চন্দননগরের চাঁদুর ফোন বাজছে, ক্রিংক্রিং! ক্রিংক্রিং! চাঁদু ফোন তুলতেই ওপাশ থেকে মিষ্টি কন্ঠ শোনা গেলো..
– হ্যালো? এটা কি বরিশাল?
-হয়, এইডা বরিশাল।
-আপনি কি চাঁদু?
-জ্যা, মুই চাঁদু। আপনি কেডা?
-ইয়েহ ! মানে!
-আপনার নাম ডা কি হেইয়া কি কইবেন? (চাঁদু খুবই উত্তেজিত। কারণ ফোনে যে মেয়েটি তার কন্ঠস্বর খুবই সুমধুর।)
-বিলকিস।
-বাহ! হেইয়া তো খুবই সুন্দর নাম। ( একটু বাড়িয়ে বলছে। যদি লাইনে আনা যায়! )
ফোনে ফোনে এভাবে পরিচয় বিলকিস – চাঁদুর। তারা তাদের সংলাপ চালিয়ে যাক। আমরা ততক্ষণে চিনে আসি বরিশালকে…. কি বলেন?
বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণপ্রান্তে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে সবুজের আবরনে ঢাকা তার আদুরে কন্যা বরিশাল। এ অনন্যভূখন্ডটি ই হলো বরিশাল বিভাগ। এর উত্তরে ঢাকা বিভাগ, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে চট্রগ্রাম বিভাগ ও পশ্চিমে খুলনা বিভাগ। যার আয়তন ১৩ হাজার ২ শত ৯৭ বর্গ কিলোমিটার। ২০১১ সালের আদমশুমারির সাধারণ জরিপে এর জনসংখ্যা ৮১ লক্ষ ৪৭ হাজার। বরিশালের ছয়টি জেলা। জেলাগুলো হল.. ১. ভোলা ২. বরিশাল ৩. বরগুনা ৪. পটুয়াখালী ৫. ঝালকাঠি ৬. পিরোজপুর উপজেলা মোট ৪১ টি। ইউনিয়ন পরিষদ ৩৫২ টি।
এই বিশাল ভূভাগ প্রাচীন গঙ্গার পূর্বগামী পানি প্রবাহের দক্ষিণ দিকের অংশ সুগন্ধা নামে বিখ্যাত নদী উদ্ভূত। প্রাচীন সেই পানি প্রবাহের বয়ে আনা পলি সৃষ্ট ভূখন্ডটি পরবর্তীকালে বিভিন্ন নামে ভূষিত হতে হতে বর্তমানে বরিশাল নামে বিখ্যাত হয়ে আছে। ঠিক কোন সময়ে এবং কারা বরিশাল অঞ্চলে সর্বপ্রথম বসতি স্থাপন করেছিল তা নিশ্চিতভাবে নির্ণীত না হলেও বহিরাগত কিছু আদিম জনগোষ্ঠী প্রাচীন এই ভূখন্ডে বসতি স্থাপন করেছিলো বলে ধারণা করা হয়। তবে সেই জনগোষ্ঠীসমূহের পরিচিতি সম্পর্কে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনীতে প্রাচীন সেই জনগোষ্ঠীর পরিচয় ভিন্ন ভিন্ন ভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।
আমরা এখন চাঁদু -বিলকিসের কাছে ফিরে যাবো…
-বিশ্বাস কর বিলকিস! বরিশাল এতই রুপবতী যে ঠিক তোমার মত।
-ওহ তাই?
