PR001

উপরের ছবিটা দেখে কি কৌতূহল জাগছে? জাগারই কথা! যা দেখা যাচ্ছে তাকে এক কথায় ‘অতল কূপ’ বলা যায়। আমাদের এই অতল কূপটি পৃথিবীর কেন্দ্র দিয়ে যাওয়া ব্যাস বরাবর খনন করা। আমি জানি সবাই হুট করে বলে বসবে যে এটা করা সম্ভব না! হ্যাঁ, যা ভাবছ তা একেবারেই সঠিক। এরকম কূপ বা সুড়ঙ্গ বাস্তবে এখনো খনন করা সম্ভব হয় নি। (ভবিষ্যতে হবে কিনা তা বলতে পারছি না। :v ) তাই আজকে যে গল্প শোনাবো তাকে রূপকথাও বলা যায়। গল্পটা বোরিং মনে হতে পারে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত পড়ে গেলে হতাশ হতে হবে না বলে আশা করছি। :p

প্রথমেই যাব নিউটনের মহাকর্ষ সূত্রে। সূত্রটি বলে, যদি দুটি ‘বিন্দু’ ভর m1 ও m2 পরস্পর থেকে r দূরত্বে অবস্থান করে তাহলে তাদের মধ্যে যে আকর্ষণ বল কাজ করে তা হল,

EQ001

Capture

এখানে কয়েকটা ঘটনা আগে পরিষ্কার করে ব্যাখ্যা করতে চাই। প্রথমত, বস্তু দুটি বিন্দু ভর; অর্থাৎ, এদের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা নেই। দ্বিতীয়ত, এখানে আসলে দুটি বল কাজ করছে। একটা বল m2 এর ওপর m1 প্রয়োগ করছে, আরেকটা বল m1 এর ওপর m2 প্রয়োগ করছে। এই দুটি বল নিউটনের তৃতীয় গতিসূত্রের জোড়া বল। (Newton’s 3rd law pair)

আপাতত যেহেতু আমাদের দিক নিয়ে মাথা ঘামাতে হচ্ছে না তাই শুধু মান (স্কেলার রাশি) ব্যবহার করলেই চলবে। আচ্ছা, ফিরে আসা যাক ‘বিন্দু’ ভরের ব্যাপারে। প্রশ্ন এরকম হতেই পারে, “যেসব ভর বিন্দু ভর নয়, যেমন- গোলক, তাদের ক্ষেত্রে মহাকর্ষ সূত্র কিভাবে কাজ করবে?” নিউটন কিস্তু মহাকর্ষ সূত্র আবিষ্কারের পরপরই তা প্রকাশ করেননি। বরঞ্চ, তিনি এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন। উত্তরটা পাওয়ার পর তিনি তার সূত্র জনসমক্ষে আনেন। উত্তরটা কি? উত্তরটা হচ্ছে এই যে, একটি গোলক ভর তার ‘বহিঃস্থ’ কোনো একটি বিন্দু ভরকে এমনভাবে আকর্ষণ করে যেন গোলকটির সম্পূর্ণ ভর এর কেন্দ্রে বিন্দু ভর হিসেবে রয়েছে। অর্থাৎ, দুটি গোলকের মধ্যবর্তী মহাকর্ষ বল মূলত দুটি বিন্দু ভরের মধ্যকার মহাকর্ষ বলের সমতুল্য।

PR002

ঘটনার শেষ কিন্তু এখনো হয়নি! নিউটন আরো দেখালেন যে, একটি ফাঁপা গোলকের অভ্যন্তরে অবস্থিত কোনো বিন্দু ভর কোনো আকর্ষণ বল অনুভব করে না। কারণ, ফাঁপা গোলকের প্রত্যেকটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ বিন্দু ভরটিকে যে বলসমূহ দ্বারা আকর্ষণ করে তারা পরস্পরকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। এই ব্যাপারটি নিচের চিত্রে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। এখানে, m2 এর একপাশে dm1 আর অন্যপাশে dm1’  আছে যারা কিনা m1 ভরের একটি ফাঁপা গোলকের দুটি ক্ষুদ্র অংশ। dm1 এর অবস্থান m2 থেকে তুলনামূলকভাবে কাছে আর একই সাথে এই ক্ষুদ্র অংশটি দৈর্ঘ্যে ছোট (ফলে ভরেও কম); অন্যদিকে dm1’ এর অবস্থান তুলনামূলকভাবে দূরে আর দৈর্ঘ্যে এটি বড় (ফলে ভরেও বেশি)। মহাকর্ষ সূত্রানুসারে আকর্ষণ বল ভরের সমানুপাতিক আর দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক। আর তাই, dm1 ও dm1’ অংশ দুইটা m2 কে যে বলদ্বয় দ্বারা আকর্ষণ করে তারা সমান ও পরস্পর বিপরীতমুখী হয়। ফলাফলস্বরূপ, সম্মিলিত আকর্ষণ বল হয়ে যায় শূন্য! এভাবে প্রত্যেকটি ক্ষুদ্র অংশের প্রয়োগকৃত বল নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়ায় m2 এর ওপর কোনো নেট আকর্ষণ বল থাকে না।

