অনেকেই জ্বর উঠলে ফট করে দুইটা এন্টিবায়োটিক খেয়ে ফেলেন। জিজ্ঞাসা করলে উত্তর দেন, ভাইরাসের কারণে জ্বর হয়েছে, তাই এন্টিবায়োটিক খেয়েছি।রাস্তায় দাড়িয়ে লোকজনকে জিজ্ঞাসা করুন, এন্টিবায়োটিক কি? অধিকাংশ বলবে, পেট ব্যাথা হলে যেই বড়ি খায়। কোনটা খান? সিপ্রোসিন।সিপ্রোসিন আপনার নিজেরও জানা। প্রতিটি বাড়িতে সিপ্রোসিন আর এন্টাসিড এই দুটা থাকে। আর কারো কারো বাসায় মেট্রোনিডাজল।

“মা, পেট খারাপ”- সিপ্রোসিন খা। পেটে গ্যাস হয়েছে-এন্টাসিড খা। পেটে জানি কেমুন করে- দুইটা মেট্রোনিডাজল খা। বস্তুত আমাদের বাসা, বাড়ি, স্কুল, দোকান সব জায়গায়তেই এইরকম মেডিকেল না পড়ুয়া শত শত ডাক্তার আছে। সবচেয়ে বড় ডাক্তার হলো, ওষুধের দোকানের কম্পাউন্ডার। একবার একজনকে বলতে শুনেছি, “আরে  অমুকেতো(কম্পাউন্ডার) ডাক্তারের চাইতেও ভালো। আমার হাঁটুত ব্যাথা ছিলো, কত ডাক্তার দেখাইলাম, কিচ্চু অয় না। অমুকরে কইলাম। দিলো তিন বড়ি, ব্যাথা শ্যাষ।” “তা আজকে এইখানে কি জন্য?” “কিডনীডাতে সমস্যা।” {কম্পাউন্ডারের ঐ ভুল চিকিতসায় যে তার কিডনীতে সমস্যা হতে পারে সেটা তিনি হয়তো নাও জানতে পারেন।

অনেক সময় ডাক্তারদের জুয়া খেলতে হয়, আপনার পা এর সামান্য সমস্যার জন্য যদি কিডনী বেঁচে যায়, তবে পায়ের সমস্যাই ভালো। অনেক ওষুধ আছে নেফ্রোটক্সিক। আমি জানিনা ঐ লোকের ক্ষেত্রে একই সমস্যা ছিলো কিনা।} একজন ডাক্তার তিনি জানেন, স্বাভাবিক জ্বর কিছুদিনের মধ্যেই চলে যাবে। আপনি ওষুধ খান আর নাই খান। আপনার চোখে অঞ্জলি উঠলে এমনিতেই যাবে। কিন্তু রোগী সম্প্রদায় টেকাটুকা দিয়ে ডাক্তার দেখায়, আর ডাক্তার ওষুধ না দেয় তাহলে ভা্বে, “ডাক্তার বা* জানে!! ওষুধ দেয় নাই মানে, রোগ ধরতে পারে না্!!” তাই অনেকসময় ডাক্তারকে বাধ্য হয়েই ওষুধ দিতে হয়। আমার দাদী ছিলো ওষুধ পাগল, যে ডাক্তার তাকে বেশি ওষুধ দিতো সে ডাক্তার ভালো।কথা হলো এন্টিবায়োটিক কি ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করে? আর ফট করে এন্টিবায়োটিক খেলে সমস্যা কোথায়? মনে করে দেখুন, আপনার আশেপাশের কারো মৃত্যুর খবর পেয়েছেন যিনি সামান্য ডাইরিয়া বা আইসিইউতে মারা গেছেন। আপনার এই ফট করে দুটা এন্টিবায়োটিক খাওয়া এই মৃত্যু গুলোর জন্য দায়ী। কিংবা ভাবুন সেই শিশুটির কথা যে সামান্য ডায়রিয়াতেই মারা গেছে। আপনি রাগে দু:খে ডাক্তারকে গালি-গালাজ করছেন, বলছেন সামান্য ডায়রিয়ায় কিভাবে রোগী মারা যায়। বিশ্বাস করুন, ঐখানে যদি বিশ্বের সবচেয়ে ভালো ডাক্তারও থাকতো তাতেও রোগী মারা যেতো। এন্টিবায়োটিক রেজিসটেন্স এমন এক ইস্যু যা সারা বিশ্বকে ভোগাচ্ছে। এবং সত্যিকার অর্থে এর পিছনে দায়ী আমরা (তৃতীয় বিশ্বের মানুষজন)। মাথা গরম করে আমাকে গালি বা আমার নিকটাত্মীয়ের সাথে অবৈধ সম্পর্ক স্হাপনের হুমকি না নিয়ে আগে কারণটা জানুন। এন্টিবায়োটিক রেজিসটেন্স কি?