-হুম। ( ওপাশ থেকে হাসির শব্দ পেয়ে চাঁদুর বুকে ধুক কতে উঠলো। চাঁদু কল্পনায় এক সুন্দরী বিলকিস কে দেখছে… )
অতঃপর বিলকিস চাঁদুর কাছে বরিশাল এর ইতিহাস জানতে চাইলো।
মধ্যযুগে খন্ড খন্ড দ্বীপ, জলাভূমি নিয়ে গঠিত হওয়া এই অঞ্চল এর পুর্ববাংলা ত্রয়োদশ শতকে জয় করেছিলেন মুহম্মদ বিন তুঘলক। তুঘলক শাসকগোষ্ঠী হিন্দু শাসকদের হটিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন মুসলিম শাসন। হিন্দু সম্প্রদায় দূরে গিয়ে বসতি স্থাপন করেন। মুঘল আমলে মুসলিম অগ্রদূতগণ এ অঞ্চল শাসন করতে থাকে এবং সপ্তদশ শতকে ঢাকায় রাজধানী স্থাপন করেন। এ অঞ্চল তখন ঢাকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ধীরে ধীরে এখানে বণিক ও সওদাগরগণ এসে বসতি স্থাপন শুরু করে। ফলে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে আরাকানি ও পর্তুগিজ জলদস্যুদের সংখ্যা বেড়ে যায়। পরে এই বহিরাগত জলদস্যু দের হটানো সম্ভব হয়। ১৬৬৬ সালের পর মুঘল নৌশক্তি বহিরাগত এ জলদস্যুদের দমন করতে সক্ষম হয় এবং শাসকদের নির্দেশে এদের শাস্তি দিয়ে ঘন জঙ্গলে নিয়ে রেখে আসা হত। পরবর্তিকালে অধিক ভুমির (তালুক) মালিকগণ ভুমি (তালুক) কৃষিতে লাগাতেন। এবং একসময় তালুকদার নামে অধিষ্ঠিত হন। তারপর জমিদার ও দেওয়ান। অগ্রগতির দ্বিতীয় ধাপে এখানে পীর ফকিররা এসে বসতি স্থাপন করেন ও স্থানীয় আধিপত্য স্থাপন করতে শুরু করেন। মুঘলদের সাথে সাথে সম্পর্ক ভালো থাকলে ও তাদের মধ্যকার আধিপত্য বিস্তার নিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিলো। কিন্তু ১৯০৬ সালে তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী তাদের বিজিত অঞ্চলগুলো থেকে অন্যান্য আধিপত্য ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছিলো। ব্রিটিশ শাসনামলে ১৭৯৭ সালের পর এ অঞ্চলের দ্রুত অগ্রগতি হতে থাকে। এবং সবশেষে ১৯৯৩ সাথে বরিশাল স্বতন্ত্র বিভাগে পরিণত হয়।
এদিকে চাঁদু ঠিক করেছে বরিশালের গুনগান গেয়ে যেভাবেই হোক বিলকিস কে মুগ্ধ করবেই করবে! সে বিলকিস কে বরিশালের নামকরণের পেছনে বেরি-শৈলী সেই বিখ্যাত প্রেমকাহিনী শোনাতেও ভোলে নি।
নামকরণের ইতিহাস
ঐতিহাসিককাল থেকে এই অঞ্চল টি চন্দ্রদ্বীপ, বাকলা, বাকেরগঞ্জ ইত্যাদি নামে পরিচিত হয়ে থাকলেও বর্তমানে বরিশাল নামে পরিচয় বহন করছে। অতীতকালের উল্লিখিত নামসমূহের উৎস সম্পর্কে বিভিন্ন তত্ত্ব প্রচলিত রয়েছে। যুক্তিযুক্ত কয়েকটি তত্ত্ব উপস্থাপন করা হলো।
চতুর্থ শতকে গুপ্ত বংশীয় রাজাদের রাজত্বকালে এই অঞ্চল চন্দ্রদ্বীপ নামে পরিচিত হয়। রাজা চন্দ্রবর্মা দক্ষিণাচল জয় করে নিজ নামে এই অঞ্চলের নামকরণ করেন। পরবর্তি সময়ে বাকলা নামটিও ব্যাপকভাবে প্রচলিত হতে থাকে। বাকলা নামকরণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ব্যাখ্যা উপস্থাপন করা হলেও গ্রহনযোগ্য ব্যাখ্যা হিসেবে বলা যায় যে, প্রাচীনকাল থেকে খাদ্যশস্যে সমৃদ্ধ এই এলাকা টি বহিরাগত ব্যবসায়ীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছিল। এই ব্যবসায়ীদের মধ্যে আরবী ব্যবসায়ীরা ছিলো অন্যতম। সেই বণিকেরা পরিচিতির জন্য এই এলাকা কে শস্য ব্যবসায়ীদের স্থান হিসেবে অভিহিত করতো বলে জানা যায়। আরবি ভাষায় বকাল শব্দের অর্থ শস্য ব্যবসায়ী। এই শব্দটি থেকে বাকলা নামটির উদ্ভূত হওয়া খুবই যুক্তিযুক্ত। বাকেরগঞ্জ নামকরণের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার