তুমি একটা বল হাতে নাও। এবার আশেপাশে দেয়াল খুঁজো একটা! একটা হলেই হবে,চারটার দরকার নেই। এবার,সেই দেয়ালটায় বলটা একদম সোজাসুজি ছুড়ে মারো! কি? বলটা নিজের হাতেই ফিরে এলো? ভয় পেয়ো না হাতে ফিরে না আসলে,দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে আসে পাশে চলে গেলেও হয়!

দেয়াল ভেদ করে বলটার চলে যাওয়ার সামর্থ্য নেই,বা,ওই পরিমাণ ভরবেগ সে লাভ করেনি। তা হলে হয়তো ভেদ করে এতদিনে চলে যেত কোন একসময়ে! যাই হোক,সেখানে না যাই। বুলেট নিয়ে আলোচনা করলে হয়তো ওসব বললে বেশ ভালো হতো তোমাদের জন্যে! 😀 তবে,অপ্রাসংগিক কিছু বলা হয়নি এখন অবধি!

আলো কি?

আলো কোনো ”পদার্থ” নয়,আগেই বলে দিই! আলো হচ্ছে এমন একটা ”প্রতিনিধি” যা কোনো বস্তুকে আমাদের চোখে ”দর্শনীয়” করে তোলে! ব্যাপারটা সহজ। ধরো,তুমি কখনো তোমার সুন্দর সুন্দর হাত দুইটা দেখোই নি,অনেক দেখতে ইচ্ছা করছে তোমার! তুমি ”টাগডুম” নামক গ্রহে থাকো,যেখানে আলো আসেনা। চারিদিকে বিদ্ঘুটে অন্ধকার!
ধরো,হঠাৎ একদিন  ”আগডুম বাগডুম” জায়গা থেকে আলো এসে তোমার হাতে পড়লো। সেই আলো তোমার হাত থেকে ”প্রতিফলিত” হয়ে তোমার চোখে গিয়ে ঢুকে গেল! তোমার চোখের ভিতরের যন্ত্রপাতি আর তোমার মস্ত বড় মাথার ভিতর ক্ষুদ্র মগজ সেটাকে নানাভাবে প্রসেস করে,তোমার হাতটাকে তোমার কাছে তুলে ধরলো! 😀 তুমি এখন তোমার হাত দেখতে পাচ্ছো!

মনে রাখবে,ঠিক যতটুক জায়গা জুড়ে আলো এসে পড়েছিলো এবং তার যত অংশ প্রতিফলিত হয়ে তোমার চোখে গিয়েছিলো,ঠিক ততটুক অংশই তুমি দেখতে পাবে।

11075162_10202489035827380_1486566455_n

                ( চিত্রে কি হচ্ছে দেখ,কালো চিহ্নিত জায়গাটায় আলো এসে প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে  পড়েছে ,

এবং আমরা ঠিক ততটুকুই দেখতে পাচ্ছি )

আলোর প্রতিফলনঃ

চলার পথে আলো যখন কোনো মাধ্যম/বস্তুতে এসে বাঁধা পায়,এবং তৎক্ষণাৎ তার গতিপথের পরিবর্তন করে উল্টোদিকের যেকোনো এক পথ ধরে ফিরে আসে,তখন সেটাকে সাধারণ ভাষায় আমরা আলোর প্রতিফলন হিসেবে ধরতে পারি। বই এ খুব সুন্দর করে সংজ্ঞা দেয়া আছে,আমরা সেভাবে যেতে ইচ্ছুক নই। ওভাবে তোমরা ভালো মার্ক্স তুলে নিও,এখান থেকে কন্সেপ্ট টা ক্লিয়ার করে যেতে পারলেই আমাদের লিখাটা সার্থক! 😀

11081697_10202489035787379_477371091_n

( দেখে নাও কিভাবে প্রতিফলন ব্যাপারটা কাজ করে )

চিন্তা করে দেখেছো,আলোর প্রতিফলন না হলে আমাদের কোনো বস্তু দেখতে কতটা ঝামেলা পোহাতে হতো? আমরা সোজাসুজি কোনো বস্তু হয়তো অনায়াসে দেখতেই পেতাম না! এদিক সেদিক গিয়ে দেখা লাগতো। বিব্রতকর! 🙁 আজকের এই অধ্যায়ে আমরা এখন সোজাসুজি দর্পণের আলোচনায় চলে যাব।
আগে বলে নিই দর্পণ জিনিসটা কি।

দর্পণঃ

যেই মসৃণ তলে আলোর প্রতিফলনের দুইটি সূত্রমতে নিয়মিত ধরনের প্রতিফলন হয়,তাকেই দর্পণ বলে থাকি পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায়। প্রতিফলনের সূত্র দুইটি কঠিন কিছুনা। একটা হচ্ছে,আলোর প্রতিফলনের ক্ষেত্রে আপতন কোণ আর প্রতিফলন কোণ সবসময় সমান হবে,আরেকটি হচ্ছে আপতিত রশ্মি,আপতন বিন্দু,আপতন বিন্দুতে অঙ্কিত অভিলম্ব আর প্রতিফলিত রশ্মি – এরা সবাই একই তলে থাকবে। মানে,এদেরকে আমরা একটা তলের মাঝে খুজলেই পেয়ে যাবো। ডানে বামে সরতে হবে না। নিচের চিত্র দুইটা দেখ,পরিস্কার হতে পারবা।

             11073455_10202489035747378_994666412_n11072492_10202489035707377_676884807_n

গোলীয় দর্পণঃ

আমরা প্রথমে একটা মোটামুটি  বড়সড় কাঁচের গোলক নিবো,ফাঁপা গোলক হতে হবে,নিরেট নয়!! আচ্ছা একটা না,দুইটা গোলক নিই।

প্রথমে একটা গোলকের বাইরে সিলভার দিয়ে পারা দিয়ে দিই,মানে সিলভারের প্রলেপ দিয়ে দিই। 😀 এখন এই যে গোলকটা আছে না,এর ভেতরের অংশটা একটা আয়নার মত কাজ করবে। এতটুক বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।

এবার দ্বিতীয় গোলকটা নিই,এর ভিতরের অংশে সিলভার প্রলেপ দিতে হবে এবার! :/ কিন্তু কাজটা কিভাবে করবে? গোলকটাকে দুইভাগ করে ফেল না হয়,অসুবিধা নেই। এবার ভিতরের অংশটায় প্রলেপ দিয়ে দাও। 😀

এবার এটাও আয়না/দর্পণ হয়ে গেল! 😀 প্রথম ক্ষেত্রে যেই দর্পণটি আমরা পেলাম,সেটাকে বলবো অবতল দর্পণ,আর শেষবারে যেটি পেলাম,তাকে উত্তল দর্পণ! 🙂

এর পরের পর্বে আমরা দেখবো গোলীয় দর্পণ এ আলোর নানান রকম প্রতিফলন,এর ফলে গঠিত বিম্ব,এবং এদের চরিত্র-প্রকৃতি এসব ব্যাপার। ততক্ষণ পর্যন্ত সাথে থেকো আর ভালো থেকো! 😀