ভালবাসা দিবস উপলক্ষে মিস্টার এবং মিসেস কাউয়া লং ড্রাইভ থুক্কু লং ফ্লাই করতে বের হয়েছেন।মিসেস কাউয়ার প্রিয় কাজ বকবক থুক্কু কা কা করা এবারো তার ব্যাতিক্রম হচ্ছেনা। শান্ত শিষ্ট মিস্টার কাউয়া চুপচাপ স্ত্রীর কা কা শুনতে শুনতে হঠাৎ লক্ষ্য করলেন যে তিনি কা কা র বদলে খা খা করছেন।
চারপাশে কোন খাদ্যদ্রব্য দেখতে না পেয়ে মিস্টার কাউয়া নিচে তাকিয়ে দেখতে পেলেন তারা দুজন সিলেটে চলে এসেছেন।

মিসেস কাউয়ার কা কা খা খা হয়ে যাওয়ার রহস্য পরে জানা যাবে তবে তার আগে কিছুক্ষণ কাউয়া দম্পতির সফরসঙ্গী হওয়া যাক।
বাংলাদেশের মানচিত্রের উপরের দিকের বাম পাশের ছন্নছাড়া ত্রিভুজটির নাম সিলেট।ত্রিভুজটিকে আমরা আদর করে দুইটি পাতা একটি কুড়ির দেশ, পুণ্যভুমি,৩৬০ আউলিয়ার দেশ সহ আরো অনেক কিছুই ডাকি।

আগামীকাল যদি আপনার ভূগোল না পরীক্ষা থাকে তাহলে নিচেরটুকু স্কিপ করুন। :p সিলেট বিভাগের উত্তর অক্ষাংশ ২৩.৫৯’ থেকে ২৫.১৩’ এবং পূর্ব দ্রাঘিমা ৯০.৫৮’ থেকে ৯২.৩৮’ মধ্যে অবস্থিত।বিভাগটি সমুদ্র থেকে ৫৫ ফুট উর্ধ্বে স্থিত।সিলেটের উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্য,দক্ষিণে ভারতের ত্রিপুরা, পূর্বে আসাম এবং পশ্চিমে নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ জেলা। সিলেট বিভাগ বাংলাদেশের উত্তর পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত একটি প্রশাসনিক অঞ্চল যা হবিগঞ্জ,মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলা নিয়ে গঠিত।

পৌরাণিক যুগে এ অঞ্চল কামরুপ রাজ্যের অন্তর্ভূত ছিল।প্রাচীন কালে দ্রাবিড়, মঙ্গলীয় জনগোষ্ঠী এ অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছিল বলে ধারণা করা হয়। খৃষ্টীয় সপ্তম শতকের পর জয়ন্তিয়া,গৌড় ও লাউড় নামে তিনটি স্বতন্ত্র রাজ্যে বিভক্ত ছিল।প্রাচীন গৌড় রাজ্যই বর্তমান সিলেট বিভাগীয় শহর বলে ধারণা করা হয়।দশম শতাব্দীতে এ অঞ্চলের কিছু অংশ বিক্রমপুরের চন্দ্রবংশীয় রাজাদের দ্বারা শাসিত হয় বলে জানা যায়।১২০৪ সালে ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজির বঙ্গ বিজয়ের মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলে মুসলিম শাসন শুরু হয়। ১৩০৩ সালে দরবেশ শাহজালাল দ্বারা গৌড় রাজ্য বিজিত হলে দিল্লির সুলতানদের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ভাবে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।তখন আউলিয়া শাহজালালের সাথে মিল রেখে অঞ্চলের নাম রাখা হয় জালালাবাদ।১৫৭৫ সালে শক্তিশালী মোঘল সাম্রাজ্য এর অন্তর্ভুক্ত হলে এ অঞ্চলের ভৌগলিক সীমারেখায় অনেক পরিবর্তন আসে। ১৭৬৫ সালে সিলেট বিভাগ ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানির দখলে আসে।১৭মার্চ, ১৭৭২ তে সিলেট জেলা গঠিত হয়ে ১৮৭৪ পর্যন্ত ঢাকা বিভাগের অন্তর্ভুক্ত ছিল।ঐ বছর ১২ সেপ্টেম্বর সিলেটকে নবসৃষ্ট আসাম প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।১৯৪৭ সালের আগ পর্যন্ত (১৯০৫-১৯১১, বঙ্গ ভঙ্গ সময়টুকে বাদ দিয়ে) সিলেট আসামের অংশ ছিল।ভারত বিভক্তির সময় গণভোটের মাধ্যমে এ অঞ্চল পাকিস্তান রাষ্টের অধীন হয়।তখন সিলেট ছিল চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্ভুক্ত। ১৯৯৫ সালের ১ আগস্ট সিলেট বিভাগের জন্ম হয়।
পূর্বে শ্রীহট্ট নামে পরিচিত ছিল সিলেট। এই শ্রীহট্ট নামকরণ এর সাথে জড়িয়ে আছে অনেক ইতিহাস। বিভিন্ন সময়ে নানা জন শ্রীহট্টের নামকরণের সম্পর্কে তাদের মতামত প্রকাশ করেছেন। #প্রাচীন গৌড়ের রাজা গুহবা তার কন্যা শীলা দেবীর নামে একটি। শীলাহাট থেকে বলা হয়।

