সর্দি বা ফ্লু এর সাথে আমরা মোটামুটি সবাই পরিচিত। নাক দিয়ে সর্দি পড়া, মাথাভার বা মাথা ব্যাথা, জ্বর, ক্রমাগত হাঁচি বা কাশি, কখনো জ্বর। এই উপসর্গগুলো সর্দি বা ফ্লু এর। খুবই বিরক্তিকর। অধিকাংশ সময় পর্যাপ্ত বিশ্রাম, তরল খাবার এবং সাধারণ পথ্য(প্যারাসিটামল) খেলেই সেরে যায় কিন্তু সর্দি বা ফ্লু এর ভোগান্তি ছোট করে দেখার নয়।

সর্দি বা ফ্লু:
নিচের চারটি উপসর্গগুলো সর্দি বা ফ্লু এর জন্য প্রযোজ্য
১. গলা খুশখুশ করা
২. কাশি
৩. নাক দিয়ে সর্দি পড়া
৪. ক্রমাগত হাঁচি
এছাড়াও দুর্বলতা, মাথা ব্যাথা, শরীরব্যাথা, চোখ দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি থাকতে পারে।

কেন সর্দি বা ফ্লু হয়?
প্রচলিত ধারণা হলো, গরম কাপড় না পড়ার কারণে ঠান্ডা বা সর্দি হয়। কিন্তু আসলে ১০০ এর বেশি রকম ভাইরাস দায়ী এর জন্য। মূলত উর্ধ্বশ্বসনতন্ত্রে সংক্রমণের কারণে সর্দি বা ফ্লু হয়। আর এই ভাইরাস ছড়াতে পারে আক্রান্ত মানুষের হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে যেখানে ভাইরাস ক্ষুদজলকণা ধারণ করে বাতাসে ছড়িয়ে পরে। আক্রান্ত মানুষ যদি নাক মুছে তার হাতে ভাইরাস চলে যায়, তারপর স্পর্শের মাধ্যমে অন্যের হাতে বা বস্তুতে চলে যায়। একজন সুস্হ লোকের নাক বা মুখে ভাইরাস গেলে (যেমন ভাইরাস থাকা হাত দিয়ে মুখ বা নাক স্পর্শ করলে) ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হবে। রাইনোভাইরাস, করোনাভাইরাস, এডিনোভাইরাস, প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জা, মেটানিমোভাইরাস, রেসপিরেটোরি সিনসাইটিয়াল ভাইরাস ইত্যাদি সাধারণত সাধারণ সর্দি বা ফ্লু এর জন্য দায়ী। এইসব ভাইরাস উর্ধ্ব শ্বসনতন্ত্রে বংশবৃদ্ধি করতে পারে।

কোন সময় মানুষ বেশি আক্রান্ত হয় এবং কেন?
সাধারণত বসন্ত এবং শীত কালে। শীতপ্রবণ এলাকায় বসন্তে স্কুল শুরুর সময় এবং মানুষ ঘরে আবদ্ধ থাকার সম্ভাবনা বেশি থাকে(বসন্ত কালে ছুটিছাটা নেয়া হয়)। ঘরের ভিতর বাতাস শুষ্ক থাকে, যার কারণ নাসাছিদ্রে শুষ্ক হয় যা ভাইরাস ইনফেকশন বা সংক্রমণের জন্য সুবিধাজনক। তাছাড়া যে কোন ইনফেকশন বা সংক্রমণ নির্ভর করে মানুষের উপস্হিতি এবং মানুষ থেকে মানুষের ছড়ানোর সম্ভাবনা। স্কুল বা বদ্ধ ঘরে একজন থেকে আরেকজনে খুব সহজেই ছড়ানো সম্ভব। অন্যদিকে শীতকালে আর্দ্রতা কমে যায়, কম আর্দ্রতায় এই ভাইরাসরা বেঁচে থাকতে পারে। এখন উষ্ণমন্ডলীয় এলাকার শীতকালের চেয়ে বর্ষাকালে মানুষ বেশি আক্রান্ত হয়। এর কারণ হচ্ছে, উষ্ণমন্ডলীয় এলাকায় শীতকালে মানুষ বাইরে থাকার চেষ্টা করে, কিন্তু বর্ষায় বাইরে বের হবার সুযোগ করে যায়।

সর্দি বা ফ্লু এর সম্ভাব্য রিস্ক ফেক্টর
১. বয়স (শিশু এবং স্কুলগামী শিশুরা বেশি ঝুঁকিতে থাকে)
২. রোগপ্রতিরোগ ক্ষমতার অবস্হা
৩. সময় (ঋতু)

কখন ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন:
প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে::
১. ১০৩ ডিগ্রি(ফারেনহাইট) জ্বর বা তার চেয়ে বেশি। এর সাথে হলুদ বা ঘন রঙের কফ বের হয়। ঘাম দিয়ে জ্বর হলে কিংবা প্রচন্ড শীত শীত ভাব দিয়ে জ্বর হলে।
২. তীব্র সাইনাস ব্যাথা হলে।
৩. গলা বা টনসিল ফুলে গেলে।

