কমশিক্ষিত মানুষের চাইতে বেশি-শিক্ষিত(!! উচ্চ শিক্ষিত নয়) মানুষকে আমার ভয় বেশি। কমশিক্ষিত মানুষ জানে সে কম জানে, বেশি-শিক্ষিত মানুষ সব জানে ভাবে, সব বুঝে ভাবে এবং নিজের সীমানার বাইরেও ঘেউ ঘেউ ফলায়। যেমন ধরেন, আমি বায়োলজির ছাত্র এখন আমি যদি কোয়ান্টাম মেকানিক্স না পড়েই বা পড়েই বলি, জিনিসটা ভুয়া বা প্ল্যাঙ্ক ভুল ছিলেন , তা কতটা যুক্তিসঙ্গত। এই কথার মাধ্যমেই যারা কোয়ান্টাম মেকানিক্সের ছাত্র তারা বুঝে যাবেন আমার জ্ঞানের দৌড় ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক এর নাম পর্যন্ত, বাকি ইতিহাস আমার কাছে পাঁতিহাস হয়ে আছে। আমাদের দেশে ভ্যাকসিনেশন বা টিকার সফলতা অনেক ভালো পার্শ্ববর্তী দেশের সাথে তুলনা করলে। আমরা পোলিও নির্মূল করতে পেরেছি এটা অনেক বড় সাফল্য। পাক-আফগান অঞ্চলের মতো আমাদের উগ্রপন্থীরা নেই যারা টিকার বিরুদ্ধে কথা বলবে, তবে তার চেয়ে ভয়াবহ অন্য আরেক পন্থীরা আছে। এদের বিজ্ঞান সাম্রাজ্যে নাম হলো, “ইন্টারনেট সায়েন্টিস্ট”- বাংলা করলে হবে আন্তর্জাল বিজ্ঞানী। আমি বলি “খিচুড়ী জ্ঞানী”। ইহাদের আছে ইন্টারনেটের লাইন, একখান ল্যাপটপ বা পিসি, এক ফোঁটা পরিসংখ্যান জ্ঞান, তিন ফোঁটা ডাটা-মাইনিং(গবেষণাপত্র না!!), নো সেন্স অব রিয়েল রিসার্চ। তবে হ্যাঁ, একটা জিনিস বড়। জ্বি না, ভুল বুঝেছেন, উনাদের গলা বড়। যদি বুঝে এককাঠি, লোকজনদের বুঝায় এক বাঁশ-ঝাড়। (নোট: আমার মতো!!!) যাই হোক, এরা ইন্টারনেটের হাবিজাবি ভুয়া জিনিস পড়ে বায়োলজিকাল জ্ঞান ঝাড়ে, অনেকটা একহাজার বছর আগের কাবার ছবির মতো। তাই টিকা বা ভ্যাকসিনেশন নিয়ে এই একটা লিখা।
(ভুল বা বিজ্ঞানবিষয়ক তর্ক কমেন্ট দ্রষ্টব্য।)
টিকা বা ভেকসিনেশন: টিকা বা ভেকসিনেশন কোন ওষুধ নয়। এটা হচ্ছে আপনার শরীরে প্রতিরক্ষা ব্যবস্হাকে শক্তিশালী করার উপায় মাত্র। টিকা বা ভেকসিনেশনের মাধ্যমে আপনার রোগ-প্রতিরোগ ব্যবস্হা(ইমিউন সিস্টেম) চিনিয়ে দেয়া হয় ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসকে। রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্হা যদি আগে থেকে চিনে থাকে, তবে সে খুব দ্রুত এবং কার্যকরভাবে ঐ ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসকে ধ্বংস/নির্মূল করতে পারে। প্রথমে রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্হা কিভাবে কাজ করে একটু সংক্ষেপে এবং সহজভাবে বলার চেষ্টা করি। রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্হার দুটি অংশ। এই দুটি অংশ একই উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে তবে এদের ভিন্ন দক্ষতা ও ক্ষমতা নিয়ে। (চিত্র)
রোগ-প্রতিরোগ ব্যবস্হারোগ-প্রতিরোগ ব্যবস্হা