  •   হিন্দু পুরাণ মতে সতী দেবীর হাড় বা হড্ড উপমহাদেশের ৫১ টি স্থানে পতিত হয়।সতীর দুটি হাড় নাকি সিলেটেও পড়েছিল। সতীর অপর নাম শ্রী।শ্রী+হড্ড থেকে শ্রীহট্ট নাম হয় বলে ধারণা করা হয়।
  •  হযরত শাহজালাল কর্তৃক ‘শীল হট যাহ’ হুকুম থেকে সিলহট নামের উৎপত্তি বলেও ধারণা করা হয়।

ও হ্যা, মিসেস কাউয়ার ‘কা কা’ খাখা হয়ে গিয়েছিল। মনে আছে?
চলুন দেখি কেন। সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় ক,প এর উচ্চারণ যথক্রমে অনেকটা খ,ফ এর মতো। ঘ,ধ,ঠ,ভ এর উচ্চারণ যথাক্রমে গ,দ,ট,ব এর মতো।সিলেটিরা ‘কাল এসেছি’ কে বলে ‘খাইলাইসি’ ‘খেয়ে ফেলেছি’ কেও বলে ‘খাইলাইসি’ একই উচ্চারণেও কিভাবে আলাদা আলাদা উত্তর বুঝে নেয় তা এক বিস্ময় ।সিলেটের ভাষা সম্পর্কে একটা কৌতুক প্রচলিত আছে। বাংলাভাষা সিলেটে ঢুকতেই আহত হয়েছিল।তবে কৌতুকটি আমার একদম পছন্দ হয়নি। সিলেটি ভাষা বাংলা ভাষার কোন আঞ্চলিক রুপ নয়।জাতিসংঘ দ্বারা স্বীকৃত ৩০০০ টি পুর্নাঙ্গ ভাষার মধ্যে একটি। এ ভাষার আছে নিজস্ব বর্নমালা। সিলেটের নিজস্ব একক বর্নমালাকে বলা হয় সিলটি নাগরী। এই লৈখিক পদ্ধতিতে রয়েছে ৩২ টি বর্ণ। ৫ টি মাত্র স্বরবর্ন বাকি সব ব্যাঞ্জন। ১৬টি সংযুক্ত বর্ণের প্রথমটি বাংলা বা সংস্কৃত ভাষায় পাওয়া যাবেনা। সংযুক্ত বর্ণটি আলিফ-লাম-আল। কেবল আল্লাহ লিখতেই এটি ব্যবহৃত হয়।আর হ্যা, নাগরী লিপিতে কিন্তু ও কার নেই। ও কারের কাজটা সিলেটিরা উ কার দিয়ে দিব্যি চালিয়ে নেয়। 12717644_1045870555471398_6261435042110458225_n