1-11351280_10153246430752936_1221210606819243728_n

কোর্স সম্পন্ন না করায় ব্যাকেটরিয়াগুলো পুনরায় বংশবৃদ্ধি শুরু করে।

 

তার আগে জানা দরকার, এন্টিবায়োটিক কি? এন্টিবায়োটিক হচ্ছে জীবনের বিরুদ্ধে। যদি সঠিকভাবে বলা হয়, তবে তা হবে ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে। অনেকে তাই একে এন্টিব্যাকটেরিয়াল বলে থাকেন। তবে কিছু ফাঙ্গাল (ছত্রাক) এবং প্রোটোজোয়ার বিরুদ্ধেও এরা কাজ করে। ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করে না। আবারো বলছি ভাইরাসের বিরুদ্ধে এন্টিবায়োটিক কাজ করে না। ভাইরাসের জন্য আপনি খাবেন এন্টি ভাইরাল যদি তীব্রতা বেশি থাকে। আপনার দেহ ভাইরাসের বিরুদ্ধে ভালভাবেই যুদ্ধ করতে পারে। এক শ্রেণীর কোষ (টি সেল) বরাদ্দ আছে শুধু ভাইরাসের বিরুদ্দে মোকাবেলার জন্য। আর এই যুদ্ধের ফলস্বরূপ আপনার জ্বর আসে। এন্টিবায়োটিক খাবেন ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ (ইনফেকশন) থেকে রক্ষার জন্য। তাহলে কি সব এন্টিবায়োটিকই খাওয়া যাবে যে কোন ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে?? মোটেই না। ব্যাকটেরিয়ার বহু শ্রেণী বিভাগ এবং সব এন্টিবায়োটিক সব ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে না। এন্টিবায়োটিক কাজ করে প্রধানত ৫ উপায়ে:

১. কোষ প্রাচীর তৈরিতে বাধা দান। (কোষের চারপাশের যে প্রাচীর বা ওয়াল থাকে তা তৈরিতে বাধা দেয়া)
২. প্রোটিন সংশ্লেষে বাধা দান। (প্রোটিন তৈরিতে বাধা দেয়া)
৩. কোষ ঝিল্লির পরিবর্তন। (কোষের মেমব্রেন এর পরিবর্তন করা)

৪. নিউক্লিয়িক এসিড তৈরিতে বাধা দান। (ডিএনএ/আরএনএ তৈরিতে বাধা দেয়া)
৫. অ-বিপাকীয় কার্যক্রম। (মেটাবলিজমে বাধা প্রদান)