জটিলতা পরিলক্ষিত হয়না। জমিদার আগা বাকেরের মৃত্যুর পর তার জমিদারি এই নামে পরিচিত হতে থাকে। ক্রমানুসারে এরপর বরিশাল নামকরণ প্রসঙ্গ। এই নামকরণের মতভেদ থাকলেও কথিত আছে, বৃটিশ শাসনামলে শেলী নামের প্রেমে ব্যর্থ হয়ে আত্নাহুতি দেয় জৈনিক ইংরেজ দুহিতা এবং বেরি নামের জৈনিক পর্তুগিজ। কেউ কেউ মনে করেন বেরি শেলীর প্রেম কাহিনী র জন্য বরিশাল নামকরণ করা হয়েছে। আবার কেউ কেউ মনে করেন পূর্বে এখানে বড় বড় শাল গাছ জন্মাতো। আর এই বড় বড় শাল গাছের কারণে (বড়+শাল) বরিশাল নামের উৎপত্তি। আরো মতবাদ রয়েছে, গিরদে বন্দরে (গ্রেট বন্দর) ঢাকার নবাবদের বড় বড় লবনের গোলা ও চৌকি ছিলো। ইংরেজ ও পর্তুগিজ বণিকরা বড় বড় লবনের চৌকিকে বরিসল্ট বলতো। অর্থাৎ বরি(বড়) + সল্ট(লবন) = বরিসল্ট। আবার অনেকের ধারনা এখানকার লবনের দানাগুলো বড় বড় ছিল বলে বরিসল্ট বলা হত। পরবর্তিতে এ শব্দ টি পরিবর্তিত হয়ে বরিশাল নামের উৎপত্তি হয়েছে।
সেকি! বিলকিস এখন আবার বরিশালের নদী-প্রকৃতি সম্পর্কে জানতে চায়। বিলকিস এর কি হলো? 😮
বিলকিসের ইচ্ছা পূরণ না করে চাঁদু যাবে কোথায়? সে বলতে শুরু করল,
বরিশালের নাড়ি হল কীর্তনখোলা যার তীরে বরিশাল অবস্থিত। ‘কীর্তনখোলা’ এ শব্দটি উচ্চারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উজ্জ্বল নারীর মত এক নদীর দৃশ্য ভেসে ওঠে চোখে। নদীর তীরে বাস করা এ অঞ্চলবাসী নদীকে ঘিরেই বেঁচে থাকে। নদীকে ঘিরেই এখানকার জনজীবন। নদীর সাথে বরিশালের মানুষের নাড়ীর সম্পর্ক এবং নদীর সাথে এ জনপদের জীবন এক সুঁতোয় গাঁথা। নদীতে পার ঘেঁষেই শহরের সবচেয়ে পুরনো হাট রয়েছে। প্রচলিত রয়েছে, সেখানে কীর্তন এর উৎসব হত। সেই থেকে এই নদীর নাম হয়েছে কীর্তনখোলা। কেউ কেউ হাটখোলায় স্থায়ীভাবে কীর্তনের দল বসবাস করার কারনে এর নাম কীর্তনখোলা হয়েছে বলে মনে করেন। তবে নদীর নামকরণের সঙ্গে কীর্তনের কিংবা কীর্তনীয়দের যে একটা সম্পর্ক ছিল তা নিশ্চিত। কৃষ্ণলীলার কাহিনী নিয়ে কীর্তনীয়রা গানে মেতে থাকতেন। কৃষ্ণ রাধাকে নিয়ে যমুনা নদীতে লীলায় মেতে উঠতেন। বরিশালে যমুনা নদী না থাকলেও কীর্তনখোলা নদীই যেন রাধা-কৃষ্ণের অমর প্রেমের গাঁথা হয়ে আছে। কীর্তনখোলা মূলত আড়িয়াল খাঁ নদের একটি শাখা। আড়িয়াল খাঁর উৎপত্তি পদ্মা থেকে। বরিশাল ঘেঁষে কীর্তনখোলা নদী পশ্চিমে এগিয়ে নলছিটি থানার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে। সেই সঙ্গে পরিচিতি পেয়েছে নাম। একটি অংশ ধানসিড়ি নাম নিয়ে কচা নদীতে গিয়ে মিশেছে। অপর অংশ মিলেছে বিষখালী নদী তে। দেণি কীর্তনখোলা রাণীহাট বাকেরগঞ্জ গিয়ে মিশেছে। কীর্তনখোলা নদীতে ব্রিটিশ স্টিমার কোম্পানির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে চলত বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদা জ্যোতিন্দ্রনাথ ঠাকুরের জাহাজ। রবীন্দ্রনাথ সেই জাহাজে করে বরিশালে এসেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ পানসীঘাটে পানসীতে রাতযাপন করেন। কীর্তনখোলার বুকে সে সময় জমিদারদের পানসী ভাসত নানান চমক নিয়ে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম কীর্তনখোলার বুকে পদচিহ্ন একেঁছিলেন। কীর্তনখোলা নদীর কারনে বরিশাল হয়ে উঠেছিলো এক অপূর্ব শহর।
অসংখ্য নদ-নদী ও খালের জন্য বরিশালের নাম হয়েছে নদ-নদীর বরিশাল। বরিশালের নদীগুলোর কিছু নৈস্বর্গিক দৃশ্য দেখবেন? এই দেখুন….