সিলেটি নাগরী বাংলা বা দেবনাগরীর (হিন্দি লিখতে যে ভাষা ব্যবহৃত হয়) সাথে সম্পর্ক নেই। বিহারের কায়তি বর্ণমালার সাথে এর কিছুই সাদৃশ্য থাকলেও তা পুরোপুরি এক নয়।

সিলেটি ভাষা কেবল একটি আঞ্চলিক ভাষাই নয়। এ ভাষার আছে নিজস্ব বর্নমালা যা দ্বারা সৃষ্টি হয়েছে লোকসাহিত্য।অন্তত ২৫০ বছর থেকে খুবই সমৃদ্ধ সাহিত্য ভান্ডার রয়েছে যা নাগরী লিপিতে লিখিত। মুদ্রিত বা হাতে লেখা এ সিলেটি বইগুলোকে পুথি বলা হয়। সাহিত্যকর্মগুলো দেশভাগের সময় অবহেলিত আজ হৃতপ্রায়।এ সাহিত্যাবলি গদ্য নয়। এগুলো রচিত হয়েছিল বর্ণনামূলক গীতিকবিতা যা “বয়ান” নামে পরিচিত এবং পয়ার ছন্দ,ত্রিপদী বা রাগ এর সমন্বয়ে গঠিত।

আব্দুল করিম সিলেটি নাগরী সিলটি নাগরী মুদ্রণ ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন ১৮৬০ সালে। সিলেট, সুনামগঞ্জ, কলকাতা এবং শিলং এ কিছু ছাপখানা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৭১সালের সর্বশেষ সিলেটি নাগরী ছাপখানাটি ধ্বংস হওয়ার আগ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।১৯৯০ সালে রজার গোয়িন,আব্দুল জলিল এবং সু লয়েড আলাদা আলাদা ভাবে সিলটি নাগরী কম্পিউটার ফন্ট তৈরি করেন।আজও কিছু কিছু সিলটি বয়াতি বাউল হাতে নাগরি লিপি লিখছেন।

আহহা! প্রিয় পাঠক, এত ধৈর্য নিয়ে উপরের সবটুকু পড়ে এসেছেন, তাই ধন্যবাদ।আর সিলেট নিয়ে অনেক জেনে ফেলেছেন তাই অভিনন্দন।

এবার একটা বিরতি।একবার দেখে আসি কাউয়া দম্পতী কি করছেন।

মিসেস কাউয়া আজ এত বেশি ছবি তুলেছেন যে তার ফোনের মেমোরি ভরে গেছে। তিনি তার কোটিপতি পতিকে এত কম স্পেসের ফোন কিনে দেয়ার জন্য বকাঝকা করছেন।আচ্ছা, সিলেটে কী এমন আছে যে মিসেস কাউয়া স্রেফ ছবি তুলেই ফোনের ১৬ জিবি মেমোরি শেষ করে ফেললেন?
তো, প্রথমে তারা দুজন গিয়েছিলেন বাংলাদেশের একমাত্র সোয়াম্প ফরেস্ট রাতারগুলে।সেখানে পানির উপরে গাছগুলো দিব্যি দাড়িয়ে আছে,তাদের জড় পঁচে যাচ্ছেনা দেখে তারা দুজন খুব অবাক হয়েছিলেন। এ ফাল্গুনে রাতারগুলের চেহারা এমন ছিল।12715360_10153275052695443_8137082343532726237_n