2-11390237_10153246429202936_2810053175546254503_n

রিসেপ্টর পরিবর্তন করা।

প্রতিটি এন্টিবায়োটিক প্রকৃতপক্ষের কোষের বিভিন্ন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্থ করে। আর তাতে কোষ বাড়তে পারে না। যদি কোন কোষ না বাড়তে পারে, তবে তা মারা যায় (কোষের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া)। খেয়াল করুন, এই এন্টিবায়োটিক গুলো কিন্তু প্রোকারিয়োটিক (আদিম) কোষগুলোর প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্থ করে। সাধারণত খুব কম এন্টিবায়োটিক ইউক্যারিয়োটিক (প্রকৃত) কোষকে আক্রমণ করতে পারে (উদাহরণ: জেনটামায়োসিন (জি৪১৮), পিউরোমাইসিন ইত্যাদি)। তাই এন্টিবায়োটিকে আপনার দেহের কোষকে ধ্বংস না করে ব্যাকটিরিয়াকে ধ্বংস করে।

তাহলে ভাইরাসকে ধ্বংস করতে পারে না কেন?

কারণটা হচ্ছে ব্যাকটেরিয়া আর ভাইরাসের মধ্যে মহাকাশ আর পাতালের পার্থক্য।

১. ভাইরাস অকোষীয়। এর কোন কোষপ্রাচীর, কোষ ঝিল্লি নেই। তাই এন্টিবায়োটিকের ১ নম্বর এবং ৩ নম্বর উপায় কাজ করে না।
২. ভাইরাস বাহক বা হোস্ট (যেমন মানুষের কোষ) এর রেপ্লিকেশন মেশিনারী (যার মাধ্যমে ডিএনএ থেকে প্রোটিন পর্যন্ত সমস্ত কাজ সম্পন্ন হয়) ব্যবহার করে। আগেই বলেছি, এন্টিবায়োটিক আদিম কোষের জন্য নির্দিষ্ট । আদিম কোষের রেপ্লিকেশন মেশিনারী প্রকৃত কোষ (ইউক্যারিয়োটিক) এর থেকে ভিন্ন, তাই এন্টিবায়োটিকের ২ এবং ৪ নম্বর কাজ করে না।
৩. ভাইরাসের বিপাক বলে কিছু নাই।

সুতরাং এন্টিবায়োটিক ভাইরাস ধ্বংস করা আর কামান দিয়ে মশা মারার মতই। যদিও কামান দিয়ে মশা মারার কিছুটা সম্ভাবনা থাকলেও থাকতে পারে, এন্টিবায়োটিক দিয়ে ভাইরাস প্রতিহত করা অকল্পনীয়। (কম্পিটেশনাল এডভান্টেজ করতে চাইলে ভিন্ন কথা)

এন্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস যদি করেই থাকে, তবে একটা হুটহাট একটা দুটা এন্টিবায়োটিক খেলে সমস্যা কোথায়?


যারা ফার্মাকোলজি পড়েছেন, তারা একটা টার্ম জানেন যে বলে এমআইসি (Minimum inhibitory concentration)। সংক্ষেপে বললে,  কোন এন্টিবায়োটিকের সর্বনিম্ন মাত্রা যা ওভারনাইট (প্রায় ১৭ ঘন্টা) কোন নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়ার বংশবৃদ্ধি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে। এইখান থেকে আরো কিছু টেস্ট(যেমন এরিয়া আন্ডার কার্ভ, পিকে, পিডি,সিম্যাক্স, এলএডিএমই ইত্যাদি) করে, ফার্মাসিস্টরা এন্টিবায়োটিকের মাত্রা এবং ডোজ নির্ধারণ করেন।

ওষুধের গায়ে সবসময় মাত্রা লিখা থাকে। প্যারাসিটাম ৫০০ এমজি (নাপা) আর প্যারাসিটাম ৫০০ এমজি ,ক্যাফেইন ৬৫ এমজি (নাপা এক্সট্রা) দুটার মধ্যে পার্থক্য আছে । তেমনি এন্টিবায়োটিকের ডোজের সাথে দিনে কবার খাবেন (ঘন্টা হিসেব করে খাওয়া উচিত) সেটা একজন ডাক্তার জানে যিনি কমপক্ষে পাঁচ বছর মেডিকেলে পড়াশুনা আর কমপক্ষে ১ বছর ইন্টার্নি(এখন দুবছর সম্ভবত) করে আসছেন। তিনি জানেন কোন এন্টিবায়োটিক খাওয়া উচিত এবং কত মাত্রার। তাই উনি আপনার প্রেসক্রিপশনে লিখে দেন কয়টা টেবলেট কয়ক্ষণ পরপর খেতে হবে। আপনি যদি নির্দিষ্ট সংখ্যক টেবলেট নির্দিষ্ট সময়ানুযায়ী না কান, তবে কোন লাভ হবে না। আবার প্রথম থেকে শুরু করতে হবে।