PR003

অনেক তাত্ত্বিক কথাবার্তা হল, এবার প্রয়োগের পালা। ধরা যাক, পৃথিবী খুঁড়ে একটি ক্ষুদ্র ভর m2 কে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় নিয়ে যাওয়া হল যার দূরত্ব পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে r । এখন আমরা জানতে চাই m2 ভরটির ওপর পৃথিবীর আকর্ষণ বল কত? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে আমরা কিছুক্ষণ আগে জেনে আসা গোলকের আকর্ষণ বল সম্বন্ধীয় অনুসিদ্ধান্তগুলো কাজে লাগাব। ধরি, পৃথিবীর ব্যাসার্ধ rE । প্রথমে, পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে r (r ≤ rE) ব্যাসার্ধের একটি গোলক কল্পনা করি। তাহলে, m2 বস্তুটি অবস্থান করবে ঐ গোলকের বহিঃপৃষ্ঠে। আর পৃথিবীর অবশিষ্ঠ অংশ কাজ করবে একটি ফাঁপা গোলক হিসেবে যা m2 বস্তুটির ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। এখন, পৃথিবীর যে অংশটি প্রভাব ফেলছে তার ভর যদি m1 হয় তবে,

EQ002

যেখানে, ? হচ্ছে পৃথিবীর উপাদানের ঘনত্ব আর V1 হচ্ছে ঐ অংশটির আয়তন।

EQ003

আর তাই,

EQ004

PR004

আমরা একটু আগেই শিখেছি যে, মহাকর্ষের কারণে গোলকের আকর্ষণ বল এমনভাবে কাজ করে যে তার সমস্ত ভর একটি বিন্দুতে (এই বিন্দুটি হচ্ছে গোলকের কেন্দ্র) সন্নিবিষ্ঠ বলে মনে হয়। তাহলে, আকর্ষণ বল দাঁড়াবে,

EQ005

এখন, F এর জন্য যদি m2 এর ত্বরণ g হয়ে তাহলে নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র বলে,

EQ006

EQ007

এতক্ষণ আমরা শুধু স্কেলার রাশি নিয়ে কাজ করেছি। (দিক বিবেচনা না করে শুধু মান বিবেচনা করেছি।) কিন্তু, এখন দিক বিবেচনায় আনতে হবে। স্পষ্টত, m1 (মানে, m1 এর কেন্দ্র) থেকে m2 এর দিকে ব্যাসার্ধ ভেক্টর S004 এর দিক আর m2 থেকে m1 এর দিকে  S005এর দিক হওয়ায় এক্ষেত্রে S004  ও S005 পরস্পর সমান্তরাল ও বিপরীতমুখী।

PR005

তাই, আমরা এখন যা লিখতে পারি তা হচ্ছে,

EQ008

অভিকর্ষ আর মহাকর্ষ নিয়ে গুঁতাগুঁতির পর এখন আমাদের সরল ছন্দিত গতি (Simple Harmonic Motion) নিয়ে কিছু শিখতে হবে। এই বিশেষ ধরণের গতির যে যে বৈশিষ্ট্যগুলো জানা প্রয়োজন তা হল,

  1. এটি পর্যাবৃত্ত গতি। সোজা বাংলায়, একই গতি এরা বারবার দেখায়। মানে, একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর গতির পুনরাবৃত্তি ঘটে।
  2. এই গতিসম্পন্ন কণার ত্বরণ হয় সরণের সমানুপাতিক ও বিপরীতমুখী। অর্থাৎ, ত্বরণ S002 আর  সরণ S003 হলে,EQ010
  3. এই গতিসম্পন্ন কণার একটি সাম্যাবস্থা থাকে। এই সাম্যাবস্থার দিকেই ত্বরণ কাজ করে। সাম্যাবস্থায় গতিশক্তি সর্বোচ্চ আর বিভবশক্তি সর্বনিম্ন।