১. তাৎক্ষণিক (ইনেট ইমিউনিটি): দেশের পুলিশ, বিজিবি এর মতো। ছোটখাটো চোর-ডাকাত এরা সহজেই কুপোকাত করতে পারে। বড়সড় কাউকে সরাতে হলে রেব এর সাহায্য নেয়। যেসব আক্রমণ দেহের সার্বিক প্রতিরক্ষার জন্য হুমকি না, সেসব এরা সহজেই কুপোকাত করে। এরা সাধারণ কিছু বৈশিষ্ট্যকে মনে রাখে (মেমরী বা স্মৃতি না) এবং ঐ রকম যত আসবে সবাইকে একই ভাবে আক্রমণ করে ধ্বংস করবে। এদের অস্ত্র(পিস্তল, রিভলবার, টি৩৩, এমপি মেশিনগান ইত্যাদি) খুব শক্তিশালী না, কিন্তু ঐ সব ছোট-খাটো জীবাণুর বিরুদ্ধে অনেক কার্যকর। আমাদের দেহে প্রতি সেকেন্ডেই জীবাণুর আক্রমণ হচ্ছে এবং এই তাৎক্ষণিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্হা আমাদের রক্ষা করে। এদেরকে জন্মগত ভাবে আমরা সবাই পেয়ে থাকি। এরা খুব বেশি পরিবর্তিত হয় না(ভিডিজে রিকম্বিনেশন নাই)।
২. অভিযোজিত (এডাপটিভ ইমিউনিটি): এরা আসলে উচ্চ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত সেনাবাহিনী। এদেরকে একবার শত্রু চিনিয়ে দিলেই হবে। জল,স্হল এবং আকাশ সবদিক দিয়ে আক্রমণ চালাবে যতক্ষণ পর্যন্ত না শক্র নির্মূল হয়। কিন্তু এদের আক্রমণ মারাত্নক এবং সেটা দেহের উপরেও প্রভাব পড়ে (রোগের উপসর্গ যা আমরা দেখি যেমন জ্বর)। এদের পূর্ববর্তী আক্রমণের স্মৃতি থাকে। এরা পরিবর্তনশীল মানে নিয়মিত এদেরকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আরো শক্তিশালী করা হয়। সংখ্যায় অনেক। এবং সবচেয়ে চমৎকার ব্যাপার হলো, এরা নির্দিষ্ট কোন জীবাণুকে ধ্বংস করার জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লক্ষাধিক সৈন্য তৈরি করবে যদি তারা আগে থেকে ঐ জীবাণুকে চিনে থাকে। এরা অনেক জীবাণু চিনে থাকতে পারে এবং আলাদা আলাদা ভাবে প্রত্যেককে ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে। এবং প্রত্যেক ভিন্ন জীবাণুর জন্য এদের আক্রমণ ভিন্ন রকম হবে।টিকা বা ভেকসিনেশন এর মাধ্যমে আসলে এই অভিযোজিত রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্হাকে শক্তিশালী করা হয়। এবার আসি, রোগ সারানোর উপায় সমূহ (সংক্রমণ সম্পর্কিত): (আমি সহজভাবে বুঝানোর জন্য সরলীকরণ করে ভাগ করলাম)
১. ঔষধ (এন্টিবায়োটিক/এন্টিভাইরাল বাদে- যদিও এভাবে আলাদা করা ঠিক না)= রিলিফের মাল এর মতো। দুর্যোগ অবস্হা কাটানোর জন্য দেহকে সহায়তা করা বা দেহকে সেটা অনুভব করতে না দেয়া। দেহ নিজেকে নিজেই ঠিক করতে পারে, তবে সাহায্য দিলে সেটা সহজ এবং কার্যকর হয়। যেমন, জ্বর হলে প্যারাসিটামল খাওয়া।
২. এন্টিবায়োটিক= ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে। ভাইরাসের কোন কাজ করে না।
৩. এন্টিভাইরাল= এরা ভাইরাসের বিরুদ্ধে। সাধারণত ভাইরাসের বংশবৃদ্ধির এক বা একাধিক উপায়কে বদ্ধ করে । ভাইরাস আক্রান্ত কোষ দেহ দ্বারা চিহ্নিত হলে, দেহ সেই কোষকে মেরে ফেলে।
৪. থেরাপি= থেরাপি গুলো সাধারণত এক বা একাধিক জানা-অজানা কোষ বা মেকানিজম(উপায়) কে সাহায্য বা বন্ধ বা ধ্বংস করে দেহকে রক্ষা করে।
৫. ভ্যাকসিন= জীবাণুর কোন একটি অংশকে চিনিয়ে দেহকে শক্তিশালী করা।
প্রশ্ন ১ : টিকা বা ভেকসিনেশন কি অপ্রাকৃতিক বা অস্বাভাবিক উপায়?