পেট খারাপ অনেক কারণেই হতে পারে, ব্যাকটেরিয়ার জন্যও হতে পারে, বদহজমের জন্যও হতে পারে-সেটা বের করতে পারবে ডাক্তার, দোকানের কম্পাউন্ডার না (যার শারীরজ্ঞান, ঔষুধের মাত্রা, ব্যাকটেরিয়ার প্রকারভেদ ইত্যাদি সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা নেই)। পারলে জিজ্ঞাসা করুন, কয়েকটি ব্যাকটেরিয়ার নাম বলতে। ভা্‌ইরাসের কথা বললে, দুমদাম এইচআইভি আর হেপাটাইটিস বি আর সি এর নাম বলতে পারবে, কিন্তু পোলিও কি ব্যাকটেরিয়া না ভাইরাস, মিজলস কি ব্যাকটেরিয়া না ভাইরাস সেটা বলতে পারবে না। এখন আপনি যদি ঐ কম্পাউন্ডার বা নিজে ডাক্তারি ফলায়ে দুটা এন্টিবায়োটিক খেয়ে ফেললেন, তাতে কি হবে:

3-11377138_10153246428637936_6080110850387084588_n

এন্টিবায়োটিক রেজিসটেন্স ছড়িয়ে পড়া।

ধরে নিলাম। আপনার ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে ডায়রিয়া হয়েছিলো। কিন্তু এই দুটা এন্টিবায়োটিকে ঐ আক্রমণকারী ব্যাকটেরিয়া সম্পূর্ণ ধ্বংস হবে না। আর ব্যাকেটরিয়া যদি এন্টিবায়োটিক দিয়ে সম্পূর্ণ ধ্বংস না হয় তবে ব্যাকটেরিয়া ঐ এন্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে নিজে প্রতিরোধ গড়ে তুলে। অনেকটা আপনি ৩০০ জন সৈন্য নিয়ে আপনার পরাজিত দূর্গ দখল করতে গেলেন। দূর্গে ছিলো ৫০০ শত্রু সৈন্য। ৩০০ সৈন্য নিধন করে আপনি ভাবলেন বাহ দূর্গতো দখল হয়েই গেল (ধরুন আপনার প্রতিটি সৈন্য একটি শত্রু সৈন্য হত্যা করলো)। বাকি ২০০ সৈন্য হয়তো ঐ সময়ে চুপ থাকবে, কিন্তু আর যদি নির্দিষ্ট সংখ্যক সৈন্য নির্দিষ্ট সময়ে না পাঠান তখন এই ২০০ শত্রু সৈন্য বেড়ে ১০০০০ হবে (কারণ ব্যাকটেরিয়া অনেক দ্রুত বাড়ে)। সাথে তারা ইতিমধ্যে আপনার যুদ্ধের কলাকৌশল জেনে গেছে। সুতরাং পরবর্তী সময় যখন সে ১০০০০ সৈন্য তৈরি করে আপনাকে আক্রমণ করবে, তখন কিছু করার থাকবে না। ফলাফল ডায়রিয়াতে বা নিউমোনিয়াতে মৃত্যু। ডাক্তার কিছুই করতে পারবে না।

