প্রধান, সহকারী, ম্যাগনেটিক এবং স্পিন এই চার রকম স্পিন কোয়ান্টাম সংখ্যা এর মধ্যে প্রথম তিনটা কি জিনিস এবং এদের তাৎপর্য কি মোটামুটি আমরা সবাই কমবেশি জানি। কিন্তু বিপত্তি টা ঘটে চতুর্থ টির বেলায়, অর্থাৎ স্পিন কোয়ান্টাম নাম্বার এর বেলায়। বইয়ে শুধু দেওয়া স্পিন কোয়ান্টাম নাম্বার হয় +১/২ বা -১/২ হবে। ব্যাস এটুকুই। আমার মত কোয়ান্টাম সংখ্যা পড়তে গিয়ে অনেকের মনেই হয়ত প্রশ্ন জাগে স্পিন কোয়ান্টাম সংখ্যা আসলে কি জিনিস এবং এর মান এরকম ই বা কেন! কোয়ান্টাম বিজ্ঞানের এই জটিল বিষয়টা ই নিচে অনেক সহজে ব্যাখ্যা করার চেস্টা করা হয়েছে। ইহা অধ্যায়নের মাধ্যমে তুমিও হইতে পারো বন্ধুমহলে তথাকথিত “হিরো” :D, (কারণ বন্ধুদের মধ্যে কারোরই না জানার সম্ভবনাই বেশি)। তাহলে চল শুরু করা যাক-

স্পিন কোয়ান্টাম সংখ্যা বুঝতে হলে প্রথমে বুঝতে হবে কোয়ান্টাম সংখ্যা গুলো আসলে কোথা থেকে এলো। এটা যেহেতু আমাদের আলোচ্য বিষয় নয় তাই খুব সংক্ষেপে বলার চেস্টা করতেছি- শ্রোডিঞ্জারের সমীকরণ নামে বইয়ে যে কুৎসিত এবং ভয়ংকর দর্শন একটা সমীকরণ দেওয়া আছে (আমি নতুন বইগুলোতে এটা অবশ্য খুজে পাইনি) সেই সমীকরণ কে গাণিতিকভাবে সমধান করলে Ψ এর বিভিন্ন মান পাওয়া যায়। Ψ এর মান ইলেক্ট্রণের শক্তি প্রকাশ করে যা আসলে আমাদের খুব একটা দরকার নেই। পরবর্তীতে অপর একজন বিজ্ঞানী ম্যাক্স বর্ন  দেখান যে Ψ এর তেমন দরকার না থাকলে কি হবে, Ψ  স্কয়ার এর দরকার আমাদের জন্য খুব। Ψ স্কয়ার নির্দেশ করে কোন নিউক্লিয়াসের চারপাশে ত্রিমাত্রিক স্থানে ইলেক্ট্রণ পাওয়ার সম্ভাব্যতা এবং সংজ্ঞানুসারে এটাই অরবিটাল। এবং ইলেক্ট্রেণের অবস্থান গাণিতিক ভাবে প্রকাশ করার মাধ্যম ই তো কোয়ান্টাম নাম্বার!
সে যা ই হোক, এবার আমরা আসি আমাদের আলোচ্য বিষয়ে- স্পিন কোয়ান্টাম নাম্বার। এটা অনেকটাই স্পষ্ট যে বাকি তিনটা spin-quantum-numberকোয়ান্টাম নাম্বার দিয়েই ইলেক্ট্রণের অবস্থান একদম নির্দিষ্ট করে দেওয়া যায়। তাহলে স্পিন কোয়ান্টাম এর দরকার কি? শুধু শুধু ঝামেলা বাড়ানো! আসলে স্পিন কোয়ান্টাম সংখ্যা কি প্রকাশ করে তা ব্যাখ্যা করলেই এর দরকার টা ও মোটামুটি বোঝা যাবে।
প্রথম অংশটুকু হয়ত তোমরা অনেকে এমনিতেই বুঝেছ। যে একদিকে ইলেক্ট্রণ (নিউক্লিয়াস কে কেন্দ্র করে) ঘুরলে তা হয় +১/২ আবার অপরদিকে ইলেক্ট্রণ ঘুরলে -১/২। নিউক্লিয়াস কে কেন্দ্র করে ইলেক্ট্রণ কোনদিকে ঘুরতেছে তা প্রকাশ করা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ আমরা জানি যেকোনো চার্জড পার্টিকেল যদি গতিশীল থাকে তবে তা একটি ম্যাগনেটিক ক্ষেত্র তৈরী করে  (উচ্চ মাধ্যমিক পদার্থবিজ্ঞান বই দ্রষ্টব্য)। ইলেক্ট্রণ একটি চার্জড পার্টিকেল এবং এটি এরকম প্রচন্ডবেগে ঘোরার ফলে অবশ্য ই ম্যাগনেটিক ক্ষেত্র তৈরী হওয়ার কথা তাই না? এখন যদি সব ইলেক্ট্রণ একই দিকে ঘুরত তাহলে সবগুলোর মিলিত চুম্বক ক্ষেত্র মিলে একটা লঙ্কাকান্ড বেধে যেত! ইলেক্টণগুলোকে ধন্যবাদ সেরকম কিছু না করার জন্য, তারা আসলে সব একই দিকে ঘুরে না। কোন একটা অরবিটালে একটা ইলেক্ট্রণ যেদিকে ঘুরে অপরটি তার বিপরীত দিকে ঘুরে। ফলে সব মিলিয়ে নেট চুম্বক ক্ষেত্র আসলে শুন্য ই থাকে। নাহলে কি সর্বনাশটাই না হতো!

