F এর সাথে মেরুদ্বয়ের মেরুশক্তি ও দূরত্বের সম্পর্ক বোঝা গেলেও তা নির্ণয় করা সম্ভব নয় যতক্ষণ না আমরা একটা সমীকরণ প্রতিষ্ঠা করছি।  একক মেরুশক্তির দু’টি মেরুর মধ্যবর্তী দূরত্ব 1m রাখলে যে একক বল পাওয়া যায় তাকে k ধরলে এটাই আমাদের সমানুপাতিক ধ্রুবক হতে পারে যার সাথে ইচ্ছামত m1, m2 আর d বসিয়ে আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে মধ্যবর্তী বল F হিসাব করতে পারব।

∴ F = km1m2/d2

মেরুশক্তি হিসাবের আন্তর্জাতিক পদ্ধতি হল Am (অ্যাম্পিয়ার-মিটার) একক। তড়িৎচৌম্বকের আলোচনা থেকে এই এককটি এসেছে বলে এখানে অ্যাম্পিয়ার কথাটা ঢুকে গেছে।

চৌম্বক প্রবেশ্যতা/ভেদ্যতা (Magnetic permeability)

তড়িৎ বলের রাশিমালাটা স্মরণ করা যাক,

e

এই সমীকরণে ε কে আমরা বলি q1 ও q2 চার্জদ্বয় যে মাধ্যমে আছে তার তড়িৎ ভেদনযোগ্যতা বা প্রবেশ্যতা (Electric permeability/permittivity)। অনুরূপভাবে একটু আগে দেখা চৌম্বক বলের সমীকরণে k কে প্রতিস্থাপন করে আমরা লিখতে পারি :

e

μ এর কী পরিচয় তা আশা করি সবাই বুঝে গেছ। এটা হল মাধ্যমের চৌম্বক ভেদনযোগ্যতা বা প্রবেশ্যতা (Magnetic permeability)। প্রশ্ন হল এটা দিয়ে বোঝায়টা কী? খেয়াল করলেই বুঝতে পারবে, μ এর মান বেশি হবার অর্থ F এর মান কমে যাওয়া। তার অর্থ যে মাধ্যম যত বেশি চৌম্বক ভেদনযোগ্য তাতে মেরুদ্বয়ের মধ্যে ক্রিয়াশীল বল তত কম। অচৌম্বক পদার্থের জন্য ভেদনযোগ্যতার মান অত্যন্ত অল্প এবং চৌম্বক পদার্থের জন্য ভেদনযোগ্যতা অনেক বেশি হয়। শূন্যস্থানে ভেদনযোগ্যতার মান 4π×10-7   TmA-1 (এককের ব্যাখ্যা পরে নিজেই পাবে), যা ভেদনযোগ্যতার সর্বনিম্ন মান।

কোনো মাধ্যমের ভেদনযোগ্যতা শূন্যস্থানের ভেদনযোগ্যতার কতগুন তার পরিমাপকে ঐ মাধ্যমের আপেক্ষিক ভেদনযোগ্যতা (Relative magnetic permeability) বলে একে μr দিয়ে প্রকাশ করা হয়। শূন্যস্থান, বাতাস (অচৌম্বক পদার্থ) এগুলোর আপেক্ষিক ভেদনযোগ্যতা 1 এবং চৌম্বক পদার্থের (লোহা, নিকেল) জন্য μr মান 1 এর চাইতে অনেক বেশি হয়।

চৌম্বক প্রাবল্য/তীব্রতা (Magnetic intensity)

চৌম্বক ক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে কল্পিত একক বিচ্ছিন্ন উত্তর মেরু স্থাপন করলে ঐ মেরু যে বল লাভ করে তাকে ঐ বিন্দুর চৌম্বক প্রাবল্য বলে। দেখতেই পাচ্ছ, তড়িৎ প্রাবল্যের সাথে চৌম্বক প্রাবল্যের মিল কতটা। চৌম্বক প্রাবল্য বা তীব্রতাকে চৌম্বক ক্ষেত্র প্রাবল্য বা চৌম্বক ক্ষেত্র তীব্রতা বলেও অভিহিত করা হয়। একে প্রকাশ করা হয় H দিয়ে।

তড়িৎ প্রাবল্যের রাশিমালার আদলে লিখে ফেলা যায় চৌম্বক তীব্রতাকেও :e

দুঃখের কথা হল চৌম্বক তীব্রতাকে এখন আর এভাবে প্রকাশ করা হয় না। যদি জিজ্ঞেস করা হয়, এভাবে চৌম্বক তীব্রতাকে সংজ্ঞায়িত করার সীমাবদ্ধতাটা কী তবে উত্তর কী দেবে? উত্তর এই সমীকরণেই লেখা আছে। দেখ এতে আমি একটামাত্র মেরুর মেরুশক্তি m ব্যবহার করেছি। কিন্তু তোমরা জানো যে একটা চুম্বক মোটেই একটা মেরুকে বোঝায় না। তাছাড়া এখানে ব্যবহৃত d কোন মেরু থেকে দূরত্ব তাও সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারে না। এই সমীকরণটা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে মূলত একটা মেরুর চারপাশে সৃষ্ট তীব্রতা বোঝাতে, পুরো চুম্বকের জন্য নয়।

এই পদ্ধতিতে হিসাবকৃত H আমরা ওয়েরস্টেড (Oersted, সংক্ষেপে Oer) এককে পাই। এটা সিজিএস পদ্ধতির একক। একক মেরুশক্তির কোনো মেরুর উপর এক ডাইন বল প্রযুক্ত হলে ঐ তীব্রতাকে এক ওয়েরস্টেড বলে। অন্যদিকে এসআই পদ্ধতিতে H এর একক A/m (অ্যাম্পিয়ার/মিটার)। একটা ব্যাপার খেয়াল করেছ? সি.জি.এস. এককটি প্রতিপাদিত হয়েছে দু’টি মেরুর মধ্যবর্তী ক্রিয়াশীল আকর্ষণ-বিকর্ষণের উপর ভিত্তি করে। অন্যদিকে এস.আই. এককে আছে বিদ্যুৎপ্রবাহকে জড়িয়ে তার সাথে সংশ্লিষ্ঠ তীব্রতাকে সংজ্ঞায়িত করার প্রচেষ্টা। H কে আগামীদিন তাই আমরা নতুন করেই জানব।

আরো অনেক অনেক অসমাপ্ত কাজ আগামীদিনে সম্পন্ন হবে এই আশাবাদ ব্যক্ত করে আজকের ইতি টানছি। (চলবে)