“বেইন্নাকালে শিশির ঢোলে কাডাল পাতার গায় হালিক পাখির ছোট্ট ছাওয়ে চৌক মেইল্লা চায়।দিন দুহারে খালের ধারে পক্ষী বোলে ডালে সন্ধ্যা কালে জুনিক জ্বলে ছইলা গাছের তলে।বোহের মাঝে কেবল বাজে বাংলাদ্যাশের গান, এই দ্যাশেরি মাডি মোগো খোদার দেয়া দান। ”
বরিশালের দর্শনীয় স্থান
দূর্গাসাগর বরিশাল শহরের মধ্যে অবস্থিত চন্দ্রচীপ রাজ্যের পঞ্চদশ রাজা শিব নারায়ণ রায়ের অসামান্য কীর্তি। স্ত্রী দূর্গাবতীর প্রতি ভালোবাসার গভীরতা প্রমাণের জন্যেই নাকি তিনি রাজকোষ থেকে ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে এ দীঘি নীর্মাণ করেন। কথিত আছে, রাণী দূর্গাবতী যতদূর পর্যন্ত হাঁটতে পেরেছেন ততখানি জায়গা নিয়ে এ দীঘি খনন করা হয়েছে। এই যে সেই অপরুপ দূর্গাসাগর…
এছাড়া ও রয়েছে কীর্তনখোলা নদী, বিবির পুকুরপাড়, বিএম কলেজ, অশ্বিনী কুমার হল, অক্সফোর্ড মিশেন, মুকুন্দ দাশের কালীবাড়ি, কড়াপুর মিয়া বাড়ি মসজিদ, বায়তুল আমান মসজিদ, শেরে বাংলা জাদুঘর, শিকারপুরের তারা মসজিদ, মাহিলারা সরকার মঠ, কসবা মসজিদ, গুঠিয়া মসজিদ, বেলস পার্ক, বঙ্গবন্ধু উদ্যান ইত্যাদি।
আরো রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দুইটা সমুদ্র সৈকতের মধ্যে একটি একমাত্র যেখানে কিনা সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দুই-ই দেখা যায়। এছাড়া কুয়াকাটা র পশ্চিমে ফাতরার বন, এই ম্যানগ্রোভ বনে মিলে নানা জীববৈচিত্রের সন্ধান। আরো আছে কুয়াকাটারর কুয়া, শুঁটকিপল্লী, রাখাইনপল্লী ও সীমা বৌদ্ধ মন্দির।
আছে বরিশালের বৃহত্তম জেলা ভোলার অপরুপ সৌন্দর্য। ভোলায় আছে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল জাদুঘর, কবি মোজাম্মেল হক টাউন হল। চরের জন্য বিখ্যাত এই জেলাতে রয়েছে চরফ্যাশন, চর শাহজালাল, চর শাহপরান, ঢাল চর, চর মনপুরা, চর কুকরী-মুকরী, চর মন্তাজ, চর নিজাম, চর কালাম সহ আরো অনেক। ইলিশের জন্য বিখ্যাত এই ভোলা। মৌসুমে এখানে বস্তায় দরে ইলিশ কেনে ভোলাবাসী এবং দেশের অন্যত্র মাছ সাপ্লাই দেয়।
বিলকিস-চাঁদুর ভালই ভাব জমেছে! সে বিলকিস কে বরিশালের সেরা ব্যক্তিত্ব দের সাথে পরিচয় করাতেও ভুলে নি…
বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ
বরিশালের রূপ সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর নাম দিয়েছেন প্রাচ্যের ভেনিস। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে এ অঞ্চলের আত্নীয়তা ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল। এখানে জন্ম নিয়েছেন মহাত্না অশ্বিনী কুমার দত্ত, বাংলার বাঘ শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হক, সাংবাদিকতারর পথিকৃৎ নির্ভীক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, কবি সুফিয়া কামাল, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নেতা অগ্নিপুরুষ বিপ্লবী দেবেন্দ্রনাথ ঘোষ, নলিনী দাস, মনোরমা মাসিমা, দানবীর অমৃত লাল দে, মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ ম-ল, কৃষক কুলের নয়নমণি আব্দুর রব সেরনিয়াবাতসহ অনেক ক্ষণজন্মা নারী-পুরুষ। একুশে ফেব্রুয়ারি ও মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে বরিশালের