উত্তর: মোটেও না (অপ্রাকৃতিক বলতে কি বুঝাতে চাচ্ছেন!)। সাধারণত আমাদের দেহে কোন জীবাণু যদি আক্রমণ করে তবে আমাদের রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্হা তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। যদি সে প্রথম আক্রমণ সফলভাবে প্রতিরোধ করে তবে সে ঐ জীবাণুকে চিনে রাখে যাকে বলা হয় রোগ-প্রতিরোধ স্মৃতি (ইমিউনোলজিকাল মেমরী)। পরবর্তীতে ঐ জীবাণু দ্বিতীয়বার বা পরে যতবার আক্রমণ করবে ততবার প্রথম প্রতিরোধ এর চাইতে কয়েকগুণ বেশি শক্তিশালী প্রতিরোধ করতে পারে। যার ফলে দ্বিতীয়বার আর ঐ জীবাণু সফল হয় না। টিকা বা ভেকসিনেশনে জীবাণুকে চিনিয়ে দেয়া হয়, যাতে এই রোগ-প্রতিরোধ স্মৃতি তৈরি হয়। যেটা স্বাভাবিকভাবে আপনার দেহে প্রথমবার জীবাণুর আক্রমণে হতো সেটা আক্রমণ ছাড়াই আপনাকে জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। ধরে নিন, এটা গুপ্তচরবৃত্তির মাধ্যমে তথ্য জানলেন এবং আপনি শক্তিশালী সেনাবাহিনী গড়ে তুললেন যারা আপনার শক্রর আক্রমণ পদ্ধতি সবই জানে। যদি এটা অস্বাভাবিক বা অপ্রাকৃতিক মনে হয়, তবে শীতে মা-বাবা কর্তৃক গরম কাপড় পরিয়ে দেয়া বা বাসায় দরজা লাগানো অপ্রাকৃতিক বা আস্বাভাবিক।
প্রশ্ন ২: তার মানে টিকা মানে, একজনকে জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত করা?
উত্তর: জ্বী না। চিনিয়ে দেয়া। একটা জীবাণুকে অনেকভাবেই চিনিয়ে দেয়া যায়। মনে করুন, একটা কৌটায় বিষ আছে। সেটা আপনি মুখে বলে দিতে পারেন, অথবা কৌটার গায়ে বিষ লিখে দিতে পারেন। কিংবা বিষাক্ত চিহ্ন লাগিয়ে দিতে পারেন। বিষ বোঝার জন্য আপনাকে খেয়ে বলতে হবে না। তাই কেউ যদি ঐ কৌটা আপনাকে খেতে বলে, আপনি সাথে সাথে অস্বীকার করবেন, কারণ আপনি বিষ সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। একটি জীবাণু চিনিয়ে দেয়ার জন্য জীবাণুর যে অংশটি সাধারণত পরিবর্তিত হয় না বা যে অংশটি সংক্রামক বা যে অংশ ধ্বংস হলে জীবাণু দুর্বল হবে/ধ্বংস হবে বা জীবাণুর যে অংশ আপনার থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন তাকেই মূলত চিনিয়ে দেয়া হয়। ফলাফলস্বরূপ, আপনার দেহ ঐ অংশকে ধ্বংস করার যাবতীয় প্রশিক্ষণ, লোকবল (এন্টিবডি/টি সেল) ইত্যাদি তৈরি করে থাকে। তাই জীবাণু আক্রমণ করার সাথে সাথেই তাকে নির্মূল করা সহজ হয়।
প্রশ্ন ৩: কে জীবানুকে পরিচয় করিয়ে দেয়?