এই যে বেঁচে যাওয়া ২০০ সৈন্য আপনার যুদ্ধ কৌশল জেনে গেলো-এটাই হলো এন্টিবায়োটিক রেজিসটেন্স। বিজ্ঞানের ভাষায় হচ্ছে, কোন অনুজীব যখন কোন এন্টিমাইক্রোবাইয়াল(যেমন এন্টিবায়োটিক) এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে টিকে থাকে(সারভাইভাল) যেখানে একই গোত্রের অন্য অনুজীব ঐ এন্টিমাইক্রোবাইয়াল প্রতি সংবেদনশীল। সুতরাং এন্টিবায়োটিক রেজিসটেন্স হচ্ছে কোন এন্টিবায়োটিক দিয়ে কোন এক ব্যাকটেরিয়ার প্রজাতিকে ধ্বংস করতে না পারা, যেখানে ঐ এন্টিবায়োটিক ঐ ব্যাকটেরিয়ার প্রজাতিকে সাধারণত ধ্বংস করে থাকে।

4-532898_10153246434497936_1891067320526080745_n

ই. কোলাই এর মরণঘাতী সংক্রামক হয়ে যাওয়া।


এ ব্যাকটেরিয়া গুলো তৈরি হয়, যখন আপনি এন্টিবায়োটিকের পুরো কোর্স সম্পন্ন করেন না। এবং এই ব্যাকটেরিয়ারগুলো যখন আপনার দেহ থেকে বের হয়ে প্রকৃতিতে যায়, অন্য ব্যাকটেরিয়াগুলোকেও রেজিসটেন্স করে ফেলে। ফলশ্রুতিতে যে এন্টিবায়োটিক কাজ করার কথা ছিলো সেটা আর কাজ করে না, এমনিকি সাধারণ ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধেও। এন্টিবায়োটিকের যথেচ্ছা ব্যবহার এবং কোর্স সম্পুর্ণ না করার কারণে আইসিইউতে মৃত্যুর হার বেড়ে যাচ্ছে (একজন ক্লিনিশিয়ানে কাছে শোনা)। আর যদি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ নাই হয়, তবে আপনার অন্ত্রে বসবাসকারী ভাল ব্যাকটেরিয়া গুলো মারা পড়ে এন্টিবায়োটিকের কারণ, তাতে আপনি পুষ্টিহীনতা ছাড়াও সহজে ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বেড়ে যায়। (সিলেকশন প্রেসার বাই কম্পিটিশন)। এমনি হয়তো আপনার উপকারী ব্যাকটেরিয়া সংক্রামণকারী ব্যাকটেরিয়া হয়ে যেতে পার।

এখন কিভাবে এই ব্যাকটেরিয়া গুলো এন্টিবায়োটিক রেজিসটেন্স হয়ে যায়:

১. এন্টিবায়োটিককেই নিস্ক্রিয় বা পরিবর্তন করে ফেলা।

২. এন্টিবায়োটিক কোষের যে জায়গায় বন্ধন তৈরি করে সেই জায়গা গুলোকে পরিবর্তন করে ফেলা। (রিসেপ্টর মডিফিকেশন)

৩. বিপাকীয় প্রক্রিয়া পরিবর্তন করে ফেলা। (চেঞ্জ ইন মেটাবলিক প্রসেস)

৪. কোষের ভিতরে এন্টিবায়োটিকের সঞ্চয় বন্ধ করা (এন্টিবায়োটিকে কোষে ঢুকার ক্ষমতা কমানো বা বেরিয়ে যাওয়া বাড়ানো।)

এগুলো শুধু সময়ের ব্যাপার ব্যাকটেরিয়ার কাছে। মানুষ নিজেকে খুব বুদ্ধিমান মনে করলেও আসলে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের সাথে পাল্লা দিবার ক্ষমতা মানুষের নাই। এর বড়ো কারণ ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের বিবর্তন অনেক দ্রুত এবং সাফল্যজনক। আর তারা বিবর্তনে আমাদের চাইতে অনেক অভিজ্ঞ।