শিশুদের ক্ষেত্রে:
বাচ্চার খুব সহজেই সাধারণ সর্দি বা কাশিতে আক্রান্ত হয় এবং তীব্রতাও বেশি হয়। কারণ হচ্ছে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রাপ্তবয়স্কদের মতো অতটা শক্তিশালী নয়। তবে নিচের উপসর্গগুলো দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন:
১. নবজাতক বা ১২ সপ্তাহ বয়সী শিশুর জ্বর যদি ১০০.৪ ডিগ্রি (ফারেনহাইট) এর কাছাকাছি হয়।
২. যে কোন বয়সের শিশুর ক্ষেত্রে ১০৪ ডিগ্রি(ফারেনহাইট) এর উপরে ক্রমাগত বাড়তে থাকে।
৩. পানিশূন্যতা বা প্রস্রাব স্বাভাবিকের চেয়ে কম করে অথবা কম তরল খাবার খেলে।
৪. ২ বছরের কম বয়সী শিশুর ক্ষেত্রে ২৪ ঘন্টার বেশি এবং ২ বছরের বেশি বয়সী শিশুর ক্ষেত্রে ২ দিনের বেশি সময় জ্বর থাকলে।
৫. বমি, প্রচন্ড মাথাব্যাথা, ঘাড় ব্যাথা, ঘুমেব্যাঘাত, কান ব্যাথা, ক্রমাগত কান্না বা ক্রমাগত কাশি।

বলে রাখা ভালো, শিশুদের ক্ষেত্রে অন্যান্য সমস্যা যেমন কানে সংক্রমণ হবার সম্ভাবনা থাকে।

সর্দি বা ফ্লুতে এন্টিবায়োটিকের ভূমিকা কি?

এন্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার উপর কাজ করে, ভাইরাসের উপর না। অনেকসময় ডাক্তাররা এন্টিবায়োটিক দিয়ে থাকেন। এর কারণ হচ্ছে, অনেক সময় ব্যাকটেরিয়ার ইনফেকশন নাই কিনা সেটা বুঝা মুশকিল হয়ে পরে। উপরন্তু সর্দি বা ফ্লু অবস্হায় ব্যাকটেরিয়ার ইনফ্যাকশনের সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে। এইসব কারণে, ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ বা ইনফেকশনের সম্ভাবনা থাকলে ডাক্তাররা এন্টিবায়োটিক দিয়ে থাকেন।

সর্দি বা ফ্লুতে প্যারাসিটামলের ভূমিকা কি?

প্যারাসিটামল জ্বর বা ব্যাথা নাশক, এটি ভাইরাস ধ্বংস করবে না। খুবই সহজলভ্য এবং নিরাপদ ওষুধ(নির্ধারিত ডোজের মধ্যে)। বাংলাদেশে নাপা®, এইস®, এক্সেল®,প্যারাপাইরল®, জেরিন® প্যারাসেট®, প্যানাডল® প্রভৃতি নামে পাওয়া যায়। ৫০০ এমজি(মিলিগ্রাম) আকারে বাজার জাত করা হয়। অত্যন্ত নিরাপদ ওষুধ তবে অতি মাত্রায় সেবন ক্ষতিকর। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সর্বোচ্চ হার প্রতি বারে ১০০০ মিলিগ্রাম মানে দুটি ট্যাবলেট। এছাড়া উক্ত জেনেরিক ওষুধগুলোর মধ্যে অনেকগুলো এক্সট্রা বা প্লাস নামে বাজারজাত করে যাতে ৬৫ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন থাকে যা দ্রুত ওষুধ কার্যকর করে। (ওষুধগুলোর বর্তমান অবস্হা সম্পর্কে আমার কোন ধারণা নাই, আমি ডাক্তার নই।)

ঘরের পথ্য: বেশি করে পানি বা তরল পান করুন, ভিটামিস সি বা টকজাতীয় ফল খান, প্রচুর বিশ্রাম নিন, প্যারাসিটামল/কফ সিরাপ খেতে পারেন, মুরগীর স্যুপ উপকারী, রসুন খান, সবুজ চা বা লেবু চা(লেমন টি) পান করুন, লবণ-পানি দিয়ে কুলকচা করুন, আদার রস বা মধু খান ইত্যাদি।

আশাকরি, উপরের তথ্যগুলো কাজে আসবে।

সূত্র:
1. http://www.webmd.com/
2. http://www.healthline.com/
3.http://www.mayoclinic.org/
4. http://www.medicinenet.com/

Mir Mubashir Khalid

Mir Mubashir Khalid

Graduate Student
Research Interests & experience: Virology (HIV, HBV, HCV, ZIKV), Molecular Biology, Chromatin Biology (mSWI/SNF, PRC), Adult Stem cell(aSC) Organoids (Liver & Intestinal(Hans Clever protocol), Immunogenic population based SNP study (GBS). HIV Latency. Involved in Research(Molecular biology) since 2011. Education: 2016-Present: Graduate Student, GIVI, Gladstone Institutes (UCSF), San Francisco, USA; PhD Candidate, MGC program, Dept. of Biochemistry, ErasmusMC (EUR), The Netherlands. 2013-2015: MSc(Research Master) on Infection & Immunity, ErasmusMC (EUR), The Netherlands 2007-2012: M.S. & B.S. on Genetic Engineering & Biotechnology, University of Dhaka, Bangladesh. (DU Batch:2006) Job: 2016-Present: Visiting Research Scholar (Graduate Student), Ott Lab, Gladstone Institutes of Virology & Immunology, Gladstone Institutes, SF, USA. 2015-2016: Research Analyst, Mahmoudi Lab, ErasmusMC, The Netherlands. 2012-2013: Research Officer, Emerging Diseases & Immunobiology, Islam lab, iccdr,b, Bangladesh.
Mir Mubashir Khalid