দিন যত গড়াচ্ছে, আমাদের ধৈর্য তত কমে যাচ্ছে। আগে হয়তো একটা জিনিস জানতে চাইলে লাইব্রেরিতেই যেত সবাই। কিন্তু এখন সেই সময় কিংবা ইচ্ছা কারোই হয় না! প্রায়ই গুগলে বিভিন্ন জিনিস খুঁজে দেখতে হয়। কিন্তু সমস্যা একটাই – সেটা বাংলাতে খুঁজে পাওয়া যায় না বললেই চলে! একটা নতুন কিছু জানতে চাও? তো তোমাকে ইংরেজিতেই সেটা পড়তে হবে! ভুলেও বাংলায় লিখে খুঁজতে যেও না যেন – কী না কি দেখ আবার! এবং এভাবেই ধীরে ধীরে নষ্ট হতে থাকে জানার আগ্রহটা।
আমাদের মেধার কোনো ঘাটতি নেই। আমাদের তরুণ প্রজন্মের ফেসবুক ওয়াল দেখলেই সেটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তারা সবাই তাদের মেধার প্রকাশ কিন্তু দিয়ে চলেছে। কিন্তু নেই একটা যথাযথ প্লাটফর্ম। বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর আমি এমন অনেককেই দেখেছিলাম, যাদের লেখার হাত খুবই ভাল, এবং জানেও অনেক কিছু। কিন্তু শুধু একটা প্লাটফর্মের অভাবেই তাদের সেই চিন্তা আর আলোর মুখ দেখতো না! অথচ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কথায় হল জ্ঞানের চর্চা। আমরা হয়তো আমাদের বন্ধুদেরকে পড়তে দেখলেই হাসাহাসি করি, আঁতেল ডেকে নিরুৎসাহিত করি। আসলে কিন্তু আমাদের উচিত তার সাথে যোগ দেওয়া, তার থেকে জানার চেষ্টা করা, নিজে যা জানি, তা তাকে জানানোর চেষ্টা করা। এভাবেই হয়তো যার জানার আগ্রহ ছিল, তার জানার ইচ্ছাটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কারণ সে যা জানে, তা প্রকাশ করার সুযোগ পাচ্ছে না!
উপরের দু’টি প্রেক্ষাপট প্রথম দেখায় ভিন্ন মনে হলেও এদের মধ্যে কিন্তু মোটেই গভীরে একটা মিল বিদ্যমান। এদের একটা হল সমস্যা, আরেকটার মধ্যে এর সমাধান নিহিত। আমাদের তরুণ প্রজন্মের প্লাটফর্ম দরকার। কী হতে পারে সে প্লাটফর্ম? ইন্টারনেট খারাপ, ইন্টারনেট প্রজন্মকে ধ্বংস করে দিচ্ছে – আমি কখনোই এ ধরণের কথাগুলো মানতে পারি না। আমাদের দরকার ছিল ইন্টারনেটেই এমন একটি প্লাটফর্ম, যেখানে মানুষ তাদের চিন্তাটা জ্ঞানের কাজে লাগাতে পারবে। তারা সেই চিন্তাটা দিয়ে মাতৃভাষার উৎকর্ষ সাধন করতে পারবে। সর্বোপরি নিজে যা জানে, তা অন্যকে জানাতে পারবে।
বিজ্ঞান সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের মাতৃভাষা ইতোমধ্যেই সাইবার স্পেসে বেশ সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে। আমরা চাই, জ্ঞানের অন্য শাখাগুলোতেও এই সমৃদ্ধি অর্জিত হোক। স্বশিক্ষা হবে এমন একটি সাইট, যেখানে আসলে মানুষ যেমন জানতে পারবে থিওরি অফ রিলেটিভিটি সম্পর্কে, ঠিক তেমনি জানতে পারবে সিগমন্ড ফ্রয়েডের স্বপ্ন নিয়ে ব্যাখা সম্পর্কে!
আমরা ঠিক করেছিলাম, আমরা তিনটি বিষয়ের উপর বিশেষভাবে জোর দেবঃ
- সহজভাবে প্রতিটি বিষয়কে উপস্থাপনা
- মাতৃভাষার সমৃদ্ধি
- জ্ঞানের যত বেশি সম্ভব তত বেশি শাখায় নিজেদের কাজটা বিস্তৃত করা