এই সরল ছন্দিত গতির সবচে ভালো উদাহরণ আড় তরঙ্গ। আমরা সময়ের সাথে একটি আড় তরঙ্গ সঞ্চালনকারী কণার সময়ের সাথে উল্লম্ব সরণের পরিবির্তনের গ্রাফ এঁকেছি। (অর্থাৎ, x, y, t – এই তিনটি চলকের মধ্যে x বা ‘অনুভূমিক সরণ’ কে ধ্রুব ধরে নিয়ে y-t গ্রাফ আঁকা হয়েছে।) এখন, আমরা এই তরঙ্গকণার গতির সাথে মিলে যায় এমন একটি বৃত্তাকার গতিসম্পন্ন কণার কথা চিন্তা করব। ছবিতে দেখা যাচ্ছে সেই বৃত্তাকার গতিসম্পন্ন কণাটি ABCD পথে ঘুরপাক খাচ্ছে। সময় যখন t=0, তখন তরঙ্গকণাটির উল্লম্ব সরণ শূন্য (y=0) আর বৃত্তাকার গতিসম্পন্ন কণার অবস্থান A বিন্দুতে। সময় বাড়ার সাথে সাথে y এর মান পর্যায়ক্রমে বাড়তে কমতে থাকে আর বৃত্তাকার গতির কণাটি নির্দিষ্ট কৌণিক বেগে anti-clockwise ঘুরতে থাকে। বৃত্তটির AOC ও BOD ব্যাসকে যদি আমরা x-অক্ষ ও y-অক্ষ হিসেবে ধরি তাহলে দেখা যাবে যে, বৃত্তাকার গতির কণাটির y এর মান তরঙ্গকণাটির উল্লম্ব সরণের (যেটাকে আমরা আবার y দ্বারাই নির্দেশ করেছি!) মানের সমতুল্য।

PR006

এখন চিত্র থেকে আমরা দেখছি যে,

EQ011

আবার, আমরা যদি  ω কে এই বৃত্তাকার গতির কৌণিক কম্পাঙ্ক (একক সময়ে যে কোণ অতিক্রম করে) হিসেবে চিহ্নিত করি তাহলে, ω=φ/t বা, φ=ωt । অতএব,

Q001

উপরের সমীকরণকে যদি আমরা t (সময়) এর সাপেক্ষে অন্তরীকরণ করি তাহলে যা পাব তা হচ্ছে বেগ আর সেটাকে আবার অন্তরীকরণ করলে যা পাব তা হচ্ছে ত্বরণ।

Q002

উপরের সমীকরণটিই হচ্ছে সরল ছন্দিত গতির সমীকরণ। অতএব, কোনো কণা বা বস্তুর গতির সমীকরণ যদি সমীকরণ (2) এর মত করে লেখা যায় তাহলে নিশ্চিতভাবেই আমরা বলতে পারব যে সেই গতিটি সরল ছন্দিত গতি! আচ্ছা, তরঙ্গকণাটির ও বৃত্তাকার গতিসম্পন্ন কণাটির পর্যায়কাল কি আমরা বের করতে পারি? হ্যাঁ, অবশ্যই পারি! পুরো একটা পর্যায় সম্পন্ন করতে বৃত্তাকার গতির কণাটির 2π রেডিয়ান কোণ অতিক্রম করতে হয় এবং তাতে যদি T সময় লাগে তাহলে, কৌণিক কম্পাঙ্ক হবে, ω=2π/T বা, T=2π/ω ।

এতক্ষণ ধরে অভিকর্ষ আর সরল ছন্দিত গতির সমীকরণ পড়ে পড়ে যে সবাই ক্লান্ত তা বেশ বুঝতে পারছি। আর তাই, নতুন করে আরো কোনো তত্ত্ব আমরা শিখব না আজ। তাহলে এখন রূপকথায় ফিরে যাওয়া যাক!