উত্তর: অনেক কোষই(ম্যাক্রোফাজ, বিসেল, মনোসাইট ইত্যাদি) করে থাকে; তবে ডেনড্রাইটিক সেল সবচেয়ে ভালভাবে এই চিনিয়ে দেয়ার কাজ করে থাকে। এই কোষ গুলো আপনার দেহের জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হবার সম্ভাব্য জায়গায় ঘুরাঘুরি করে। যখনই টের পায়, পূর্বপরিচিত জীবাণু সে সুন্দর করে সেনাবাহিনীর(টি-সেল আর বি-সেল) কানে লাগিয়ে দেয়।
প্রশ্ন ৪: ডাক্তার ভাইরাল জ্বর হলেও সাথে এন্টিবায়োটিক দেয় কেন?
উত্তর: এটা আসলে অন্য ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণের সম্ভাবনা মাথায় রেখে।
প্রশ্ন ৫: ভ্যাকসিন না দিলে কি কোন এক নির্দিষ্ট ভাইরাস দিয়ে মারা যাবো?
উত্তর: হয়তো না। আপনার দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্হা যদি আসলেই অনেক শক্তিশালী হয়, তবে হয়তো আপনি মারা যাবেন না। আদিম মানুষের নিশ্চয়ই টিকা দেবার সুযোগ ছিলো না। তারা বেঁচে ছিলো। একইভাবে, আদিম মানুষ বাঘের সাথেও লড়াই করতো, শিকার করতো। আপনি কি বাঘের সাথে লড়াইয়ের সুযোগ নিবেন?
প্রশ্ন ৬: সবাইকে ভ্যাকসিন নিতে হবে?
উত্তর: নির্দিষ্ট সংখ্যক লোক ভ্যাকসিন নিলে, গোত্র রোগ প্রতিরক্ষা হয় (এটা নির্ভর করে জীবাণুর সংক্রমণ ক্ষমতার উপর)। এই গোত্র প্রতিরক্ষা গণনা করা যায়, অংক করে বলে দেয়া যায় কতজনকে টিকা দিতে হবে। টিকার ক্যাম্পেইনগুলো এভাবেই হয়।
অটিজম এবং ভ্যাকসিনেশন:প্রথমে আপনাকে কয়েকটি কাল্পনিক উপাত্ত দেই?
১. প্যান্টপরা লোকদের কম্পিউটার ভাইরাসে আক্রান্ত বেশি। তাহলে কি প্যান্ট না পরলে কম্পিউটার ভাইরাস হবে না?
২. আফি্কায় অটিজম কম? বা দক্ষিণ মেরুতে অটিজম নাই।
৩. যারা মোবাইল ব্যবহার করে, তাদের ছেলে-মেয়ে অটিস্টিক।
৪. যারা উচ্চশিক্ষিত তাদের ছেলে-মেয়ে বেশি অটিস্টিক।
উপরের চারটার মধ্যে নিচেরটা বাদ দিয়ে বাকিগুলোর জন্য কোন ব্যাখ্যা দিতে হবে কি?