তারপর তারা উড়তে উড়তে হাজির হলেন বাংলাদেশের বৃহত্তম হাওর হাকালুকি হাওরে। ৬টি থানা জুড়ে এ হাওর বিস্তৃত।মিস্টার কাউয়ার আবার ফ্রিতে জ্ঞান বিতরণের অভ্যাস আছে। তিনি সুযোগ পেয়ে মিসেস কাউয়াকে হাকালুকির নামকরণের ইতিহাস ও বলে দিলেন।কথিত আছে,ত্রিপুরা রাজ্যের অমর মানিক্যের সেনাবাহিনীরর ভয়ে বড়লেখা জেলার কুকী দলপতি হাঙ্গরসিং জঙ্গলে ও কর্দমাক্ত এলাকায় লুকিয়ে থাকেন।কালক্রমে এটি হাঙ্গরলুকি বা হাকালুকি নামে পরিচিত হয়।

মহাবিরক্ত মিসেস কাউয়া স্বামীর জ্ঞানদান কর্মসূচি থেকে বাঁচতে।মৌলভিবাজার জেলার বড়লেখা থানায় অবস্থিত জলপ্রপাত মাধবকুণ্ডের দিকে উড়তে শুরু  করলেন।প্রায় ৮৩ মিটার উঁচু পাহাড় থেকে বেয়ে পড়া অবিরাম জলধারার সা সা শব্দে মুগ্ধ মিসেস কাউয়া।কিন্তু মিস্টার কাউয়া সেখানেও তাকে রেহাই দিলেননা।তিনি শুরু করলেন,শ্রীহট্টের রাজা গোবর্ধন পাথারিয়া পাহাড়ে একটি বিশ্রামাগার শুরু করলে সেখানে ধ্যানমগ্ন অবস্থায় একজন সন্যাসীকে দেখতে পান।সন্যাসী রাজাকে অনেক উপদেশ দেন আর এ কুণ্ডে তাকে মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশীতে বিসর্জন দিতে বলেন।রাজা তা পালন করলে,সন্যাসী বিসর্জিত হওয়া মাত্র ৩বার মাধব নামে দৈববাণী হয়।সেই থেকে এ স্থানের নাম মাধব কুন্ড। অনেকেই আবার বলেন মহাদেব শীবের পুর্বনাম মাধব আর তার নামানুসারেই এ স্থানের নাম মাধবকুণ্ড।জলপ্রপাতের পাশেই স্থাপিত হয়েছে শীব মন্দির। আর পাশে রয়েছে কমলা বাগান।সেই কমলার সুনাম বাংলার সর্বত্র।ছবিটি মাধব কুণ্ডের নয়, সিলেটের আরেকটি জল্প্রপাতের।19417_1080089358667736_1545262045236405605_n

মাধবকুণ্ড থেকে কাউয়া দম্পতী গেলেন লালাখালে। স্ফটিক স্বচ্ছ নীল পানি,গা ঘেষা চা বাগান দেখে মিস্টার কাউয়া এতই মুগ্ধ যে তিনি জ্ঞানদানের কথাও ভুলে গেলেন।মিসেস কাউয়ার ফোনের একটি ছবি আমি হাইজ্যাক করেছি, দেখবেন?12065787_1173560795987258_4448035105423933966_n

 

তারপর তারা গেলেন, জাফলং,হামহাম জলপ্রপাত,ভোলাগঞ্জের পাথর কেয়ারি,জৈন্তা পাহাড় আর মন ভিরে দেখলেন চা আর কমলার বাগান।টাঙ্গুয়ার হাওরটাও তারা বাদ দেননি। 🙂11219106_1181488965194441_2960264382857814246_n

খাসিয়াপুঞ্জিতে কাছ থেকে দেখলেন খাসিয়াদের মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যাবস্থা।আপনি হয়তো জানেননা যে পৃথিবীর সর্বপ্রথম নারী রাজ্য সিলেটের জৈন্তিয়া।