রয়েছে। গর্বিত ইতিহাস। ভাষা আন্দোলনের শহীদ্দের নিয়ে রচিত ‘আমার ভাইয়ের রক্ত রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি’ গানের রচয়িতা ও বিশিষ্ট কলামিস্ট আব্দুল গাফফার চৌধুরী এবং গানটির সুরকার ও শিল্পী আলতাফ মাহমুদ জন্ম নিয়েছেন এই বরিশালে। স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বীরশ্রেষ্ঠ ইঞ্জিনিয়ার ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর, বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল, বীর উত্তম আব্দুস সাত্তার ও মেজর জলিলকে নিয়ে এখানকার মানুষ এখনো গর্ব করে। রুপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের শৈশব ও অর্ধজীবন কেটেছে বরিশাল শহরেই। একইভাবে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অপর নেতা চারণ কবি মুকুন্দ দাসও এইখানে ই শৈশব কাটিয়েছেন। এছাড়া এখানে জন্মেছেন কবি ও লেখক আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ, আহসান হাবীব, আরোজ আলী মাতব্বর, কামিনী রায়, শশীভূষণ দাসগুপ্ত, লেখক হুমায়ুন কবীর, আসাদ চৌধুরী, সরকার ফজলুল কবীর, আদি কবি মিন্নাত, কুসুম কুমারী দাস প্রমুখ। এখানে জন্ম নিয়েছেন গোলাম মোস্তফা, সূবর্না মোস্তফা, মিথুন চক্রবর্তী, শ্রাবন্তী, মোশাররফ করিম, হানিফ সংকেত, কেসবচন্দ্র সেনগুপ্ত, সিদ্ধেশ্বর মুখোপাধ্যায়, মানাবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, কাদাম্বিনি গাঙ্গুলী, কম্পোজার অনীল বিশ্বাস প্রমুখ টিভি পারসোনালিটি।
আহ!! অনেক কিছু জেনে ফেলেছেন… নাহ! আর কিচ্ছু জানাবো না। একটা গান শুনবেন? শুনেন-ই না একটা গান বরিশাইল্যা ভাষায়…
” ও গেদু তুই কম্বে গেলি?
তড়াতড়ি আয় তোর নানা আইছে
সালুন নিয়া, ভাত খাতি বুলায়।
মুড়া-মুড়কি কিনি আনছে,
আরো আনছে আম..
কতফর এউক্কা কাডল আনছে
হত্তুর টাহা দাম
আরো জানি কি কি আনছে (২)
তুই দেখি যা আয়.. ঐ
কাইল বিয়ানে দেওরের লেইক্কা
কাডবি রেন্টি গাছ
পুহুত্তুনে ধরবি এউক্কা
ডাংগর কাতল মাছ
বুড়া মানু গুস্ত খা না (২)
মাছ খাতি মুলায়… ঐ
ওহ গেদু তুই….
ওহ! আমাদের চাঁদু বিলকিস এর কি হল? চলুন একটু ঢুঁ মেরে আসি… বিলকিস এখন চাঁদুর বরিশালে আসতে চায়। চাঁদুর কাছে… কিন্ত সে কিভাবে আসবে?যাতায়াত
বরিশাল ই দেশের একমাত্র বিভাগ, যার সাথে কোনো অঞ্চলের রেলপথ নেই। বিস্তীর্ণ জলাভূমি ও নদ-নদীর জন্য বরিশালে প্রবেশের ক্ষেত্রে নদীপথ পেরুতেই হবে। ঢাকা এবং বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চল হতে লঞ্চ, ফেরীতে করে বরিশালে আসা যায়। এছাড়া স্থলপথে বরিশালের কাছাকাছি এসে নৌকা, স্টিমার বা লঞ্চে নদী পেরিয়েই বরিশালে প্রবেশ করা যায়।
অতঃপর কোনো এক পড়ন্ত বিকেলে নদী পেরিয়ে বরিশালে পা রাখলো গল্পের নায়িকা বিলকিস…
প্রিয় পাঠক, চাঁদু -বিলকিসের সাথে থেকে ধৈর্য্য সহকারে নৈস্বর্গিক বরিশাল কে জানার জন্য ধন্যবাদ। ভুল-ত্রুটি হলে ক্ষমাসুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন…
তথ্য সুত্রে: বরিশালের ইতিবৃত্ত ( সাইফুল আহসান বুলবুল), Amazing Barisal, Barisal Today. Website : barisaldiv.gov.
ছবি: Timur Photography, আমাদের বরিশাল
🙂 মজার
সুন্দর। আর গানটা মজার। :p
” ভালোবাসাই আসল মসলা ” :’)