এখন আসি নিচেরটার ব্যাখ্যায়, কথা হলো যারা কমশিক্ষিত তারা কয়জন অটিজম সম্পর্কে জানে? আর অটিস্টিক হলে তাদের কাছে কি সেটা সমস্যা বলে প্রতীয়মান হয়? একজন উচ্চশিক্ষিত পরিবার কখনো জ্বীনের আসর বিশ্বাস করবে না এবং প্রথমে কবিরাজের কাছেও যাবে না, যাবে ডাক্তারের কাছে। ডাক্তার হয়তো সেটা হিস্টিরিয়া বা স্ক্রিজোফ্রেনিয়া বলে ডায়াগনোজ করবে, সেই একই ঘটনায় কমশিক্ষিত পরিবারে কবিরাজ জ্বিন-ভূত বলে চালিয়ে দিবে। তাতে যদি আপনি উপসংহার টানেন উচ্চ শিক্ষিত লোকে হিস্টিরিয়া বেশি তাহলে আপনার উপাত্তের তথ্য সংগ্রহ ভুল। ঠিক একই ব্যাপার অটিজমের বেলায়। বলে রাখা ভালো, অটিজম কিন্তু একটা রোগ নয়, এটা হচ্ছে মানসিক জটিলতা।বিস্তারিত বলতে গেলে আসল কথা থেকে দূরে চলে আসতে হবে। আগে কি অটিজম ছিলো না, অবশ্যই ছিলো; কিন্তু মানুষ কি জানতো? আগে কি ব্যাকটেরিয়া ছিলো না? অবশ্যই ছিলো, কিন্তু মানুষের জানতে দেরি হয়েছে। ব্যাপার অটিজমের বেলায়ও একই রকম, শিক্ষিত মানুষ অটিজম এর ব্যাপারে সচেতন, শিক্ষিত মানুষ ভ্যাকসিনেশনের ব্যাপারেও সচেতন, শিক্ষিত মানুষ ভাল খাবার দাবারের প্রতিও সচেতন-তাই বলে কি এরা কোন ভাবে জড়িত। মোটেই না।
এবার আসি পরিসংখ্যানে, কনফাউন্ডার বলে একটা টার্ম আছে পরিসংখ্যানে। আমি এটার বাংলা জানি না, দু:খিত। যেটার মানে হচ্ছে, ভুল একটা ফ্যাক্টরের সাথে শক্তিশালী সমন্নয় লক্ষ্য করা (স্ট্যাটিসটিক্যালি সিগনিফিকেন্স), কিন্তু আসলে মাঝের একটা ফ্যাক্টর না ধরায়, ভুল দুটি উপাত্তকে সিগনিফিকেন্ট পাওয়া। ধরুন, যারা পানি খাচ্ছে তাদের মধ্যে আপনি ডায়রিয়ার প্রবণতা বেশি দেখলেন, কিন্তু পানিটা দূষিত কিনা সেটা আপনি পরীক্ষা করলেন না। তাতে করে, আপনি যে উপসংহার টানলেন, সেটা দাড়ালো পানি খেল ডায়রিয়া হয়, যেখানে হওয়া উচিত ছিলো দূষিত পানি খেলে ডায়রিয়া হয়। অটিজম আর টিকা নিয়ে যেসব স্টাডি আছে সেগুলো এসব কারণেই বিজ্ঞানীদের কাছে পাত্তা পায় না। একটা উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, জীনগত সম্পর্ক। যেখানে জীনগত সম্পর্ক শক্তিশালীভাবে জড়িত সেখানে সেটাকে বাদ দিয়ে উপাত্ত নেয়ায় সেটা গ্রহণযোগ্য। আরও অনেক বিষয় অন্তভূক্ত না করায়, এসব পাত্তা পায় না।
কিন্তু এইগুলো পাত্তা পাবে খিচুড়ী বিজ্ঞানীদের কাছে। প্রথমত, স্টাডি ডিজাইন এর খুঁটিনাটি এরা কম জানে। দ্বিতীয়ত, কোন কিছু স্ট্যাটিসটিক্যালি সিগনিফিকেন্স বললে এরা সূর্য পশ্চিম দিকে উঠে সেটাও বিশ্বাস করে। তৃতীয়ত, কোরিলেশন ইজ নট কজেশন- এটা তাদের মোটা মাথায় ঢুকে না। যাই হোক, আপনি যদি মেকানিজম দাড়া করাতে না পারেন এবং আপনার কাজ আরো কয়েকজন যদি রিপ্রডিউজ না করতে পারে, তবে সেটা মূল্য নাই বা কম- গবেষণা করতে আসলে এটা মাথায় রাখবেন।
