শেকড় থেকে ডালপালা, সমস্যার অন্তহীন বিস্তৃতি

শেকড় থেকে ডালপালা, সমস্যার অন্তহীন বিস্তৃতি

 

 

“Inside, everyone is surviving battles we don’t know about.”

আমাদের চারপাশের সবচেয়ে বড় অদ্ভুত জিনিস হচ্ছে এখানে সবাই যুদ্ধকরছে। মুখে দিগন্তজোড়া হাসি নিয়ে ভেতরে আকাশ সমান দুঃখ পুষছে। আমরা বেশিরভাগই তাই, অথচ কেউ কারো সাহায্যে এগুতে পারছি না। আমাদের সমাজে এখনো মানসিক রোগকে হেয় করা হয়, মানসিক রোগীদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে হাসির পাত্র বানানো হয়। এখানে পাগল শব্দটি কৌতুকের চরিত্র বিশেষ।
এরই মাঝে কেউ কেউ ভেতরের কষ্ট পালতে পালতে একসময় মানুষটাই ভেতর বাইরে বদলে যায়। তৈরি হয় চুড়ান্ত হতাশা, অবসাদ, জীবনের জন্যে ক্লান্তি আর বিমুখতা। তারা ডুবে যায় নাম না জানা এক অন্ধকার জগতে। হাতড়ে বেড়ায় খুঁটি এমন একটা সমাজে যেখানে সবাই “এইসব তোমার নিজের তৈরি করা জটিলতা। সময়মতো খাও, ঘুমাও, পড়াশোনা করো সব ঠিক হয়ে যাবে” শোনাতে ব্যস্ত।
এই সিরিজে তাই আমরা মানসিক সমস্যা, ভুক্তভোগীদের করণীয়, তাদের স্বজনদের করণীয় নিয়ে আলোচনা করবো। বেসিক কাউন্সিলিং করবো এবং করানো শিখাবো। আমরা দেখবো, জানবো, শিখবো, শেখাবো। আমরা বুঝবো।


আজকে শূন্য পর্বে, আমরা কেবল বেসিক একটা ধারণা নিবো মানসিক সমস্যা সম্পর্কে।

মানসিক সমস্যার রেইঞ্জ খুবই বিশাল, যে কারণে তাকে সংজ্ঞায়িত করা খুবই কঠিন। আমরা পুঁথিগত সংজ্ঞার দিকে না গিয়ে, বাস্তবে তার ক্যাটেগরাইজেশন করার চেষ্টা করবো।
প্রথম যে জিনিসটা আত্মস্থ করে নিতে হবে সেটা হচ্ছে কোন মানসিক সমস্যা বা ডিলেমাই ছোট নয়। আপাতদৃষ্টিতে আমাদের কাছে সামনের জনের সমস্যা গুলো খুব তুচ্ছ মনেহলেও, যে তার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে একমাত্র সেই জানে তার তীব্রতা। একটা সামান্য পরীক্ষা খারাপ বা হীনমন্যতা বা সিভিয়ার ডিপ্রেশন – এই তিনটা অত্যন্ত ভিন্ন ভিন্ন মনোকষ্টের রিয়েকশন ব্যক্তিভেদে একই তীব্রতা সম্পন্ন হতে পারে।
অর্থাৎ, আমরা মানসিক সমস্যা কে এভাবে বলতে পারি, যে সমস্যাগুলো কারো মানসিক শান্তি, গ্রোথ এবং স্বাভাবিক চিন্তাভাবনা কে দীর্ঘমেয়াদে ব্যহত করে, তাই মানসিক সমস্যা।
এখন সমস্যা যতই ছোট বড় হোক না কেন, তা বিবেচ্য নয়। মানুষটার কষ্টগুলোই সবচেয়ে বড় বিবেচনা।
মনস্তত্ত্ব নিয়ে কাজ করতে সবচেয়ে বেশি যে জিনিসটা প্রয়োজন তা হচ্ছে কমনসেন্স।
উদাহরণ হিসেবে বলি, মানসিক সমস্যা কিন্তু যেকোন বয়সেই হতে পারে। তবে প্রতিটা বয়সের সাথে আসা মানসিক পরিবর্তনগুলোও আমাদের মাথায় রাখতে হবে। যেমন টিনেজে কিছু বয়সের স্বাভাবিক জটিলতা গুলোই এসে হাজির হয় – পারিবারিক অশান্তি, প্রেমঘটিত বিষাদ। তার মানে এই নয় যে তার সমস্যাগুলো হালকা, তার মানে এই যে আপনার তাকে বোঝাতে হবে এই সমস্যাগুলো স্বাভাবিক এবং একসময় কেটে যাবে। এই ব্যাপারগুলো ডিল করা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা আমরা পরে করবো।

আজকের পর্বে ছাড়া-ছাড়া কিছু আলোচনার মাধ্যমে এই সিরিজের বিষয়বস্তু নিয়ে কিছু ধারণা দেয়া হলো। সামনের পর্বে আমরা ধারাবাহিকভাবে মনস্তত্ত্ব নিয়ে বিশদে গল্প করবো। জানবো কিভাবে পাশের বন্ধুটির মুখে আরেকটু খাঁটি হাসি আনা যায়, কিভাবে একান্তে ভিজে ওঠা অসহায় চোখগুলোতে হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনা যায়। জীবনটা খুব সুন্দর, একটা সাহায্যের হাত, একটা ভরসার কাঁধ আর একটা সঠিক দৃষ্টিভংগীর প্রয়োজন শুধু!

 

ছবি কৃতজ্ঞতা: গুগল।

 

সিরিজের বাকি পর্বগুলোর লিংক:

পর্ব এক