সমীকরণ (1) আবার উদ্ধৃত করছি এখানে,

Q003

ভেক্টর চিহ্নটি আবার উঠিয়ে দিয়েছি। এইবার এইটা করেছি কারণ, আমরা ভেক্টর ক্যাল্কুলাস ব্যবহার না করে সাধারণ ক্যালকুলাস ব্যবহার করতে চাই! এতে আমাদের কোনো সমস্যা হবে না কারণ, দিক বিবেচনা করে ব্যবহার করা ঋণাত্মক চিহ্নটি আমরা জারি রেখেছি।

PR007

এবার আমরা যে পরিবর্তন সাধন করব তা হচ্ছে, g এর বদলে  S006 বসাব। কারণ, g ত্বরণটি সরণ r এর সাথে সম্পর্কযুক্ত। r পরিবর্তনের হার কি হারে পরিবর্তিত হচ্ছে তাই  S006 এবং সেটাকেই আমরা ত্বরণ বলে থাকি। ত্বরণটা অভিকর্ষের ফলে কাজ করে বলে আমরা এটাকে সাধারণত g লিখি। তাহলে, সব পরিবর্তন শেষে আমাদের কাঙ্ক্ষিত সমীকরণ দাঁড়াচ্ছে,

Q004

আচ্ছা, এবার সমীকরণ (2) আবার লিখি,

Q005

একরকম মনে হচ্ছে কি? তাহলে কি পৃথিবীর কেন্দ্র দিয়ে যাওয়া আমাদের ‘অতল কূপে’ কি কোনো বস্তুর গতি সরল ছন্দিত গতি হবে? ঠিকই ধরেছ! কারণ, এখানেও ত্বরণ সরণের সমানুপাতিক ও বিপরীতমুখী। খুব সহজেই আমরা এটা প্রমাণ করতে পারি।

Q006

সরল ছন্দিত গতির সাথে আমাদের রূপকথার ‘অতল কূপে’র মিল খুঁজে পেয়ে কি লাভ? লাভটা ব্যাখ্যা করার আগে একটা কথা বলতে চাই। বাস্তব হোক অথবা রূপকথা, স্বর্গ হোক অথবা নরক- পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র কাজ করবেই! কথাটা একটু উচ্চাভিলাষী শোনালেও এটার ওপর ভিত্তি করেই আমাদের এই বিশাল জ্ঞানসাম্রাজ্য গড়ে উঠেছে। আমরা পৃথিবীতে বসেই দৃশ্যমান জগতের অন্য কোথাও কোনো একটা মহাজাগতিক বস্তু কি দিয়ে তৈরি তা বলতে পারি। পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রগুলো সব জায়গাতেই খাটে ধরে নিয়ে আমরা এসব সম্ভব করেছি।

যাই হোক, ফিরে আসা যাক ‘অতল কূপে’। এই সুবিশাল 12800 km কূপে কোনো একটা বস্তুকে এক প্রান্ত থেকে ছেড়ে দিলে সেই বস্তুটি পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে যেতে থাকবে। পড়ন্ত বস্তুটি ধীরে ধীরে গতি সঞ্চয় করবে। পৃথিবীর কেন্দ্রে এসে এর ওপর কোনো ত্বরণ না থাকলেও এটি এর নিজস্ব গতির জন্য এগিয়ে যাবে। বস্তুটির গতি এই অতল কূপের অন্য প্রান্তে এসে পৌঁছানোর পরই এটাই গতি শূন্য হবে। এই মুহূর্তেই যদি কেই বস্তুটি ধরে না ফেলে তাহলে বস্তুটি আবার অতল কূপে যাত্রা শুরু করবে। অর্থাৎ, অতল কূপের কোনো বস্তুর গতি আসলে পেন্ডুলামের মতই দোলায়মান। (আমরা কিন্তু বাতাসকে অগ্রাহ্য করছি। বাতাসকে বিবেচনা করলে আমাদের সরল ছন্দিত গতিতে ড্যাম্পিং হবে। আর এই কারণে প্রত্যেকবার দোলনের সর্বোচ্চ বিস্তার কমতে থাকবে। অবশেষে, বস্তুটি পৃথিবীর কেন্দ্রে গিয়ে স্থির হবে।) আচ্ছা, পৃথিবীর কেন্দ্র অতিক্রম করার সময় বস্তুর বেগ কত হবে তা কি আমরা বের করতে পারব? আর, অতল কূপের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে কতক্ষণ লাগবে তা কি জানা সম্ভব?