এবার চার নাম্বার উপাত্তের সাথে উপরের তিনটা কি মিল পাচ্ছেন? এবার একই ভাবে ভ্যাকসিনের কথা ভাবুন।যাই খিচুড়ী রান্না করি, উপাত্ত বলে শুধুমাত্র বাঙালিরাই খিচুড়ী খেতে পারে। :v :p
পুনশ্চ:
১. আমি পরিসংখ্যানে বিজ্ঞ নই। তবে কাজ চালানো আর ভুল বের করার প্রশিক্ষণ পেয়েছি।
২. স্টাডি ডিজাইন নিয়ে অল্প-বিস্তর একাডেমিক পড়াশুনা আছে। বিশেষ করে, ভ্যাকসিন ট্রায়াল, ড্রাগ-ট্রায়াল, থেরাপি ট্রায়াল। ডাটাবেজ নিয়েও কাজের অভিজ্ঞতা আছে (তৈরি এবং এনালিসিস)।
৩. ভুল তথ্য থাকলে অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন। আমি এক্সপার্ট নই। আমিও খিচুড়ী। ভুল ধরলে যারা আমার নোট পড়ে ভুল জানবে, তারা নিজেদের শোধরাবার সুযোগ পাবে।
৪. বিজ্ঞানগতভাবে তর্ক করতে চাইলে জার্নাল, ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর , সাইটেশন ইত্যাদি জেনে আসবেন। অমুক নিউজ পেপার বা তমুক লিংক এর কোন দাম নেই। ভাল সাইটেশনওলা গবেষণাপত্র হলে শেয়ার করুন।
৫. আপনি কোন বিষয়ে একাডেমিক্যালি পড়াশুনা করেছেন বা কোন বিষয়ে গবেষণারত আছেন, সেটা ভেবে তর্কে নামুন।
রোগ-প্রতিরোগ ব্যবস্হারোগ-প্রতিরোগ ব্যবস্হা
মহামারি আর সাধারন অবস্থা কি এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা হবে?
ধরুন প্রতি একশজনে ১০জনের ঘুমের সমস্যা হয়,, এই পরিসংখ্যান দেখে আপনি বাছবিচার ছাড়াই একশ জন কে ঘুমের অসুধ খেতে দিলেন তাহলে ১০জনের ক্ষেত্রে অসুধ কাজ করলো আর বাকি ৯০জনের ক্ষেত্রে আপচয় অথবা অপচিকিৎসা!!!
মহামারি সকল ইনফেকসাস রোগ করতে পারে। আশাকরি, আপনি ডিপথেরিয়ার/যক্ষা/টিটেনাস/পলিও দিয়ে আক্রান্ত হবার চান্স নিবেন না। যেসব রোগের ভেকসিন তৈরি করা হয়, তাদের সবারই মহামারি বা প্রবল শারীরিক অক্ষমতা করার সুযোগ আছে। মহামারী করার জন্য একজন অসুস্থ রোগীই প্রয়োজন অনেক ক্ষেত্রে। ঘুমের অসুখ ছোঁয়াছে নয় তাই আপনার উদাহরণ ভুল বা ইরেলিভেন্ট। আমি আপনাএক আরো সহজ উদাহরণ দিয়ে বুঝাচ্ছি, সবার বাড়িতে কিন্তু চুরি-ডাকাতি হয় না কিন্তু সবাই বাসায় তালা মেরে রাখে। এটাকে কেউ টাকার অপচয় হিসিবে দেখে না কারণ সবার এই আইডিয়া আছে তালা না মারলে হয়তো চুরি হবে না তবে চুরির সম্ভাবনা অনেকে অনেক গুণ বেশি। কারও বাড়িতে একবার চুরি করতে গিয়ে যদি চোর যদি দেখে এলাকায় কেউ তালা মারে না, তাহলে সে সব বাড়িতেই চুরির চেষ্টা করবে। যেটাকে আপনি মহামারির সাথে তুলনা করতে পারেন।
আর ইনফেকসাস রোগে হিসেবটা উল্টো সেখানে অধিকাংশ সময়ে ১০০ জনে ৯০ জনই মারা যাবার সম্ভাবনা থাকে। যেমন গুটিবসন্তে গ্রামের পর গ্রাম উজাড় হবার ইতিহাস আছে। ইনফ্লুয়েন্জায় ইউরোপের বিশাল জনসংখ্যা মারা গিয়েছিলো। যক্ষা, কলেরায় এখনো অনেক মানুষ মারা যায়। আর ভেকসিন কিন্তু অসুধ নয়। এটা অপচিকিৎসাও নয় যেহেতু এটা বিজ্ঞানসম্মত এবং চিকিৎসাশাস্ত্র অনুযায়ী পরীক্ষীত।
ধন্যবাদ।