আনুমানিক একাদশ শতাব্দীতে উমা রাণী দ্বারা বিশ্বের প্রথম নারী রাজ্য জৈন্তিয়া প্রতিষ্ঠিত হয়।পুরুষ শাসিত সমাজব্যবস্থারর সকল ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে নারী সমাজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।পুরুষকে বিয়ের পর স্ত্রীর ঘরে স্ত্রীর কর্তৃত্বাধীন বসবাস করতে হয়। মহিলা পরিবারের রক্ষণাবেক্ষণ করেন।পুরুষ সন্তান মার সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত।কন্যাসন্তান উত্তরাধিকারী না থাকলে উক্ত পরিবারের ভগ্নিকন্যারা হতেন উত্তরাধিকারী। বর্তমানে কেবল খাসিয়া উপজাতিই এ সমাজব্যবস্থা অনুসরণ করছে।

সিলেটে নারীর নান্দনিকতা কেবল নারীরাজ্য প্রতিষ্ঠাতেই সীমাবদ্ধ নয়।শিক্ষায় ও যথেষ্ট এগিয়ে ছিলেন সিলেটের নারীরা।১৯৩৮ সালে গ্রেজুএশন করেন সিলেটের প্রথম মুসলিম নারী গ্রেজুএট খয়রুন্নেসা।১৯৪২ সালে প্রথম মাস্টার্স করেন এম এ সামসী খানম।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী লীলা নাগ। লীলানাগ উপমহাদেশে প্রথম ছাত্রী সংগঠন’দীপালি সংঘ’প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম মহিলা সম্পাদক। তার সম্পাদিত পত্রিকার নাম’জয়শ্রী’। ব্রিটিশ বিরোধি আন্দোলনে প্রথম গ্রেফতার হন এ লীলা নাগ। মুক্তিযুদ্ধেও অবদান রেখেছেন সিলেটের নারীরা। তবে তাঁদের সঠিক সংখ্যা,পরিচয় জানা যায়নি। খুব অল্প জানা গিয়েছে প্রীতিরাণি দাস সম্পর্কে। ৫ নম্বর সেক্টরে মুক্তিযোদ্ধা রিক্রুটিং ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করেন।আরেকটু জানা গিয়েছে সুনামগঞ্জ জেলার খাসিয়া মেয়ে কাকঁন বিবিকে নিয়ে।তার স্বামী, পাঞ্জাবি সীমান্তরক্ষী মজিদ খান যুদ্ধ শুরুর সাথে সাথে পাকিস্তানের পক্ষে যুদ্দগে যোগ দেন।কাঁকন বিবিকেও মিলিটারিরা গোয়েন্দা হিসেবে কাজে লাগায় আর তিনি এ সুযোগ কাজে লাগিয়েছিলেন। আগস্টের গভীর রাতে বোমা অস্ত্র ও সহযোদ্ধাদের সাথে জর্ডিয়া ব্রিজ ধ্বংস করেন।
এ বীর নারীদের অবদান আজ বিস্মৃত।এভাবেই বিস্মৃত ভাষা আন্দোলনে সিলেটিদের অবদানের কথা।পাকিস্তানের প্রেক্ষাপটে ভাষা বিতর্কের শুরু হয় ১৯৪৬-৪৭ সালের মধ্যে।কিন্তু এর অনেক আগেই,সেই ১৯২৭ সালে আসাম ব্যবস্থাপক সভায় সিলেট সদর থেকে নির্বাচিত জনাব আব্দুল হামিদ চৌধুরী আসাম ব্যাবস্থাপনা পরিষদে বাংলায় প্রস্তাব উত্থাপন করতে চাইলে তা বিধি সম্মত নয় বিলে নাকচ করে দেয়া হয়। আসাম পরিষদে সিলেটের সকল সদস্য এর প্রতিবাদ করেন।তারা মাতৃভাষায় বক্তৃতা প্রদানের অধিকার দাবী করেন এবং একজোটে এ সম্পর্কে সরকারি বিধান তৈরির জন্য দৃঢ় অবস্থান নেন।পরিষদে প্রায় দেড় ঘন্টা তীব্র বিতর্ক হয় এবং এক সময় আব্দুল হামিদকে বাংলায় প্রস্তাব আনার অনুমতি দিতে বাধ্য হন। এর পরে, ১৯৪৮ সালের ৯নভেম্বর,৩০ নভেম্বর বিভিন্ন সভা, সেমিনারে ভাষা নিয়ে তুমুল আলোচনা হয়।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানী, চীফ অব স্টাফ জেনারেল আব্দুর রব,সহকারী চীফ অব স্টাফ কর্ণেল এ আর চৌধুরী এ সিলেটেরই সন্তান। বীর উত্তম উপাধি পেয়েছেন সিলেটের ৬ জন।বীর বিক্রম পেয়েছেন ১২ জন আর বীর প্রতীক পেয়েছেন ১৫ জন। মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী সিলেটিদের ভূমিকাও ছিল উল্লেখযোগ্য। ১৯৭১ এর ২৬ মার্চ বিকালে ব্রিটেনের পাকিস্তান হাই কমিশন ভবন ঘেরাও করেন কয়েকজন সিলেটি।এছাড়াও শহরে শহরে চাঁদা সংগ্রহ করেন। ইউরোপ আমেরিকার দেশে দেশে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করেন।সিলেটের আবুল মাল আব্দুল মুহিত তখন আমেরিকার পাকিস্তান দূতাবাসে কর্মরত ছিলেন।বিদেশে দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের মধ্যে তিনিই প্রথম বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন।