এবার আসি পরের অংশে। + বা – এর কারণ না হয় বুঝা গেল। তাহলে ১/২ আবার কি জিনিস? এত সুন্দর সুন্দর নাম্বার থাকতে এমন ভগ্নাংশ কেন! আবার সব ইলেক্ট্রণের ক্ষেত্রে ই একই নাম্বার, ১/২!

স্পিন কোয়ান্টাম সংখ্যা যে শুধু ইলেক্ট্রণের জন্য ই তা না, প্রকৃতপক্ষে সকল মৌলিক কণার জন্য ই স্পিন কোয়ান্টাম সংখ্যা একটি মৌলিক ধর্ম ।(যেমন দুনিয়া কাপানো হিগস বোসন বা ঈশ্বর কণার স্পিন কোয়ান্টাম সংখ্যা ০)। কোন মৌলিক কণার স্পিন কোয়ান্টাম সংখ্যা ত্রিমাত্রিক স্থানে ঐ মৌলিক কণার প্রতিসাম্যতা নির্দেশ করে- কিছু কি বুঝা গেল? কিছুই না তাইতো? তাহলে দেখি সহজে কিভাবে বুঝা যায়। যেমন নিচের চিত্রটির দিকে লক্ষ্য করি। নিচে একটি ফুটবলের ছবি দেখা যাচ্ছে, ফুটবলটি ত্রিমাত্রিক স্থানে সব ভাবেই প্রতিসম।অর্থাৎ ফুটবলকে আমরা যেভাবে ই ঘুরাই না কেন সব দিক দিয়ে ফুটবলটিকে দেখতে একই রকম লাগবে। এজন্যে এটার স্পিন কোয়ান্টাম সংখ্যা আমরা বলব ০।

football-ball-md

আবার নিচে একটা এইস তাস দেখা যাচ্ছে। তাসটিকে ৩৬০ ডিগ্রী অর্থাৎ পুরো একবার ঘোরানোর পড়েই শুধুমাত্র আবার আগের মত দেখা যাবে। অর্থাৎ আমরা বলব এইস তাসের ক্ষেত্রে এর স্পিন কোয়ান্টাম সংখ্যা  ১।

ace

আবার কিং তাসের বেলায় তাসটিকে ১৮০ ডিগ্রী কোণে ঘোরালেই আবার তাকে দেখতে আগের মত দেখাবে। অর্থাৎ তাহলে তার স্পিন কোয়ান্টাম সংখ্যা  আমরা বলব ২।
king
হুম! সবই না হয় বোঝা গেল, তাহলে ইলেক্ট্রণের স্পিন কোয়ান্টাম সংখ্যা যে ১/২ সেটা কতবার ঘোরালে ঠিক আবার আগের মত দেখাবে?( মানে প্রতিসাম্যতা কত ডিগ্রী কোণের সাপেক্ষে) তোমাদের এ পর্যন্ত শোনা অন্যতম আশ্চর্যজনক তথ্য তবে জানিয়ে রাখি সেটা হলো ৭২০ ডিগ্রী, অর্থাৎ শুধুমাত্র দুইবার ঘোরানোর পরেই ইলেক্ট্রণের কে আবার আগেরমত দেখা যাবে! হলো না একটা অসম্ভব কথা? এমন আবার জিনিস আছে নাকি যে দুইবার ঘোরালে আবার আগের মত দেখাবে!
হ্যা যে জগত দেখে আমরা অভ্যস্ত (ম্যাক্রো ওয়ার্ল্ড) সে জগতে এমন কোন বস্তু নেই বটে, তবে কোয়ান্টাম জগতে এমন অদ্ভুত ব্যাপার স্যাপার নিত্তনৈমত্তিক ব্যাপার। আমাদের মানতে যতই কষ্ট হোক না কেন কোয়ান্টাম জগতে প্রতিনিয়ত ই এমন অকল্পনীয় ব্যাপার ঘটে চলছে। তাইতো বলে “Truth is stranger than fiction!”