তাই আপনি যখন একটা দুটা এন্টিবায়োটিক সময় না মেনে খেয়ে ফেললেন, তাতে হয়তো ব্যাকটেরিয়া কিছুক্ষণের জন্য চুপ থাকবে, আপনি ভাববেন আপনি সুস্থ হয়ে গেছেন কিন্তু আসলে আপনি নিজের এবং বাকি সবার ক্ষতি করছেন।

এন্টিবায়োটিক রেজিসটেন্স নিয়ে উন্নত বিশ্ব অনেক সচেতন। সেখানে ডাক্তারের অনুমতিপত্র ছাড়া আপনি এন্টিবায়োটিক কিনতে পারবেন না। এবং ডাক্তাররা সহজে এন্টিবায়োটিক দিতে চান না। ফার্মেসিতে গেলে, চাই্লেও আপনাকে এন্টিবায়োটিক দিবে না, প্রেসক্রিপশন ছাড়া সহজে দিতে চায় না। এছাড়াও বাইরের দেশ (তৃতীয় বিশ্বের দেশ) থেকে যারা আসে তাদের ব্যাপারেও এরা সতর্ক থাকে। আমাদেরও সময় এসেছে সতর্ক হবার। ডাক্তারদের চাইতে আমরা যারা রোগী তাদের দ্বায়ভার বেশি। অহেতুক এন্টিবায়োটিক খাও্য়া বন্ধ করুন। এন্টিবায়োটিক খেলে কোর্স সম্পন্ন করুন। কম্পাউন্ডার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খাওয়া আর রাজমিস্ত্রির পরামর্শ অনুযায়ী ২০ তালা ভবনের নকশা করা একই রকম। পরে হাজার হাজার টাকা খরচের চেয়ে কয়েকশ টাকা খরচ করে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। নিজে সুস্থ থাকুন এবং অন্যকেও সুস্থ থাকতে দিন।

মীর মুবাশ্বির খালিদ
ইরাসমাস মেডিকেল সেন্টার,
রটারডাম, দি নেদারল্যান্ডস।

পুনশ্চ:

১. রেডিওমুন্নার আউল-ফাউল পোস্টের চাইতে স্বাস্থ্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা থাকলে আপনার মেডিকেল পড়ুয়া বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করুন।
২. না পড়ে কোন কিছু শেয়ার দিবেন না। আমাদের মধ্যে এই প্রবনতা অনেক। (আমার নিজেরও আছে)
৩. সহজ ভাষায় লিখার চেষ্টা করেছি। কঠিন সায়েন্টিফক টার্মগুলো বাদ দিয়েছি।
৪. ছবি ইন্টারনেট অবলম্বনে।

Mir Mubashir Khalid

Mir Mubashir Khalid

Graduate Student
Research Interests & experience: Virology (HIV, HBV, HCV, ZIKV), Molecular Biology, Chromatin Biology (mSWI/SNF, PRC), Adult Stem cell(aSC) Organoids (Liver & Intestinal(Hans Clever protocol), Immunogenic population based SNP study (GBS). HIV Latency. Involved in Research(Molecular biology) since 2011. Education: 2016-Present: Graduate Student, GIVI, Gladstone Institutes (UCSF), San Francisco, USA; PhD Candidate, MGC program, Dept. of Biochemistry, ErasmusMC (EUR), The Netherlands. 2013-2015: MSc(Research Master) on Infection & Immunity, ErasmusMC (EUR), The Netherlands 2007-2012: M.S. & B.S. on Genetic Engineering & Biotechnology, University of Dhaka, Bangladesh. (DU Batch:2006) Job: 2016-Present: Visiting Research Scholar (Graduate Student), Ott Lab, Gladstone Institutes of Virology & Immunology, Gladstone Institutes, SF, USA. 2015-2016: Research Analyst, Mahmoudi Lab, ErasmusMC, The Netherlands. 2012-2013: Research Officer, Emerging Diseases & Immunobiology, Islam lab, iccdr,b, Bangladesh.
Mir Mubashir Khalid