দেশকে রক্ষায় যেমন এগিয়ে ছিলেন সিলেটিরা দেশকে ঋদ্ধ করতেও অবদান রাখছেন তারা। সাহিত্যে,সংগীতে নিজের প্রতিভা ঢেলে শিল্পকে দিয়েছেন নতুন মাত্রা।
আমি রবনা রবনা গৃহে
বন্ধু বিনে প্রাণ বাঁচেনা..
এমন অসংখ্য গানের রচয়িতা রাধারামণ দত্ত সিলেটের সন্তান। ঘর বাড়ি ভালা না থাকা হাছন রাজা ও সিলেটের। ১৯৩০ অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে নোবেলজয়ী রবিঠাকুর তার বক্তৃতায় হাছন রাজার কথা উল্লেখ করেন।গাড়ি চলেনা চলেনা,বন্ধে মায়া লাগাইসে,কৃষ্ণ আইলা রাধার কুঞ্জে সহ আরো অসংখ্য জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা শাহ আব্দুল করিমের জন্ম সিকেটের সুনামগঞ্জে। ২০০১ সালে তিনি একুশে পদক পান।তিনি ১৬০০ গান রচনা করেছেন।গানগুলো ৬টি বইয়ে প্রকাশ কর হয়েছে।বাংলা একাডেমি তার ১০ টি গানের ইংরেজি অনুবাদ করেছে।
দেশবরেণ্য সংগীত শিল্পী সুবীর নন্দী সিলেটের সূর্যসন্তান।এ ছাড়াও ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরি,বিচারপতি ইমান আলী,ড সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম,রাশেদা কে চৌধুরি,বিচারপতি আব্দুল মতিন এবং আর অনেকে… সিলেটের সূর্যসন্তানদের তালিকা আরো অনেক লম্বা। শেষ করা সম্ভব না।

সিলেটে একটি সুন্দর দিন কাটিয়ে শাহজালাল, শাহপরানের মাজার ঘুরে,ব্যাগ ভর্তি কমলা লেবু আর চাপাতা নিয়ে বিদায় নিলেন মিস্টার এবং মিসেস কাউয়া। তাদের সফর সঙ্গী হওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। 🙂

তথ্য সূত্রঃ

  • আসাদ্দর রচনাসমগ্র
  • রত্নগর্ভা সিলেট-এইচ এম জাহাঙ্গীর।
  • কারেন্ট এফেয়ার্স আগস্ট সংখ্যা ২০১৫

ছবিঃ

  • মাসুদ চৌধুরী।
  • তালহা চৌধুরী।
Nuzhat Tabassum Prova

Nuzhat Tabassum Prova