সমীকরণ (2) আর (3) এর দিকে আবার নজর দেই। সমীকরণ দুইটার যে অংশ দেখতে অনেক ভিন্ন সেই দুইটা অংশের কাজ কিন্তু আসলে এক। সমীকৃত করে পাব,

E001

কৌণিক কম্পাঙ্ক যখন পেয়েছি তখন পর্যায়কাল খুব সহজেই পেয়ে যাব! কারণ,

E002

এখন, S007 kg/m3 (পৃথিবীর উপাদানের ঘনত্ব) আর S009 Nm2/kg2 (Gravitational Constant বা, সার্বজনীন মহাকর্ষীয় ধ্রুবক) সমীকরণে বসালে পাব,

E003

সুতরাং, অতল কূপের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে গিয়ে আবার আগের প্রান্তে ফিরে আসতে লাগছে মাত্র দেড় ঘণ্টা! আর মাত্র 43 মিনিট লাগবে আমাদের পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যেতে। এত অল্প সময়ে তো আমরা ঢাকার এক জায়গা থেকে আরেক জায়গাতেই যেতে পারি না! সত্যিই রূপকথা!!!

ওহ, আমাদের কিন্তু আরেকটা প্রশ্ন ছিল! অতল কূপের যাত্রাপথে সর্বোচ্চ বেগ কত হবে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আমরা ফেরত যাব সরল ছন্দিত গতিতে।

A001

S010এর সর্বোচ্চ মান হতে পারে 1 । তাই সর্বোচ্চ বেগ vmax হবে,

E001

আমরা পৃথিবীর ব্যাসার্ধ জানি, R=6400 km যা উপরের সমীকরণে বসালে পাব,

A003

12800 km যদি আমরা 43 মিনিটে পার করতে চাই তাহলে এই বেগ তো আমাদের লাগবেই! কিন্তু, রূপকথাকে সত্যি করতে এই অতল কূপে কারো নামার সাহস হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে! :v

এবার আমরা আরেকটু বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিতে চাই। আমরা পৃথিবীর ঠিক অপর প্রান্তে হাজির হতে চাই না। ধরা যাক, আমরা ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে চাই। এই উদ্দেশ্যে এখন আমাদের পৃথিবীর ব্যাস বরাবর কূপ খনন করলে চলবে না, বরং অনেক ছোট দৈর্ঘ্যের একটি জ্যা বরাবর গমনকারী সুড়ঙ্গ কাটতে হবে।

PR008

এবার সরল ছন্দিত গতির সাম্যাবস্থা পৃথিবীর কেন্দ্রে হবে না। এবার সাম্যাবস্থা হবে সুড়ঙ্গের মধ্যবিন্দুতে। আমাদের সমীকরণেও তাই সামান্য পরিবর্তন হবে-

A004

কিন্তু, সমীকরণ তো আগের মতই থাকছে! তার মানে পথিবীর যেকোনো জ্যা (ব্যাসসহ) বরাবর কাটা সুড়ঙ্গ দিয়ে আমাদের যাত্রাকাল সবসময়ই একই থাকছে! অবাক হলেও এটাই সত্যি, কারণ গণিত আমাদের এক্ষেত্রে ধোঁকা দিবে না। তবে খারাপ কি যদি আমরা ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যেতে পারি! আর হ্যাঁ, এবার আমাদের 8 km/sec বেগ সহ্য করতে হবে না। কারণ, R এর মানের সাথে vmax এর মানও ব্যাপক হারে কমবে। সমীকরণে মান বসিয়ে নিজেই দেখে নেয়া যাক তবে! 😀

আমরা এত সময় আর শক্তি ব্যয় করে রূপকথা নিয়ে গল্প করলেও শিখলাম কিন্তু অনেক কিছুই! এরপর থেকে সমীকরণ জানা থাকলে আমরা সহজেই কোনো সরল ছন্দিত গতিসম্পন্ন বস্তু বা কণার গতিবেগ, পর্যায়কাল বিশ্লেষণ করতে পারব। তবে, রূপকথা যে চিরকাল রূপকথাই থাকবে এমন কোনো কথা নেই। হয়তো অচিরেই আমরা পেয়ে যাব কোনো ‘অতল কূপ’ বা ‘সরল ছন্দিত গতি’র পৃথিবীবিদারী সুড়ঙ্গ! ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আমরা কিন্তু আমাদের প্রচেষ্টার প্রথম ধাপটি সমাপ্ত করে ফেলেছি! 😀

ATM Jahid Hasan

ATM Jahid Hasan

Little is known and little will be known.
ATM Jahid Hasan
ATM Jahid Hasan
ATM Jahid Hasan

Latest posts by ATM Jahid Hasan (see all)