ফটোগ্রাফি পর্ব ১ঃ ফটোগ্রাফ এ আমরা জেনেছি ক্যামেরার ফিল্ম বা সেন্সর যখন আলোতে exposed হয়, অর্থাৎ আলোর সংস্পর্শে আসে তখন ফিল্ম/সেন্সরে একটি ছবির প্রতিলিপি তৈরি হয়।
কিন্তু ফটোগ্রাফি যেহেতু আলোকে একটা মাধ্যমে ধারণ করে রাখা ছাড়া আর কিছু নয়, কাজেই কতটুকু আলোকে ফিল্ম/সেন্সরের সংস্পর্শে আসতে দেয়া হবে, অর্থাৎ ছবির এক্সপোজার কিরকম হবে, সেটা নিয়ন্ত্রণ করা একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।

যদি কোনো কারনে সেন্সরে আলোর পরিমান কম হয়, তখন ছবিটা হয় প্রথম ছবিটার মত অন্ধকার অন্ধকার, যেই ছবি দেখে লোকে বলে ছবিটা “Under exposed” হয়েছে। আর উল্টোভাবে যদি সেন্সরে আলোর পরিমাণ বেশি হয়ে যায়, তাহলে সেটাকে বলে ‘Over exposed” ছবি।

exposure

ভাল ছবির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল ছবির এক্সপোজার ভাল হতে হবে, অর্থাৎ ছবিটি সঠিক পরিমাণ আলোতে এক্সপোজড হতে হবে। তবে এক্ষেত্রে মনে রাখা দরকার যে, ফটোগ্রাফি একধরনের শিল্প। কাজেই এখানে “সঠিক” পরিমাণ আলোর সুনির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞা নেই । এমনটা হতেই পারে যে কারো হয়তো একটু অন্ধকার ধরনের ছবি ভাল লাগে, কারো আবার একটু চকমকা টাইপের ছবি পছন্দ।

ছবি তোলার সময় আলোকে নিয়ন্ত্রণ করার ব্যাপারটাকে বলা হয় এক্সপোজার (exposure) কন্ট্রোল করা। এক্সপোজার কন্ট্রোল করা হয় তিনটা জিনিস দিয়ে। এগুলো হলঃ

০১. এপারচার (Aperture)
০২. শাটার স্পিড (Shutter speed)
০৩. আই.এস.ও সংবেদনশীলতা (ISO sensitivity)

ছবি তোলার সময় ক্যামেরায় আলো প্রবেশের পথটা কত বড় হবে সেটা নির্ভর করে এপারচার ভ্যালুর উপর, আলো প্রবেশের পথটা কতক্ষণ ধরে খোলা থাকবে সেটা নির্ভর করে শাটার স্পিড এর উপর, আর এই আলোর প্রতি ক্যামেরার ফিল্ম বা সেন্সর কতটুকু প্রতিক্রিয়া দেখাবে সেটা নির্ধারিত হয় ISO এর মাধ্যমে।

Exposure-Triangle

Exposure triangle

এক্সপোজার ট্রায়াঙ্গলের তিনটা উপাদান নিয়েই আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব সামনের পর্বে। আজকে শুধু সাধারণভাবে একটা পানির কলের সাথে তুলনা করে  ব্যাপারটাকে ব্যাখ্যা করা যাক-
Camera-1

উপরের ছবিতে বাম দিকের পানির কল এর মুখ ডান দিকের কলের তুলনায় বড়, কাজেই বাম দিকের কল দিয়ে পানি পড়ার হার বেশি। সেরকমই, যদি ক্যামেরার লেন্সের এপারচার বড় রাখা হয়, তাহলে সেন্সরে আলো প্রবেশের হার বেশি হবে। আর যদি এপারচার ছোট হয়, তাহলে আলো কম প্রবেশ করবে।

Aperture

উপরের ছবিতে দেখি, শাটার স্পিড এর সাথে পানির কলের ভাল্ভ এর সম্পর্ক দেখানো হয়েছে। ব্যাপারটা খুবই সিম্পল আসলে, ভাল্ভ অনেকক্ষণ খুলে রেখে দিলে আমরা বালতিতে অনেক পানি পাব, আবার ভাল্ভটা খুলে সাথেসাথেই বন্ধ করে দিলে আমাদের বালতিতে পানির পরিমাণ হবে খুবই কম। একইভাবে শাটার অনেক্ষণ খুলে রেখে দিলে ক্যামেরায় যে পরিমাণ আলো প্রবেশ করবে, অল্প সময় খুলে রাখলে স্বাভাবিকভাবেই তার চেয়ে কম পরিমাণ আলো প্রবেশ করবে।
শাটার স্পিড নির্ধারণ করে দেয় ছবি তোলার সময় ক্যামেরার শাটারটা কত সেকেন্ড ধরে খোলা থাকবে।

ISO হল ফিল্ম বা সেন্সর এর একটা characteristic । সেন্সরের ISO এর মান যত বেশি হবে, সেন্সর ততই আলোর প্রতি সংবেদনশীল হবে। ব্যাপারটা এভাবে বোঝানো যায়, যার কাতুকুতু নাই তাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে কাতুকুতু দিয়েও কোনো লাভ হয়না, কিন্তু আমার মত মানুষজন যারা আছে তাদের শরীরে হাত ছোঁয়ালেই তারা লাফ দিয়ে ওঠে। 😐 কাজেই যেই সেন্সরের আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা কম, সেই সেন্সরকে ভালভাবে এক্সপোজড করতে অনেক আলো লাগে। অন্যদিকে সেন্সরের সংবেদনশীলতা বেশি হলে অল্প আলো দিয়েই সেটাকে properly এক্সপোজড করা সম্ভব।

Exposure-triangle-review

Explaining exposure triangle

উপরের আলোচনা থেকে এটা বোঝা যায় যে ছবির এক্সপোজার এই তিনটা বিষয়ের ওপরই নির্ভরশীল, কাজেই তিনটার যেকোনো একটা পরিবর্তন করেই ছবির এক্সপোজার পরিবর্তন করা যায়। আবার Aperture, Shutter speed, ISO এর ভিন্ন ভিন্ন কম্বিনেশনেও একি এক্সপোজার পাওয়া সম্ভব। যেমন ধরা যাক কোনো একটি নির্দিষ্ট সময়ে aperture value f\8, Shutter speed 1/10 এবং ISO 400 তে আমরা কাঙ্ক্ষিত এক্সপোজার পাচ্ছি। এখন যদি শাটার স্পিড এক “স্টপ” কমিয়ে 1/20 এ নেয়া হয়, এবং ISO এর মান এক স্টপ বাড়িয়ে 400 থেকে 800 তে নেয়া হয় তাহলেও আমরা হুবুহু একই এক্সপোজার পাব। এখানে শাটার স্পিড এক স্টপ কমানোর কারনে সেন্সরে আলো যতটুকু কমে গিয়েছিল, সেন্সরের ISO sensitivity এক স্টপ বাড়ানোর কারনে সেটার প্রভাব কাটাকাটি হয়ে গিয়েছে।

chart

Exposure Chart

একই এক্সপোজার পাবার জন্য কোন পরিস্থিতিতে কোন এক্সপোজার সেটিং ব্যবহার করা সুবিধাজনক সেসম্পর্কে আমরা সামনে জানার চেষ্টা করবো। আজকে এপর্যন্তই থাক। 🙂